অশান্ত বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশের হিংসার খবর মঙ্গলবারও আসছে। ওপার বাংলার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সকলে। সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশও ছাড়েন মুজিব কন্যা। হাসিনার পদত্যাগের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত ব্যান্ড 'জলের গান'-র অন্যতম সদস্য রাহুল আনন্দ। সেসময় তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর হয় এবং আগুন লাগানো হয়। তছনছ হয়ে যায় শিল্পী বাড়ি, ভাঙে শতাধিক বাদ্যযন্ত্র।
পদ্মাপাড়ের অবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন ওপার বাংলার বিনোদন জগতের শিল্পীরাও। আজমেরি হক বাঁধন, শাকিব খান, নুসরত ইমরোজ তিসা, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আফরান নিশোর মতো শিল্পীরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবার ভাঙচুর হল বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মোস্তাফা সারওয়ার ফারুকী, অনন্য মামুনরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেক্ষাগৃহ ভাঙচুরের ছবি শেয়ার করে পরিচালক- প্রযোজক অনন্য মামুন লেখেন, "আমার দেশের চলচ্চিত্র যখন ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে, ঠিক তখন এত বড় আঘাত। আজ সিনেপ্লেক্স আছে বলে চলচ্চিত্র দেখার জন্য নতুন দর্শক আসতে শুরু করেছে। আমরা বড় বাজেটের চলচ্চিত্র বানানোর স্বপ্ন দেখি। রাজশাহী হাইটেক পার্কে ৫ আগস্ট সারা রাত লুটপাট হয়েছে, সিনেপ্লেক্স ভেঙ্গে চুরমার! ওয়াশরুমের কমোড , পানির ট্যাপটাকেও ছাড়েনি। শুনেছি সিরাজগঞ্জের রুটস্ সিনেপ্লেক্স ও লুটপাট করা হয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করবো চলচ্চিত্র বাঁচাতে হলে সিনেপ্লেক্স বাঁচাতে হবে।"
এদিকে পরিচালক মোস্তাফা সারওয়ার ফারুকী লেখেন, "আমি মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজ হবে ৩২ নম্বরের বাড়ির পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা। এই বাড়িকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং এ বাড়ি সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি, স্মৃতিস্মারক যা যা পাওয়া যায় তা দিয়ে যাদুঘর আবার চালু করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর ইউনূসের উচিত হবে নিজেই বাড়িটা ভিজিট করা। তিনি এই বাড়ি ভিজিট করলে একটা সিগনিফিকেন্স তৈরি হবে, একটা বার্তা দেবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এগুলো সব ঠিকঠাক করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের মন্দির থাকবে, মসজিদ থাকবে, প্যাগোডা থাকবে, গির্জা থাকবে, বোরকা থাকবে, জিনস থাকবে। সবকিছুই থাকবে বহুজনের এই সমাজে।"
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই অবনতি হচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির। সোমবার ছাত্র আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনা। সোমবার বেলা আড়াইটে নাগাদ বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়েন শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। তাঁর হেলিকপ্টারের উদ্দেশ্য ভারত। কোটা বিরোধী আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে হিংসার সূত্রপাত। সেই আন্দোলনই বৃহত্তর আকার ধারণ করে। রাজপথে নেমে আসে লাখো লাখো ছাত্রছাত্রী। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বাধে সংঘর্ষ। নিরাপত্তা বাহিনী হিংস্র জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ।