কাকতালীয় ঘটনা নাকি ভাগ্যের পরিহাস নাকি বহু বছর আগে ঘটা কোনও ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে জুবিন গর্গের অকাল প্রয়াণ উস্কে দিল ২৩ বছর আগে ঘটা তাঁর বোনের মৃত্যুকে। গায়কের বোন জংকী বরঠাকুরের মৃত্যু হয়েছিল দুর্ঘটনায়। গাড়ি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল জুবিনের বোনের প্রাণ। আর ঠিক ২৩ বছর আগেই মৃত্যু হল গায়কের।
২০০২ সালে এই ঘটনাটি ঘটে। গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় জুবিনের ১৮ বছরের বোন জংকীর। তিনিও অনুষ্ঠান করতেই যাচ্ছিলেন। এই ঘটনার পর জুবিন গর্গ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, যার প্রভাব পড়েছিল গায়কের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও। প্রসঙ্গত, মা ইলি বরঠাকুর ছিলেন অসাধারণ সঙ্গীতশিল্পী ও একজন নৃত্যশিল্পী। মায়ের পথ অনুসরণ করেই জংকী ও জুবিন গানের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন।
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর জুবিন বরঠাকুর নামে জন্মগ্রহণ করলেও, পরে তিনি তাঁর গোত্র থেকে গর্গ নামটি মঞ্চের উপাধি হিসাবে ব্যবহার করেন। সকলের কাছে তিনি জুবিন গর্গ নামেই পরিচিত। অপরদিকে জংকি খুব অল্প বয়সেই অসমের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অভিনেত্রী ও গায়িকা হিসাবে সুনাম অর্জন করে ফেলেন। প্রায়ই জুবিন ও জংকি একসঙ্গে কনসার্ট করছেন। জংকি বেশ কয়েকটি অসমিয়া টিভি অনুষ্ঠানে অভিনয় করেছিলেন। অসমিয়া সিনেমাতেও অভিনয় করেন গায়কের বোন।
জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের জানুয়ারিতে অসমের শোণিতপুর জেলার তেজপুরের কাছে ভাই-বোন একটি কনসার্টে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সেইদিনই জংকির গাড়ি একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় এবং এই ঘটনায় জুবিনের বোন ও বন্ধু ঘটনাস্থলেই মারা যান। জানা গিয়েছে, ২৯ বছরের জুবিন বোনের সঙ্গে প্রথমে একই গাড়িতে উঠলেও দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক মিনিট আগে তিনি অন্য গাড়িতে উঠে যান। যার ফলে গায়ক সেই সময় বেঁচে গিয়েছিলেন। গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১৮০ কিমি উত্তরে ন্যাশনাল হাইওয়েতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হয়। স্থানীয় হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকেরা জংকিকে মৃত ঘোষণা করেন। বোনের মৃত্য়ুশোক ও তাঁর বেঁচে যাওয়ার অনুশোচনা, জুবিনের পিছু ছাড়েনি কোনওদিন।
জুবিন তাঁর দুঃখ ও বোনের মৃত্যুকে ভুলতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। বোনের মৃত্যুশোকেই তিনি মাদকের দিকে ঝুঁকেছিলেন বলে জানিয়েছেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলিউড থেকে টলিউড একাধিক হিট গান রয়েছে জুবিনের ঝুলিতে। বৃহস্পতিবার গায়কের আকস্মিক মৃত্যুর খবর গোটা সঙ্গীতমহলকে হতবাক করে দিয়েছে। গায়কের মৃত্যুকে কেউই মেনে নিতে পারছেন না। ২০০৬ সালের ‘ইয়া আলি’ গান তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। প্রায় দুই দশক পরে, আজও সেই গান সমান জনপ্রিয়। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে জ়ুবিনের এই মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে পারছে না অনুরাগীরা।