EXCLUSIVE: "চোখ বন্ধ করলেই সৌমিত্রর সেই দুষ্টু হাসিটা ভেসে ওঠে", শর্মিলা

সৌমিত্র-শর্মিলার জুটি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফ্রেম থেকে রঙিন হয়েছিল দর্শকের মনে। স্মৃতি বিজরিত শর্মিলা ঠাকুর মেলে ধরলেন সেই সব রঙিন ফেলে আসা দিন।

Advertisement
EXCLUSIVE: "চোখ বন্ধ করলেই সৌমিত্রর সেই দুষ্টু হাসিটা ভেসে ওঠে", শর্মিলাশর্মিলার কথায়, "টাইগার, শশী আর আজ সৌমিত্র, এখন ভয় করে আরও কত বন্ধুকে হারাব?"
হাইলাইটস
  • সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেই শুরুর সময় থেকে কাজ করেছিলেন, কেমন ছিল সেই দিন?
  • "এত মূল্যবোধ ছিল, কত সম্মান-পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রতিবাদ করে, এই বিশ্বাস, চরিত্রের দৃঢ়তা মানুষের মনে থেকে যাবে।"
  • ''সৌমিত্রকে, বন্ধুত্বকে মিস করব। সেই সুর নিয়েই বলে চলেন, সৌমিত্র সেই বন্ধু আজ 'গ্রুপ লেফট' করলেন।''

'অপুর সংসার' দিয়ে শুরু। সেই অপু আজ চলে গেলেন। সৌমিত্র-শর্মিলার জুটি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফ্রেম থেকে রঙিন হয়েছিল দর্শকের মনে। স্মৃতি বিজরিত শর্মিলা ঠাকুর মেলে ধরলেন সেই সব রঙিন ফেলে আসা দিন। 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেই শুরুর সময় থেকে কাজ করেছিলেন, কেমন ছিল সেই দিন? শর্মিলা ঠাকুর বললেন, "অপুর সংসার দিয়ে শুরু। ছবির জনপ্রিয়তায় অপু আর অপর্ণা দেশের হার্টথ্রব হয়ে ওঠে। পাঁচ দশক পরেও এটা একই রকম থাকবে। মানুষ তা সবসময় মনে রাখবে। সেই সময় নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ভাবনা, আলাদা থাকার বিষয় তখনই সমাজে সেভাবে আসেনি। কিন্তু অপু সেই নিয়ম ভেঙে দিয়েছিল। সেই সময় এই চিন্তাধারা যুব সমাজকে খুব আকৃষ্ট করেছিল যা এখন বহমান এবং রয়ে যাবে আগামীতেও। 

অনেক ছবিও একসঙ্গে করেছেন এই জুটি। নাম বলে চলেন শর্মিলা, "দেবী, বর্ণালী, কিনু গোয়ালার গলি.... মানিকদার অরণ্যের দিন রাত্রি।" অভিনেতার সৌমিত্রর স্মৃতিতে ডুব দিয়ে শর্মিলা বলেন, "সৌমিত্র তেমনই একজন মানুষ যার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব ভাল। কোনও ইগো নেই, সবসময় সহযোগীতা করতেন। খুব সহজ করে কাজ করা যেত ওঁর সঙ্গে। কোনও ঝামেলার বিষয়ই ছিল না কোনওদিন। অভিনয়কে ভীষণ আনন্দের সহকারে উপভোগ করতেন।" 

তবে শুধু স্ক্রিনে নয়, শর্মিলা-সৌমিত্র জুটি মঞ্চেও সফল। বেশ কিছু অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে সৌমিত্রর নায়িকা বলেন, "আমরা একসঙ্গে অনেক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেছি। এর মধ্যে কে তুমি একটি শ্রুতিনাটক খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। অনেক জায়গায় পারফর্ম করেছি৷" তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মত অভিনেত্রীর।  বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুতে এদিন আবেগধরা গলা নিয়ে জানালেন, "ওর এই অভিনয় ধারাটি থেকে যাবে। সবসময় মনের মধ্যেই থাকবেন তিনি।" 

সৌমিত্রর ব্যক্তিত্বই যে মুগ্ধ করে তোলে সকলকে, একথা জানালেন শর্মিলা ঠাকুর। বলেন, "এত মূল্যবোধ ছিল, কতটা সম্মান-পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রতিবাদ করে, এই বিশ্বাস, চরিত্রের দৃঢ়তা মানুষের মনে থেকে যাবে।"  সুদীর্ঘ অভিনয় জীবন প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, "যেকোনও চরিত্রে মানিয়ে যেত। আর ওই সিগনেচার স্মাইল। চোখ বন্ধ করে ভাবলে সৌমিত্রর সেই দুষ্টু হাসিটা ভেসে উঠবে। 

Advertisement

তবে অভিনয় ছিল পেশা, আর অফ স্ক্রিনে পরিবার প্রিয় মানুষ ছিলেন সৌমিত্র। সেই মানুষটিকে যখন দেখেন তখন শর্মিলার কথায়, "যখন পৌলমীর ছেলের দুর্ঘটনা ঘটল তখন ভীষণ আঘাত পেয়েছিলেন। আর মেয়ে পৌলমী ছিল ওর চোখের মণি।" 

সৌমিত্র জীবনীর ব্যাপ্তি যে কতখানি তা বলতে গিয়ে শর্মিলা জানালেন, "৭০ বছরের অভিনয় জীবনে প্রতিদিন নিজেকে বেটার করার চেষ্টা করতেন। রেগে যাওয়া, খারাপ কথা বলা আমি অন্তত কোনওদিন দেখিনি। ভীষণ পজিটিভ একজন মানুষ ছিলেন। কাজের ক্ষেত্রে কখন টায়ার্ড হতেন না।" 

এতদিনের অভিনয় সফরের বন্ধুর বিয়োগে ভারাক্রান্ত অভিনেত্রী। সৌমিত্রকে, বন্ধুত্বকে মিস করব। সেই সুর নিয়েই বলে চলেন, সৌমিত্র সেই বন্ধু আজ 'গ্রুপ লেফট' করলেন। শর্মিলার কথায়, "টাইগার, শশী আর আজ সৌমিত্র, এখন ভয় করে আরও কত বন্ধুকে হারাব?"
 

POST A COMMENT
Advertisement