আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকেই একরকম চুপ ছিলেন অভিনেতা ও তৃণমূলের বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। টলিউড তারকাদের প্রতিবাদ মিছিলেও কাঞ্চনকে দেখা যায়নি। আর এবার আরজি করের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রবিবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে কাঞ্চন মল্লিক প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন, সরকারি বেতন, বোনাস নেবেন তো নাকি?” উত্তরপাড়ার বিধায়কের এই মন্তব্য ভাইরাল হতেই টলিউডের একাংশ কাঞ্চনের বিরুদ্ধে সরব হন। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কাঞ্চনকে কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। এবার কাঞ্চনের তুলোধনা করতে ছাড়লেন না অভিনেতা ঋত্ত্বিক চক্রবর্তী।
ঋত্বিক সোজাসাপ্টা কথা বলতে কখনই পিছু পা হন না। বিশেষ করে শাসক দলের কোনও অনিয়ম দেখলেই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মতো করে সোচ্চার হন। কাঞ্চন মল্লিকের মন্তব্যের পর ঋত্বিক যে চুপ থাকার পাত্র ছিলেন না, সেটা সকলেই জানতেন। নিজের ফেসবুক পেজেই কাঞ্চনের বিরুদ্ধে তীর্যক মন্তব্য করলেন ঋত্বিক। অভিনেতা লেখেন, ঘাঁটা মল্লিক, চাটা মল্লিক, ফাটা মল্লিক, টা টা মল্লিক। শেষের এই টা টা মল্লিক কথার মাধ্যমে উত্তরপাড়ার বিধয়ককে তিনি বুঝিয়ে দিলেন তাঁর আর কোনও স্থান নেই ঋত্বিকের পরিচিতদের তালিকায়। কাঞ্চন বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও টলিপাড়ায় তাঁর সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু রবিবার তাঁর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন টলিউডের একাংশ।
ঋত্বিকের আগে সুদীপ্তাও তাঁর বহুদিনের বন্ধু কাঞ্চনের সমালোচনা করতে পিছু পা হননি। বন্ধুর উদ্দেশে চাঁচাছোলা পোস্ট করে তাঁকে ‘ত্যাজ্য’ করলেন সুদীপ্তা। অভিনেত্রী লিখলেন, এক সময়ের বন্ধু/সহকর্মী কাঞ্চন মল্লিক তোকে ত্যাগ দিলাম। অনুপ্রেরণা র লকারে চোখ,কান,মাথা,মনুষ্যত্ব, বিবেক,বুদ্ধি,বিবেচনা,শিক্ষা সব ঢুকিয়ে রেখে চাবি টা হারিয়ে ফেলেছিস মনে হয়। চাবি টা খুঁজে পেলে খবর দিস বন্ধু। তখন আবার কথা হবে, আড্ডা হবে। (কথাগুলো ফোন করে বা মেসেজ করেও বলতে পারতাম হয়ত, যদি তোর বলা কথাগুলো ফোনেই শুনতাম। তুই যেহেতু news media-কে বললি, আমিও তাই social media তেই লিখলাম)।
কাঞ্চন মল্লিককে নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষও। রুদ্রনীল ও কাঞ্চন বহু পুরনো বন্ধু। রবিবার মধ্যমগ্রামের এক প্রতিবাদ মিছিলে এসে রুদ্রনীল বলেন, কাঞ্চন মল্লিক পেশাগত জায়গা থেকে আমার বন্ধু। কাঞ্চন মল্লিককে, রাজ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য শিল্পীদের তৃণমল সদস্য কুণাল ঘোষ অত্যন্ত ব্যথাতুর ভাষায় আক্রমণ করেছেন, অরিজিৎ সিংকে আক্রমণ করেছেন। আমি আবারও বলব আমার যাঁরা শিল্পী বন্ধুরা রয়েছেন তাঁদের মুখ দিয়ে কড়া কথা বলানো হচ্ছে। আমি আবার বলব আমার বন্ধুরা কেউ পাপের পক্ষে নয়, অন্যায়ের পক্ষে নয়, তাঁরা মানবিকতার পক্ষে বলেই তাঁদের এই ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকির শিকার হতে হয়েছে। রুদ্রনীল আরও বলেন, কাঞ্চন-রাজ আমরা সবাই স্ট্রাগল পিরিয়ডের বন্ধু। এ কথা হয়ত কাঞ্চনের দলের নির্দেশ, সে হয়ত একজন বিধায়ক বা সাংসদ হিসাবে তাঁরা কিছু বয়ান দিচ্ছেন। আমার বিশ্বাস মানুষ যেটা বিশ্বাস করছে কাঞ্চন-রাজরাও সেটাই বিশ্বাস করছেন।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বিচার চেয়ে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে কর্ববিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। আরজি কর কাণ্ডে ধর্ষকের ফাঁসি চেয়ে ধর্না কর্মসূচি করছে তৃণমূল কংগ্রেসও। আজ অর্থাত্ সোমবার ধর্ষণ বিরোধী কড়া আইন আনতে বিধানসভায় বিল আনছে শাসকদল। এহেন পরিস্থিতিতে রবিবার অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কোন্নগর শহর ও নবগ্রাম মহিলা তৃণমূলের উদ্যোগে ধর্নামঞ্চ করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। আর সেখানেই কাঞ্চন ডাক্তারদের টানা কর্মবিরতিকে নিশানা করেন। বলেন, 'আজ আন্দোলনের নামে ডাক্তাররা কর্মবিরতি করছেন। সবাই বলে ডাক্তার মানে ভগবান। গ্রাম থেকে আসা মানুষ ছুটে আসেন চিকিৎসার জন্য। আপনারা আন্দোলন করুন। তবে রোগীরা কী অপরাধ করেছে? এমন কোনও কাজ আপনাদের করা উচিত নয় যে ডাক্তার ভগবান বলতে দু’বার ভাবেন। এটা গণতান্ত্রিক দেশ। সবাই নিজের মতো কাজ করতে পারেন। অনেকেই শুনছি পুজোর অনুদান নেবেন না বলছেন। সেটা তাদের ব্যক্তিগত মতামত। যাঁরা কর্মবিরতি করছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে। ভাল। তাঁরা সরকারি বেতন নিচ্ছেন তো নাকি নিচ্ছেন না? এটা আমার প্রশ্ন। বোনাস নেবেন তো? না নেবেন না? এটা আমার প্রশ্ন।'