রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বদেশ পর্বের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানের কথা বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের শব্দকে পরিবর্তন করা যায় কি? তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা-বিতর্ক। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন কবির সুমন, শ্রাবণী সেন, মনোজ মুরালি নায়ারের মতো শিল্পীরা।
রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বদেশ পর্বের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটিকে বেছে নিয়েছে সরকার। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জাতীয় সঙ্গীতের সময় সবাই যেভাবে উঠে দাঁড়ান, রাজ্য সঙ্গীত হলেও সেভাবে উঠে দাঁড়াতে হবে। ৫ ডিসেম্বর নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানে রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গাওয়া হয়। অভিযোগ, সেই গানের একটি লাইন ‘বাঙালির পণ বাঙালির আশা’-কে বদলে ‘বাংলার পণ, বাংলার আশা’ গাওয়া হয়। যা নিয়ে সরব হন নেটিজেনরা। সামাজিক মাধ্যমগুলিতে এর প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন অনেকে। 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বদলে দেওয়া কাম্য নয়' মন্তব্যে ভরে যায় সামাজিক মাধ্যম।
যদিও অনেকে এই প্রশ্নও তোলেন, রাজ্য সরকার যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথা বদলে দিয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয় এর পিছনে কোনও যুক্তি আছে। আবার কেউ কেউ বলেন, সেদিনের অনুষ্ঠানে তো ইমন চক্রবর্তী, অদিতি মুন্সি, ইন্দ্রনীল সেন, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, রূপঙ্কর বাগচীর মতো শিল্পীরা ছিলেন। তাঁরা কেন প্রতিবাদ করেননি। সঙ্গতভাবেই যে প্রশ্নটা এসে পড়ে তা হল, সত্যিই কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথা বদলে দেওয়া যায়।
এই বিষয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী সেন বলেন, 'আমরা যতটা জানি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথা ও সুরের কোনও পরিবর্তন করা যায় না।'
আর এক সঙ্গীত শিল্পী তথা প্রাক্তন সাংসদ কবির সুমন বলেন, 'আমি যা লেখার ফেসবুকে লিখেছি। আমি আলাদা করে এটা নিয়ে কিছু বলব না। তবে এই পরিবর্তন কাম্য নয়।'
ফেসবুক পোস্টে সুমন লেখেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বলা উচিত তারা ভুল কাজ করেছে। এমন কাজ আর হবে না। তাঁর পোস্ট, 'কারুর রচনাই অন্য কেউ পালটে দিতে পারে না। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের উচিত প্রকাশ্যে বলা - রবীন্দ্রনাথের একটি গানের কথা পালটে শিল্পীদের দিয়ে পরিবেশন করিয়ে তাঁরা অনুচিত কাজ করেছেন। এ কাজ আর কখনও করবেন না তাঁরা।'
আর এক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মনোজ মুরালি নায়ার বলেন, 'গানের কথা ও সুরের পরিবর্তন কোনওভাবে কাম্য নয়। সেদিন তো মঞ্চে অনেক শিল্পী উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সামনেই এমনটা হল! কীভাবে ? আমি প্রচণ্ড মর্মামত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের আদর্শ। তাঁর গান নিয়ে এসব কাম্য নয়। এই প্রথম তো নয়। আগেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুর বদলে দেওয়া হয়েছে। সেটাও ঠিক হয়নি। এমনিতেই আমাদের দেশে বা রাজ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা কমে গেছে। তার উপর এখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়েও এসব হচ্ছে। আমি মর্মাহত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে একজন প্রতিষ্ঠান। তিনি আমাদের সব দিয়েছেন। তাঁর শিল্পকর্মকে যদি আমরা এভাবে ব্যবহার করি, তাহলে সংস্কৃতি বলতে কি আর অবশিষ্ট থাকবে?'