ভারতীয় সঙ্গীতে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রবেশ ঘটেছে বহু আগেই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক তাঁদের সৃষ্টিতে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ব্যবহার করেছেন। আবার পাশ্চাত্য সঙ্গীত থেকে অনুপ্রাণিত হয়েও তৈরি করেছেন নতুন সুর। তবে তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ এই বিষয়ে বিশেষ পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন, যার অন্যতম সলিল চৌধুরী (Salil Chowdhury)। মোজার্ট, বেটহোফেন, বাখ-এর মতো সঙ্গীতস্রষ্টাদের মিউজিক বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিল তাঁকে। আর সেই ছাপ বারেবারেই ধরা পড়েছে তাঁর সৃষ্টিতে।
ছোটবেলায় বাবা জ্ঞানেন্দ্রময় চৌধুরীর সংগ্রহে থাকা পাশ্চাত্য ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সংগ্রহ শুনতে শুনতেই সলিল চৌধুরীর সঙ্গীতের পথচলা শুরু। পিয়ানো, বাঁশি, এসরাজ-সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে খুব সহজেই চলতো তাঁর আঙুল, তৈরি হত সুরের মায়াবী আবেশ। মূলত গণসঙ্গীতের মধ্যে দিয়েই শুরু হয় সলিল চৌধুরীর সুরসৃষ্টির যাত্রা। পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রেও পান সঙ্গীত পরিচালনার সুযোগ। বাংলা-হিন্দির পাশাপাশি মালায়লম, মারাঠি, তামিল, তেলগু-সহ অন্যান্য মোট ১৪টি ভাষার ছবিতে দিয়েছেন মিউজিক ডিরেকশন।
'রানার', 'পাল্কির গান', 'অবাক পৃথিবী', 'গাঁয়ের বধূ', 'হেই সামালো হেই সামালো'র মতো সৃষ্টি শ্রোতাদের কাছে চিরনতুন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, মান্না দে, মহম্মদ রফি থেকে শুরু করে সমসাময়িক প্রায় সমস্ত সঙ্গীতশিল্পীই গান গেয়েছেন সলিল চৌধুরীর সুরে। গানগুলিতে একদিকে যেমন ছিল পাশ্চাত্য সুরের প্রভাব, তেমনই পাওয়া যেত উচ্চঙ্গ সঙ্গীতের ছোঁয়াও। এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে 'ছায়া' ছবির 'ইতনা মুঝে তু প্যায়ার বড়া গানটি'। Mozart 40th Symphony থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই গানটি তৈরি করেছিলেন সলিল চৌধুরী। গানটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) ও তালাত মেহমুদ। এছাড়াও সলিল চৌধুরীর আরও সঙ্গীতের আরও এক বৈশিষ্ট ছিল পাশ্চাত্য 7th chords-এর ব্যবহার।
সঙ্গীত সলিল চৌধুরীকে এনে দিয়েছে বহু সম্মানও। তার মধ্যে অন্যতম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার। এছাড়া বিদেশের মাটিতেও স্বীকৃতি পেয়েছে তাঁর সুর। তবে ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঘটে ছন্দপতন। চিরকালের জন্য থেমে যায় তাঁর সৃষ্টি। সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য রেখে যান এক সুরের সাগর।
আরও পড়ুন - রাজ্যে ৮৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগ; সিলেবাসে জুড়ছে আরও এক নয়া বিষয়