সঙ্গীত পরিবার থেকে না এসেও, বলিউডে নিজের প্রতিভার জোরে শহর ছেড়ে ঘাঁটি গেড়েছেন মায়ানগরীতে। লখনউয়ের এই ছেলের মুম্বই আসার জার্নিটা খুব একটা সহজ ছিল না, তবুও এগিয়ে গিয়েছেন নিজের প্যাশনের জোড়ে। কথা হচ্ছে সঙ্গীতশিল্পী অমিত মিশ্রকে (Amit Mishra) নিয়ে। একের পর এক গান গেয়ে সকলের মন জয় করেছেন তিনি। যার মধ্যে 'অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল' (Ae Dil Hai Mushkil) ছবির গান 'বুলেয়া' (Buleya) তাঁকে রাতারাতি পরিচিতি দিয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার একটি কনসার্টে এসেছিলেন অমিত। bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল নানা অজানা কথা।
আজতক বাংলা: কলকাতার কনসার্টে এসেছেন, এই নিয়ে অনেকবার এই শহরে ... কোন জিনিসটা সবচেয়ে ভাল লাগে?
অমিত: কলকাতার সব কিছুই আমার খুব ভাল লাগে, তবে এখানকার খাবার সবচেয়ে প্রিয় (হেসে)।
প্রশ্ন: কোন খাবার?
অমিত: এখানে বাঙালিদের এক রকমের আলু ভাজা হয়, সেটা দারুণ। লুচিও খুব প্রিয়। এছাড়া কলকাতার রসগোল্লা আর পায়েস দারুণ লাগে।
প্রশ্ন: এবার নলেন গুড়ের পায়েস খেয়েছেন?
অমিত: না এবার খাওয়া হয়নি। আসলে শোয়ের আগে মিষ্টি এড়িয়ে চলি। শো শেষ হলে, পায়েস অর্ডার করতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি লখনউতে বড় হয়েছেন। পরিবারে কেউ সঙ্গীতচর্চা করতেন না... সেখান থেকে মুম্বইয়ের জার্নিটা নিশ্চয় সহজ ছিল না?
অমিত: আমার পরিবারের সকলে আসলে ভাল শ্রোতা। সব সময় গান নিয়ে আলোচনা হত ছোটবেলা থেকে। মুকেশদা, কিশোরদা, আর ডি বর্মন সাহাব, রফি সাহাব ওঁদের ভাল গান শুনেই বড় হয়েছি আমি। আর যদি লখনউ থেকে মুম্বইয়ের জার্নি নিয়ে কথা হয়, তাহলে বলব হয়তো এটা আমার কপালে ছিল যে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রির অংশ হবো।
প্রশ্ন: বলিউডে স্বজনপোষণ, পক্ষপাত নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার কোনও সমস্যা হয়নি?
অমিত: আসলে প্যাশনের বাইরে আমি কিছু দেখিনি। সেই সময় প্যাশনটা এতটাই ছিল যে, বুঝিনি কতটা স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। বর্তমানে একটা জায়গায় পৌঁছে যখন পিছন ফিরে তাকাই, এখন মনে হয়, এই জায়গাটা বজায় রাখা আরও বেশি কঠিন।
প্রশ্ন: আপনার এত গানের মধ্যে 'বুলেয়া'-র জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি...
অমিত: (হেসে) প্রতি বছর যেন এরকম একটা 'বুলেয়া' গাওয়ার সুযোগ পাই। তবে এই গানটার ক্রেডিট প্রীতমদা, অমিতাভ ভট্টাচার্যর। ওঁরা এত ভাল বানিয়েছিল গানটা, যে মানুষ খুব ভাল কানেক্ট করতে পেরেছে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই এর জন্য করণ জোহারের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্ন: প্রতি শোতে এই গানটা গাওয়ার অনুরোধ আসে নিশ্চয়?
অমিত: আসলে প্রতিটা কনসার্টে আমি 'বুলেয়া' গাইতে ভালোবাসি। মানুষ এত ভালোবাসা দিয়েছেন, এটা এক প্রকার কালজয়ী গান হয়ে উঠেছে। মনে হয় না 'বুলেয়া' কখনও পুরানো হবে। এমনকী গানটা একবার গাইলে, আবার অনুরোধ আসে গাওয়ার জন্য। আমি সত্যিই ভাগ্যবান এরকম একটা টিমের সঙ্গে, এত সুন্দর একটা গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে।
প্রশ্ন: আপনার বাংলা গানগুলিও বেশ জনপ্রিয়। এই ভাষা বোঝেন?
অমিত: রেকর্ডিংয়ের সময় কিছুটা শিখেছি। আমার প্রচুর বাঙালি বন্ধু আছে। এখন মনে হয় আমিও ২৫ শতাংশ বাঙালি হয়ে গিয়েছি (হেসে)। তবে পুরো কথা না বলতে পারলেও, এখন কিছুটা বাংলা বুঝি। বেশ কয়েকটি গান গেয়েছি বাংলাতে, তাই এখন উচ্চারণেও সমস্যা হয় না। কিছুটা ভাষাটা বুঝেই গাইতে পারি, অসুবিধা হয় না।
প্রশ্ন: বাংলা ছাড়াও আরও একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়েছেন, যার মধ্যে দক্ষিণী ভাষাও রয়েছে। অর্থ না বুঝে গাইতে সমস্যা হয় না?
