আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে এমনিতেই পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। সমালোচনা-প্রতিবাদ চলছে একই সঙ্গে। আর সেই আবহে টলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তুমুল সমালোচনা করেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছবি দিয়ে নিজেদের গুরুত্ব বাড়ান তাঁরা। আর এই নিয়েই টলিউডের অন্দরে জমেছে ক্ষোভ। আর এবার সেই নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় কুণাল ঘোষকে একপ্রকার ধুয়ে দিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও ঋত্বিক চক্রবর্তী।
প্রসঙ্গত, পরমব্রত ও ঋত্বিক বরাবরই বাম মনোভাবাপন্ন। কোনওদিনই তাঁদের শাসক দলের কোনও অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তবে যখন টলিউড নিয়ে কথা উঠেছে, তখন গর্জে ওঠাটাই স্বাভাবিক। ঋত্বিক সুকুমার রায়ের কবিতার লাইন ধার করে কুণাল ঘোষকে বোধহীন স্কন্ধ বলতেও পিছুপা হননি। ঋত্বিক তাঁর সোশ্যল মিডিয়া পেজে লেখেন, 'শুনেছো তো বাবু বলে দিয়েছে! শুধু পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে গুরুত্ব বাড়িও না দরকারে চটিজুতো মাথায় তুলে পাহারা দাও। ছোট করে বললে, শুনেছো কি বলে গেল বোধহীন স্কন্ধ তোমাদের গায়ে শুধু ধান্দার গন্ধ।' প্রসঙ্গত, কুণাল তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, 'আফসোস লাগে। মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বহু পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা এমন কিছু রাজনৈতিক ছবি করেন যা সমাজে বিজেপির পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরি করে। এবার তো বাংলা নিয়েও কুৎসার ঝুলি আসছে। অথচ টলিগঞ্জের বাবু/বিবিরা, যাঁরা মমতাদির পাশে, দলে, মঞ্চে, ছবির ফ্রেমে থাকেন, তাঁরা নিজেদের ইমেজ গড়তে, পেশার সৌজন্য নিয়ে ব্যস্ত। দিদির পাশে ছবি দিয়ে গুরুত্ব বাড়ান, কিন্তু মমতাদির বায়োপিক বা তৃণমূলের পক্ষে বার্তা যেতে পারে, এমন কোনও সিনেমার কথা তাঁরা ভাবেন না।'
অপরদিকে চুপ করে থাকেননি পরমব্রত। তিনিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করে কুণাল ঘোষের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে সেটা শুধু টলিউড প্রসঙ্গেই নয়, পরিচালক সনোজ মিশ্রের ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন কুণাল। তৃণমূলের মুখপাত্রকে সপাটে জবাব দেন পরমব্রত। অভিনেতা তাঁর পোস্টে স্পষ্ট জানান যে সিনেমার জগতের লোকেরা এমনিতেই দলীয় রাজনীতির রঙে রঙীন। পরমব্রত বলেন, 'কুনাল ঘোষ মহাশয়ের বক্তব্য সম্বন্ধে কিছু কথা (কিছু প্রাসঙ্গিক , কিছু হয়তো বা অপ্রাসঙ্গিক )...ঠিক বলেছেন , মুম্বাইয়ের কিছু লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কেন্দ্রের শাসক দলের নির্লজ্জ প্রপাগান্ডা করেন তাদের কাজের মধ্যে দিয়ে (যার ফলে শিল্পীর সম্মানটাই নষ্ট হয় তাদের )... আপনি কি চাইছেন যে আপনাদের দলের লোকেরাও তাই করুক ? সিনেমার জগৎ এমনিতেই দলীয় রাজনীতির রঙে একেবারে রই রই করে রঙীন , তাতে হচ্ছে না, এবার এটাও করতে হবে? ঠিক কথা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা পশ্চিম বাংলা নিয়ে ছড়ানো হয়, বিশেষত উত্তর ভারতে, আমি নিজে তা চাক্ষুষ করেছি! পশ্চিম বঙ্গের ইউনিক সামাজিক এবং জাতীয় বৈচিত্র্য , এবং কেন্দ্রের সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক বিরোধিতার ইতিহাস হয়তো বা এর জন্যে দায়ী ! কুপ্রচার করার জন্যে কিছু ছবিও তৈরি হয় , কিন্তু সেগুলোকে আটকাবার চেষ্টা করে আপনারাই এই অজানা, গুরুত্বহীন ছবিগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন!'
পরমব্রত আরও বলেন, 'তদন্ত, বিচার এসব তো এখন কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে। কিন্তু যে গলদ গাফিলতির জন্যে ৯ই অগাস্টের ঘটনা ঘটতে পেরেছে, মানুষ তার জবাবদিহি চাইছে, দায় স্বীকার এবং যদি ঘুণ ধরে থাকে পরিকাঠামোয় তাহলে তা চিহ্নিত করে সাফ করা হোক, অধিকাংশ লোকের দাবি এটাই! সময়টা স্পর্শকাতর, মুখপাত্র হিসেবে কি বলছেন কি লিখছেন, একটু ভেবে চিনতে করলে হয় না।' পরমব্রত শেষে সংযোজন করেন, নির্বাচনের ফলাফল, শাসক বিরোধী বাইনারি, ক্ষমতার মসনদে বসার সংকীর্ণ পরিসর, লাল কমলা হলদে সবুজ ছাড়াও একটা রাজনীতি হয়...সেই রাজনীতি বৃহৎ বিশ্ব ভাবনার, বৃহত্তর দর্শনচিন্তার এবং সর্বোপরি মানবিকতার! এমনিতেই আরজি কর কান্ডকে ঘিরে এখন প্রতিবাদে সরব গোটা দেশ। তার মধ্যে রাজনৈতিক ডায়াফ্রেমে তৈরী এই ছবি মুক্তি পাওয়ায় এই ছবিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে কুণাল ঘোষের অভিযোগ, বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই ছবি মুক্তি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, বাংলা ইন্ডাস্ট্রি প্রতিবাদ করবে না?'