প্রথমে রবীন্দ্রসঙ্গীত বিতর্ক। এরপর রামপ্রসাদ। শনিবার থেকেই মন রে কৃষিকাজ জানো না নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। শনিবারই টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ডের পক্ষ থেকে রামপ্রসাদের লেখা গানের জন্য সেরা গীতিকার হিসাবে মনোনয়ন পেলেন তিনি। আর কিছুতেই শ্রীজাত বুঝতে পারছেন না বারবার এটা হওয়ার পিছনে কারণ কী। যদিও তিনি পরপর ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলি নিয়ে তিতিবিরক্ত। এর আগেও ২৫ বৈশাখের দিনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। একের পর এক ভুল পালক কেনই বা জুড়ছে তাঁর মাথায় সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।
শনিবার প্রযোজক রানা সরকার তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে একটি ছবি পোস্ট করেন। যেখানে দেখা গিয়েছে, ২০তম টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এর পক্ষ থেকে ২০-তম টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এর পক্ষ থেকে শ্রীজাতকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল ৷ শ্রীজাতর মানবজমিন ছবির ‘মন রে, কৃষিকাজ জানো না’ গানটি গেয়েছিলেন জনপ্রিয় গায়ক অরিজিৎ সিং৷ এই গানের গীতিকার ও সুরকার সবটাই রামপ্রসাদের, যেখানে শ্রীজাতর কোনও ভূমিকা নেই৷ তবে টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ড-এর মনোনয়ন পত্রে পুরো কৃতিত্বটাই পেয়েছেন শ্রীজাত ৷ যা নিজেও মেনে নিতে পারছেন না কবি৷ এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা পোস্টে ক্ষোভ উগরে দিলেন শ্রীজাত ৷
শ্রীজাত তাঁর ফেসবুক পেজে দীর্ঘ পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন যে এই অ্যাওয়ার্ডের তরফে এই গানটির জন্য সেরা গীতিকারের মনোনয়নপত্রটি যখন তাঁর ফোনে আসে সেই সময় তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে চিঠির প্রতিলিপি খুলে এই অঘটনটি চোখে পড়ে। প্রযোজক রানা সরকারের মারফৎ এই অ্যাওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। শ্রীজাত তাঁদের জানান যে বিরাট আকারের ভুল হয়ে গিয়েছে। পুরষ্কার তো দূরের কথা, এই মনোনয়ন মেনে নেওয়াই শ্রীজাতর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সেই ভুল ইতিমধ্যেই শুধরে নিয়েছে টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ড। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে অযথা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কবি শ্রীজাতকে।
শ্রীজাত জানান যে এই মনোনয়নের প্রতিলিপি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু এটা ক্রমেই অন্য রূপ নেয়। এ প্রসঙ্গে শ্রীজাত তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, 'কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আমাদের এখানে কোনও বিষয়ই বেশিক্ষণ আলোচনার আওতায় থাকে না। ঠাট্টা, মশকরা ও ব্যক্তি-আক্রমণের স্তরে নেমে আসে। বিশেষত তার কেন্দ্রে যদি আমি থাকি। সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় সংবাদমাধ্যমের বন্ধুদের ফোন ধরতে পারিনি, কিন্তু টের পাচ্ছিলাম, এ নিয়ে জল ঘোলা হচ্ছে। বহু রাতে বাড়ি ফিরে কিছু কিছু দেখলাম। ফেসবুকে নানান লেখা, হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে গ্রুপেও ঘুরছে সেই চিঠির ছবি। আজকের দিনে সেটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একটা কথা আছে এখানে। রামপ্রসাদ সেনের গানের জন্য আমাকে মনোনীত করা যেমন বিস্ময়কর অজ্ঞানতা বা অসাবধানতার পরিচায়ক, তেমনই এই মনোনয়নের জন্য আমাকে আক্রমণ করাও অশিক্ষা ও অভব্যতার সামিল। প্রথমত, অনেকেই দেখলাম ধরে নিয়েছেন যে, এই পুরস্কার আমি পাচ্ছি ও গ্রহণ করছি। তাঁরা সম্ভবত মনোনয়ন এবং পুরস্কারের তফাতটুকুও জানেন না। এই দুয়ের মধ্যে কতগুলো পর্যায় আছে বা থাকতে পারে, তাও তাঁদের জানা নেই। এও জানেন না যে, মনোনয়ন ব্যক্তি-মানুষের গ্রহণ বর্জনের বাইরে। গ্রহণ বা বর্জনের বিষয় তখনই আসে, যখন কেউ পুরস্কৃত হন। নইলে নয়। তাই আমি কেন এই মনোনয়ন গ্রহণ করলাম, এ-প্রশ্ন ভিত্তিহীন। কিন্তু এই মনোনয়নের বিরোধ নিশ্চয়ই করা উচিত, যা আমি যথাস্থানে করেছি। সে যাক গে, যাঁরা যে-কোনও বিষয়ের কারিগরি দিকগুলি বিচার না-করেই ময়দানে নেমে পড়েন, তাঁদের নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। যেমন খতিয়ে দেখা বা পড়ার মতো বাজে সময় তাঁদেরও নেই, বদলে খেউড়ে অংশ নেবার মতো মহান কাজে নিবিষ্ট থাকতে হয়। দ্বিতীয়ত, বহু মানুষ, হয়তো ইচ্ছাকৃত ভাবেই, এই ঘটনার জন্য আমাকে দায়ী করছেন। এখন, দায়ী করলেই কেউ দায়ী হয়ে যায় না।'
শেষে শ্রীজাত এও বলেন,'পুরস্কার প্রদানকারী সংস্থার তরফে বড় রকমের ত্রুটি হয়েছে এবং বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় তাঁদের উপর ঘটনার দায় বর্তেছে, যা স্বাভাবিক। তাঁরা এই দায় সরকারিভাবে ইতিমধ্যেই কোথাও স্বীকার করেছেন কিনা, আমার জানা নেই। জেনে খুব একটা লাভও নেই। আমি নিজে এই মনোনয়নের বিরোধিতা করেছি এবং তাতে কাজও হয়েছে, এটুকুই জানানোর ছিল। প্রযোজক রাণা সরকারও এই ভুলের বিরোধিতা করেছেন ৷'