বাঙালির মনে আজও গোয়েন্দা চরিত্র বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফেলুদা। যার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়। বিশ্ববরেণ্য এই লেখকের সৃষ্টি করা বইয়ের চরিত্রটিকে পর্দাতেও এনেছেন তিনি। আর সেই চরিত্রে আজও স্মরণীয় প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিতের সৃষ্টি করা এই চরিত্রের সঙ্গে সৌমিত্রের গঠন-কথা বলার ধরন একেবারে মিলে গিয়েছিল। বরাবরের এলিজিবল ব্যাচেলর এই যুবকের আবেদন আজও এতটুকু কমেনি। কিন্তু জানেন কি ফেলুদা চরিত্রে সত্যজিৎ পছন্দ করেছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চনকে। কিন্তু কেন অমিতাভ ফেলুদা হয়ে উঠতে পারলেন না আসুন জেনে নেওয়া যাক।
সত্যজিৎ-এর ফেলুদা হতে পারতেন অমিতাভ
ফেলুদা বলতেই কিন্তু আজও দর্শকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চেহারা। বাঙালি দর্শকদের এমন ধারণাই হয়ে গিয়েছিল যে সত্যজিৎ রায় হয়ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে কল্পনা করেই ফেলুদা চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন। কারণ ফেলুদা বলতেই প্রথমেই চোখের সামনে দীর্ঘদেহী সুপুরুষ যুবক সৌমিত্রের ছবি। ‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ সৌমিত্র যেন সত্যজিতের বই থেকে উঠে আসা ফেলুদা। কিন্তু একটা সময় এই সৌমিত্রকেই ফেলুদা হিসাবে নাকচ করে দেন সত্যজিৎ এবং চেয়েছিলেন বলিউডের বিগ বি-কে ফেলুদা হিসাবে নিতে। প্রসঙ্গত, সেই সময় অমিতাভের কন্ঠস্বর ও অ্যাংরি ইয়ংম্যানের ইমেজে কাবু গোটা দেশবাসী। আর তাই ফেলুদা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাঁর কথাই নাকি ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়ও।
আরও পড়ুন: Satyajit Ray: ফেলুদা নিয়ে মাত্র ২টো সিনেমা, আর কোনও সিনেমা কেন বানাননি সত্যজিৎ রায় ?
সত্যজিৎকে সময় দিতে পারেননি অমিতাভ
শোনা য়ায়, সময়টা তখন আটের দশকের মাঝামাঝি। দূরদর্শনের থেকে প্রস্তাব এল সত্যজিতের ফেলুদা-কাহিনি নিয়ে মিনি সিরিজ করবার। কিন্তু ইতোমধ্যেই ১৯৮৪ সালে দু’বার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে সত্যজিতের। পরিচালনা বা অন্যান্য শ্রমসাধ্য কাজ ডাক্তারের নির্দেশে একেবারেই বন্ধ। তবু ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে’ গল্পের উপর ভিত্তি করে হিন্দিতে চিত্রনাট্য লিখে ফেললেন সত্যজিৎ। ঠিক হল পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন তাঁর পুত্র সন্দীপ রায়। এই সময়েই ফেলুদা চরিত্রে নিজের পছন্দ হিসেবে সত্যজিৎ সন্দীপকে জানালেন অমিতাভের কথা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সন্দীপ রায় এ প্রসঙ্গে বলেন,বাবা চেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন এই চরিত্রে অভিনয় করুন। ওঁকে এই চরিত্রে দেখার প্রবল ইচ্ছে ছিল বাবার।” এ-নিয়ে অমিতাভের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হলেও সমস্যা দেখা দেয় অচিরেই। কারণ এই সিরিজের শুটিঙের জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বচ্চনের হাতে তখন পরপর কাজ। শেষ অবধি তাই বচ্চনকে পরিকল্পনা থেকে বাদ দিতে হয়।
সত্যজিৎ-এর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কাজ করা হয়নি বিগ বি-র
এর আগে অবশ্য ১৯৭৭ সালে শতরঞ্জ কি খিলাড়ি ছবির নেপথ্যে ভাষ্যপাঠ করেছিলেন অমিতাভ। সত্যজিৎ ও অমিতাভ দুজনেরই একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহও ছিল। কিন্তু অভিনয় সংক্রান্ত কথাবার্তা শুরু হলেও দেখা যায়, ছবির শুটিংয়ের জন্য যত ডেট দিতে হবে, অতদিন সময় অমিতাভের হাতে নেই। তাঁর তখন পরপর কাজ। অগত্যা শশী কাপুরকে ফেলুদা চরিত্রে নিয়ে কিসসা কাঠমাণ্ডু কা ছবিটি হয়। এমন অবস্থায় মনে হয় বটে যে, বচ্চনকে পাওয়া গেলে ছবিটা অন্যরকম হতেই পারত। অভিনয় জগতে আসার আগে কলকাতায় চাকরি করেছেন অমিতাভ। হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়, দুলাল গুহর মতো পরিচালকের একের পর এক ছবিতে সে-সময় তিনি করেছেন বাঙালির চরিত্র। শক্তি সামন্তর ‘অনুসন্ধান’ বা টিটোর ‘ওরা কারা’-র মতো বাংলা ছবিতেও কাজ করেছেন। ছয় ফুট দু ইঞ্চি অমিতাভকে ছয় ফুটিয়া ফেলুদা হিসেবে কেমন লাগত, ভাবলে সত্যিই আগ্রহ জাগে। অমিতাভের স্ত্রী জয়ার প্রথম কাজ ‘মহানগর’ ছবির পরিচালক ছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু সত্যজিতের পরিচালনায় আর কাজ করা হয়নি অমিতাভ বচ্চনের।