আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষিত ও নিহত তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল গায়িকা লগ্নাজিতা চক্রবর্তীর। তরুণী চিকিৎসকের হবু বরের ফোনের কলার টিউন ছিল লগ্নজিতার গাওয়া গান ‘আমাদের স্বপ্নগুলো অল্প সময় ঘর পাতালো…’। একান্নবর্তী ছবির এই গানটি লগ্নজিতার জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে অন্যতম। যেটা খুব পছন্দের গান ছিল তরুণী চিকিৎসকের। লগ্নজিতা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট পোস্ট করেন, আর সেখান থেকেই জানা যায় এই তথ্যটি।
লগ্নজিতার বাবা সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই খবরের ছবি তুলে তাঁর মেয়েকে পাঠান এবং লেখেন, রাই মা, তোমার গানের লাইন। প্রতিবাদ করো, পথে নামো। আর এই খবর থেকেই জানা যায় নিহত তরুণীর হবু বরের ফোনে লগ্নজিতার গাওয়া গানটি ছিল ওই তরুণীর খুব পছন্দের। কিছুদিন পরই তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ। নিজের বাবার প্রসঙ্গে টেনে এক দীর্ঘ পোস্ট করলেন লগ্নজিতা। লিখলেন, ‘সব মেয়েদের কাছেই তাদের বাবারা হিরো, আমি এই ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নই; কিন্তু আজ আমার বাবা আবার নতুন করে আমার হিরো হয়ে উঠলেন। আজ আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই আমার বাবা আমায় এই খবরের স্ক্রিনশট টি পাঠান, এবং আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন বাবা সেখানে কী লিখেছেন। আমি গর্বিত যে আমার বাবা চান যে আমি প্রতিবাদ করি, পথে নামি।’
এখানেই শেষ নয়, গায়িকা আরও লিখলেন, ‘গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একটি ইংরাজি ভাষায় বক্তৃতা দেওয়ার ছিল, সেইখানে আমায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আমার মতামত “touching lives” নিজের গানের মধ্যে দিয়ে- বিষয়ে। তাতে আমি উত্তর দিয়েছিলাম, আমার গানবাজনা নিয়ে আমি এত তৎপর করে কখনও ভাবিনি। আমি মনে করি আমার কাজটা আর পাঁচজনের মতোই। যিনি ব্যাংককর্মী, যিনি শিক্ষক, যিনি কারখানায় কর্মরত, আমার কাজ তার থেকে আলাদা নয়। কিন্তু আজ সকালে এই খবরটা পড়ে মনে হলো, সত্যিই হয়তো গানের মধ্যে দিয়ে “touching life” মাঝেমধ্যে সম্ভব হয়। আমি কখনো ভাবিনি আমার এই গানটি মেয়েটির জীবনের সঙ্গে এত নিবিড় ভাবে জড়িয়ে থাকতে পারে। এখন যখন জানতে পেরেছি, তখন যেন কেমন একটা আলাদা রকম যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মধ্যে। আগে যে কষ্ট হচ্ছিল সেটা হয় তো সর্বজনীন, কিন্তু আজ সকাল থেকে সেই কষ্টের ধরনটা একটু বদলে গেল।’
এই গান প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, প্রেমের গানে বিপ্লবের কোনো সরাসরি দ্যোতনা থাকে কী না আমি জানি না, কিন্তু এই যে প্রেমিকের স্বপ্ন গুলো, ছিঁড়েখুঁড়ে রেখে দিল সমাজ যন্ত্র, তার বুক থেকে এই গান কিন্তু কখনও মুছে দিতে পারবে না আর কেউ। প্রেম ছাড়া দিন বদলায় না, বদলাতে পারে না… ক্ষমতার অট্টহাসিকে হার মানিয়ে প্রেম দিয়েই বিপ্লবের বীজ বপন করতে পারি আমরা। আজ আমার কাছে দেশের লড়াই, আর মনের লড়াই মিলেমিশে এক হয়ে গেল। মনের মধ্যেকার দেশটা জুড়ে গানটা ফিরে ফিরে আসছে। আর শুনতে পাচ্ছি আমার বাবার কণ্ঠ, “রাই মা, তোমার গানের লাইন। প্রতিবাদ করো, পথে নামো। ইতিমধ্যেই ১৪ অগাস্ট, বুধবার শহর ও শহরতলিতে রাতের দখল নেবে মহিলারা। জেলায় জেলায় চলছে সেই কর্মসূচির প্রস্তুতি।