বাংলা সিনেমাকে ঘটিয়া (জঘন্য) বলে মনে করেন বলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে ছাত্রছাত্রীদের আয়োজিত একটি প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের নাম 'নিপীড়িতের জগঝম্প'। সেখানেই অনুরাগ কাশ্যপ বলেন, 'বাংলা ফিল্ম চলবে কী ভাবে? বাংলা ফিল্ম একেবারে ঘটিয়া। একটা সময় ছিল যখন বাংলা চলচ্চিত্র এভারেস্টের উচ্চতায় ছিল। হিন্দি ফিল্মের মানও পড়েছে। কিন্তু সেটা সেকেন্ড ফ্লোর থেকে নীচে পড়েছে। আর বাংলা ছবি এভারেস্ট থেকে নীচে পড়েছে। দুটোর প্রার্থক্য আছে।' আর অনুরাগের এই মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে উঠেছে নিন্দার ঝড়। পরিচালকের এই মন্তব্য নিয়ে কী বলছেন বাংলা সিনেমার দুই জনপ্রিয় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়? মত জানালেন bangla.aajtak.in/-কে।
রুদ্রনীল ঘোষ
আমার মনে হয়, উনি যে সময় কম ব্যস্ত ছিলেন তখন বাংলা ছবি মন দিয়ে দেখার সময় পেতেন। তাই বাংলা সিনেমাকে এভারেস্টের চূড়ায় দেখতেন। এখন উনি পুরোদস্তুর ব্যস্ত, তিনি একজন সিনেমা নির্মাতা ও ব্যবসায়ী,তাই তেমন মন দিয়ে বাংলা সিনেমা দেখার সময় পান না এখন। দেখলে এমনটা নিশ্চয়ই বলতেন না। এখনও গুণমানের বিচারে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের ক্ষেত্রে বাংলা যথেষ্ট এগিয়ে তা নিশ্চয়ই অনুরাগ কাশ্যপের জানা। হিন্দি সিনেমাতেও কি আগের মত দিওয়ার বা ইজাজাত বা জানে ভি দো ইয়ারোর মত এভারেস্ট ছোঁয়া বিগ বাজেটের সিনেমা তৈরী হচ্ছে ? তাই আমরা কাউকে অসম্মানিত করে কষ্ট না দিয়ে সব ভাষার ভারতীয় সিনেমার উন্নতির পক্ষে কথা বললেই তা ভাল। খুঁত ধরায় শুধু সময় নষ্ট হয়। অনুরাগজীর থেকে দারুণ একটা সিনেমা উপহার পাওয়ার প্রতীক্ষায় রইলাম।
রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার মনে হচ্ছে ওঁনার কথাটাকে একটু অন্যভাবে নেওয়া হয়েছে। তার কারণ উনি যে কথাটা সম্পূর্ণরূপে বলেছেন সেটা হল বাংলা ছবি পড়ছে সামগ্রিকভাবে, বাংলা ছবি পড়ছে এভারেস্ট থেকে আর হিন্দি ছবি পড়ছে দোতলা থেকে। অনুরাগ কাশ্যপ এভারেস্ট অর্থে যেটা বলেছেন ওঁনার জ্ঞানত যে সিনেমার কথা উনি বলেছেন, সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্ত্বিক ঘটক, এঁদের ছবির কথা হয়ত উনি বলেছেন। এঁনাদেরকে পরিচালক কিন্তু অপার শ্রদ্ধার জায়গা থেকে রেখেছেন। আসলে হিন্দি ছবির এমন কিছু কৌলিন্য নেই যে সেই পড়াটা তাঁর চোখে লাগছে। বরং বাংলা ছবির যে কৌলিন্য ছিল সেটা আমরা হারিয়েছি। এবার কথা হচ্ছে যে সত্যি কি ভাল বাংলা ছবি হয় না? ভাল বাংলা ছবি তো হয়, কিন্তু কটা ছবিকে হলে বেশিদিন রাখতে দেওয়া হয়, কজন দর্শক পায়, যেগুলো অন্য ধরনের ছবি যেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, আমার তো মনে পড়ে না প্রদীপ্তদার (প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য) ছবি বা নিহারিকা, ইন্দ্রাশিষ আচার্যের ছবি, অন্য ধারার সমান্তরাল ছবিগুলিকে হলে বেশিদিন রাখা হয়েছে। একটা ইন্ডাস্ট্রির পরিচয় কিছু মনে না করলেও, কিছু মনে করলেও কিছু করার নেই, মূল ধারার বা কর্মাশিয়াল ছবি দিয়ে হয় না। তার পরিচয় হয় সমান্তরাল ছবি, সিরিয়াস গোছের ছবি কেমন হচ্ছে তার ওপর। সেইখানে বোধহয় আমরা গত কয়েক বছরে খুব ভাল জায়গা করতে পারিনি। সহজপাঠের গপ্পো আর আসা যাওয়ার মাঝে, বাকিটা ব্যক্তিগত এগুলো বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ব্যতিক্রম। কিন্তু তাও বলব বাকিটা ব্যক্তিগত দেড় সপ্তাহ মতো হলে ছিল, পরে সেটা জাতীয় পুরস্কার পায়। আমার মনে হয় সবথেকে বেশি দায়ী দর্শক, দর্শক যদি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী না বদলায় তাহলে এই ধরনের ছবি করতে কেউ উৎসাহী হবে না।