অমিত: তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালায়লাম সহ আরও অনেক ভাষায় গান গেয়েছি। আমি সুপার হিউম্যান না, তাই এটা অবশ্যই কঠিন। রেকর্ডিং করার সময়ও অনেকটা বেশি সময় লাগে এই জন্যে। অনেক পরিশ্রমও করতে হয়। প্রতিটা শব্দের অর্থ বুঝে, গানটা গাইতে হয়। তবে আমি এখনও নিজেকে শিক্ষার্থী মনে করি। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখছি। তাই গোটা বিষয়টা ভালই লাগে।
প্রশ্ন: গত বছর সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র আকস্মিক মৃত্যু হয়, কলকাতায় কনসার্ট করার পর। বহু শিল্পী এরপর ভয় পাচ্ছিলেন কনসার্ট করতে। আপনার কখনও ভয় লাগেনি?
অমিত: (একটু ভেবে) আমার মনে হয় কেকে-র মৃত্যুটা সমস্ত ম্যানেজমেন্ট ও ইভেন্ট কোম্পানি সহ অনেকের জন্য জাগরণ ছিল। প্রিয় শিল্পীদের জন্য ফ্যানদের এরকম উন্মাদনা থাকে। এমনকী সত্যি কথা বলতে শিল্পীরাও চান, তাঁদের গান এতটাই জনপ্রিয় হোক,তাঁদের পারফরম্যান্স সকলে এতটা ভালোবাসুক। এই ঘটনাটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক, তবে কেকে স্যার আমাদের সঙ্গে, আশেপাশেই আছেন। শিল্পী হিসাবে উনি অমর হয়েই থাকবে। আশা করি এই ঘটনার পর ইভেন্ট কোম্পানিগুলিও বুঝেছেন এবং সচেতন হয়েছেন যে, একজন শিল্পীকে কীভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে বা খেয়াল রাখতে হবে। কারণ আমাদের কাজটা শুধুই মজার না, এটা পরিশ্রমের কাজ এবং একেবারেই সহজ নয়।
প্রশ্ন: বর্তমান সময়ে উঠতি বহু শিল্পী হঠাৎ করেই 'সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন' হয়ে ওঠেন, আবার কিছুদিন পর হারিয়ে যান। কীভাবে দেখেন বিষয়টা?
অমিত: আমার স্টুডিয়ো এবং ব্যান্ডের ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল, কখনও কোনও রিয়্যালিটি শোয়ের অংশ হয়নি। তাই আমার ক্ষেত্রে গোটা বিষয়টা অনেকটা সময় সাপেক্ষ ছিল। আমি বলব না, সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন হওয়া ভুল বা খারাপ। বহু শিল্পীর এর জন্যে স্বীকৃতি পেতে অনেকটা সুবিধা হয়। তবে সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ হওয়া জরুরি।
প্রশ্ন: যে কোনও গানের হিট কিংবা ফ্লপ হওয়া ভিউ ও লাইকের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে বর্তমানে...কোনও গান মুক্তি পাওয়ার পর, আপনিও প্রভাবিত হোন?
অমিত: (হেসে) এখন মনে হয় সবাই এটা নিয়ে ভাবে, চিন্তা করে। তবে এই কথাও বলব যে, সঙ্গীত ভিউ- লাইক এসবের অনেক ঊর্ধ্বে। এছাড়া সব গানের আলাদা আলাদা মার্কেট রয়েছে। যা, একজন পছন্দ করেন, অন্য কারও সেটাই যে ভাল লাগবে এমন নাও হতে পারে। তবে কিছুটা হলেও এগুলি এখন প্রভাব ফেলে। কারণ এখন পৃথিবীটাই নম্বরের খেলা হয়ে গেছে। আমি ঠিক জানি না, কী উত্তর দেব...এটা সত্যি কঠিন প্রশ্ন।
প্রশ্ন: আপনি প্রচুর সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। অমিত মিশ্রর জন্য অ্যাওয়ার্ড কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অমিত: আমার কাছে এত স্বীকৃতি পাওয়া সত্যি স্বপ্নের মতো ছিল। যে কোনও অ্যাওয়ার্ড অনেকটা অনুপ্রেরণা জোগায় আরও ভাল কাজ করার জন্যে। ঈশ্বরের অনেক আশীর্বাদে আমি এত সম্মান পেয়েছি। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। কলকাতায় এসে এবার কালীঘাটেও গিয়েছি, দারুণ অনুভূতি হয়েছে।
প্রশ্ন: পাইপলাইনে আর কী কী কাজ আছে?
অমিত: সবটা বলতে পারব না এখনই। তবে দুটো ছবির কাজ আছে হাতে। যার মধ্যে একটি ছবি করণ জোহরের। প্রীতমদা এবং অন্যান্য সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজের কথা হয়েছে। আমি অনেক সিঙ্গেলস গাইলেও, নিজের মিউজিক ভিডিওতে খুব একটা সামনে আসি না। এবার আসব। লকডাউনের সময় অনেকটা ওজন বেড়ে গেছে, এখন চেষ্টায় আছি শরীরচর্চা করে, তা কমানোর। সবটা ঠিক থাকলে, মে মাসের শেষে একটা মিউজিক ভিডিও আসতে পারে।