
উত্তাল বাংলাদেশে শো বাতিল করলেন এই গায়িকাগত কয়েকদিন ধরেই ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে একাধিক সংবাদপত্রের দফতরে। আর এই হিংসার আগুনে পুড়ে ছাই সে দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র 'ছায়ানট'। গোটা রাতজুড়ে ছায়ানট ভবনে লুটপাট চলেছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাটিতে আছড়ে ফেলা হয়েছে তবলা, হারমোনিয়াম। এই ঘটনায় মর্মাহত এপার বাংলার সঙ্গীতশিল্পীরা। ইতিমধ্যেই একাধির বরিষ্ঠ শিল্পীরা এই বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এবার সরব হলেন নতুন প্রজন্মের গায়িকা পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়। bangla.aajtak.in-কে গায়িকা জানালেন তিনি কতটা মর্মাহত।

প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সনজ়ীদা খাতুন এবং তাঁর সহযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় কীর্তি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। এই প্রতিষ্ঠান দুই বাংলার সঙ্গীতশিল্পীদের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। নতুন প্রজন্মের গায়িকা পৌষালী জানিয়েছেন খবর কানে আসতেই শুধুই চোখের জল ফেলেছেন তিনি। শিল্পী বলেন, 'কিছু কিছু ঘটনা থাকে, যার কোনও অভিব্যক্তি থাকে না, তার মধ্যে ছায়ানট ভাঙচুরের ঘটনা অন্যতম এবং বিরল। চোখের সামনে পাশের প্রতিবেশী সাংস্কৃতিক দেশ, যার সংস্কৃতির পা ছুঁই আমরা, আমরা যাঁরা সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ, সব সময় বলতাম যে বাংলাদেশের সংস্কৃতি শেখার মতো ছিল। তাঁদের নিজের ভাষার প্রতি দক্ষতা, নিজেদের সংস্কৃতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দক্ষতা শেখার মতো ছিল, সেটা ছায়ানটটা ভাঙার পর বাংলাদেশের সেই সংস্কৃতি একেবারে শেষ।' গায়িকার কথায়, 'খুবই লজ্জাজনক, খুবই কষ্টকর এবং প্রার্থনা করব যেন, চোখের সামনে একটা দেশ ভেঙে যাবে, জ্বলছে, এটা সম্ভব নয় দেখার একজন শিল্পীজগতের শিল্পী হয়ে।'

কথা বলতে গিয়ে জানা গেল বাংলাদেশে এই ঘটনা ঘটার আগেও পৌষালীর ওই দেশে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। গায়িকা ও তাঁর ব্যান্ডের উত্তরা ক্লাব ও মানিকগঞ্জে অনুষ্ঠানের কথা ছিল। সেখান থেকে তাঁদের টিমের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু পৌষালী জানান যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত পর্যায়ে যাচ্ছিল বলেই ভয়ের জন্য যেতে পারেননি। গায়িকা বলেন, 'বাংলাদেশে কত অনুষ্ঠান করেছি আমি এবং আমার সমসাময়িক যাঁরা। এপার বাংলার এমন কোনও শিল্পী নেই যিনি বাংলাদেশ যাননি। আমাদের শিল্পীজগতে একটা খুব মজা করে প্রচলিত কথা রয়েছে, তা হল তুই এখনও বাংলাদেশ যাসনি, তাই গানটা এখনও শিখে উঠতে পারিসনি। সেই জায়গা থেকে ছায়ানট ভাঙচুরের ঘটনা খুবই কষ্টকর।' তাঁর কথায়, 'পূর্বপুরুষদের ভিটে তো, ওটা আর রইল না।' পৌষালী জানান যে তাঁদের পরিবারের একটা অংশ বাংলাদেশে থাকে, ফরিদপুরে ঝিলতুলি বলে একটা জায়গা আছে সেখানে। কিন্তু সেটারও অস্তিত্ব প্রায় শেষ বলেই জানান গায়িকা। 'আমি আর যেতেই পারব না কোনওদিন। আমি যখন খবর পেলাম ছায়ানট ভেঙে দিয়েছে, তখন চুপচাপ ঘরে বসে থেকে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কাজ নেই।'বললেন পৌষালী। তিনি বলেন, 'আমার তো এই ক্ষমতাটা নেই যে আমি ওখানে গিয়ে ওদের পা ধরে, হাত ধরে বলব যে ছায়ানটটা ভেঙো না। ঈশ্বর যদি এই ক্ষমতাটা দিত তাহলে এই কাজটাই করতাম। খবরটা শোনার পর শুধু চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনও কাজ ছিল না, তাই আমি ওটাই করেছি।'
পৌষালী পাশাপাশি ইমন চক্রবর্তীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু 'ছায়ানট' ভাঙা নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।