Sudipa Chatterjee Barir Pujo: মায়ের ভোগে ৭ রকমের মাছ ও পাঁঠার মাংস, কড়া নিয়ম চ্যাটার্জি বাড়ির, জানালেন সুদীপা

Sudipa Chatterjee Barir Pujo: দম ফেলার ফুরসৎ নেই সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের। চ্যাটার্জি বাড়ির পুজোর সমস্ত দায়িত্বই রান্নাঘর খ্যাত সুদীপার ঘাড়ে। গত ১৪ বছর ধরে মায়ের পুজো করছেন সুদীপা। এই বছর ১৫-তে পা দেবে। তাঁর ও অগ্নিদেবের বাড়ির পুজোর বহু নিয়ম-কানুন আছে। একটাও ভুল হলে সর্বনাশ।

Advertisement
মায়ের ভোগে ৭ রকমের মাছ ও পাঁঠার মাংস, কড়া নিয়ম চ্যাটার্জি বাড়ির, জানালেন সুদীপাসুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো
হাইলাইটস
  • চ্যাটার্জি বাড়ির পুজোর সমস্ত দায়িত্বই রান্নাঘর খ্যাত সুদীপার ঘাড়ে।

দম ফেলার ফুরসৎ নেই সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের। চ্যাটার্জি বাড়ির পুজোর সমস্ত দায়িত্বই রান্নাঘর খ্যাত সুদীপার ঘাড়ে। গত ১৪ বছর ধরে মায়ের পুজো করছেন সুদীপা। এই বছর ১৫-তে পা দেবে। তাঁর ও অগ্নিদেবের বাড়ির পুজোর বহু নিয়ম-কানুন আছে। একটাও ভুল হলে সর্বনাশ। তাই একা হাতেই তদারকি করছেন তিনি। পুজোর প্রস্তুতি থেকে মায়ের ভোগ, চ্যাটার্জি বাড়ির পুজোর ব্যস্ততা কতটা, bangla.aajtak.in-কে জানালেন সুদীপা। 

বাড়ির পুজোর ব্যস্ততা
এই বাড়ির মা খুবই জাগ্রত। আগে এই পুজো হত অগ্নিদেবের আদি বাড়িতে, যা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরে ছিল। এরপর কলকাতার বাড়িতে সুদীপার বিয়ে হয়ে আসার পর ফের শুরু হয় পুজো। গত ১৪ বছর ধরে সুদীপা ও অগ্নিদেব বালিগঞ্জের চ্যাটার্জি বাড়িতে এই পুজো করে আসছেন। সুদীপা বলেন, 'পুজোর প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। পুজো যতক্ষণ না শুরু হচ্ছে, ততক্ষণ মনে হয় কিছুই হয়নি, কিছুই হয়নি। কী যেন একটা বাকি থেকে গেছে, সারাক্ষণ টেনশন হয়। আগে আসলে আমার মা সঙ্গে থাকতেন, মা অনেকটা দিক দেখতেন আর করেও দিতেন। একন গোটাটাই একা হাতে করতে হয়।' সুদীপা জানান, মায়ের নিরামিষ-আমিষ বাসন বের করা, মা যে গয়না পরবেন ও অস্ত্র নেবেন সেটা পালিশে যাওয়া। যদিও সেটা হয়ে গিয়েছে কারণ চ্যাটার্জি বাড়ির পরিবারের নিয়ম বিশ্বকর্মা পুজোর দিন অস্ত্র ও গয়না পুজো হয়। সুদীপ বলেন, 'চমরি গাইয়ের ল্যাজ দিয়ে তৈরি আসল চামর, তার যত্ন আমাকেই করতে হয়। সেটাকে শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনিং করা, মানুষের যেমন চুল স্ট্রেইটনিং হয়, ওরকমই চামরটাকে যত্ন করতে হয়। চারটে চামরের মধ্যে প্রধান যেটা, তার যত্ন আমাকেই করতে হয়। ওটা কারোর হাতে ছাড়ি না। তার মধ্যে এটা-ওটা খুঁজে পাচ্ছি না, লেগেই রয়েছে।'

ছবি সৌজন্যে: ফেসবুক

চলছে শেষবেলার প্রস্তুতি
সুদীপা বলেন, 'আমাদের মা তো সালঙ্কারা মা, তাই বিশ্বকর্মা পুজো পর্যন্ত মায়ের সাজ-পোশাক নিয়েই কাজ হয়, এরপর বিশ্বকর্মা পুজো পেরিয়ে গেলে মায়ের যে পুজো সামগ্রী সেগুলো সব মাজামাজি শুরু হয়। মহালয়ার মধ্যে নিরামিষ বাসন ধোওয়া মোছা হয়ে যায়। সবশেষে বেরোয় আমিষ বাসন। মহালয়ার পর যেহেতু চণ্ডীপাঠ শুরু হয়ে যায়, তখন প্যান্ডেল সাজানো, স্টেজ তৈরি, ইলেকট্রিকের কাজ, নানা কাজ থাকে। আমাদের বাড়ির পুজোয় ৫২ বাতির ঝাড়বাতি লাগানো হয়, সেটা লাগাতে ৩দিন সময় লাগে। এইসবগুলো আমায় তদারকি করতে হয়।' ব্যস্ততা থাকলেও সুদীপা বলেন, 'এ বছরের বিশেষত্ব হল, সোমবার সপ্তমী পড়ায় ওইদিন মহাদেবের পুজো হবে। শিবের পুজো করা হয়, অধিবাস দিতে হয়, নানান কাজ আছে। এই কারণে আমি উজ্জ্বয়নের মহাকাল থেকে আর বারাণসী থেকে বাবার ডুগডুগি (পেতলের, রূপোর, মাটির) আনানো হয়েছে। বাড়ির বাচ্চাদের দিয়ে সেগুলো বাজানো হবে।' বাড়ির ঠাকুরঘর পুজো ওলট পালট এখন, সেগুলো গোছাতে হবে। বাড়ির পুজোয় প্রতিদিন ৫টা করে শাড়ি যায়, ধুতি, গামছা তার সঙ্গে আছে। সব মিলিয়ে সুদীপার ব্যস্ততা তুঙ্গে বললেও কম বলা হবে। তবে ভাল খবর হল, বাংলাদেশের ঢাকা থেকে চাল এসে গিয়েছে চ্যাটার্জি পরিবারে। ওখানকার চিনিগুঁড়া চাল ও ঘি দিয়ে মায়ের অষ্টমীর ভোগ হয়। 

Advertisement

ছবি সৌজন্যে: ফেসবুক

পুজোয় কী খাব, এই নিয়েই চিন্তা সুদীপা-পুত্রের
তবে সুদীপা পুজো নিয়ে ব্যস্ত হলেও ছেলে আদিদেবের আগ্রহ শুধুই খাওয়া নিয়ে। মা সুদীপা বলেন, 'কোনও বছরই আদির পুজোর নতুন জামা-কাপড় নিয়ে আগ্রহ থাকে না। বরং আদির বেশি আগ্রহ বাড়ির পুজোয় কী খাওয়া-দাওয়া হবে, লুচি রোজ হবে কিনা এইসবে। এর সঙ্গে মায়ের বাহন সিংহ কেমন হবে তা নিয়েও খেয়াল থাকে আদিবাবুর।' এই বছর পঞ্চমীর দিন মা আসছেন চ্যাটার্জি বাড়িতে। 

ছবি সৌজন্যে: ফেসবুক

মা নিঃশব্দে সাহায্য করতেন 
এত কিছুর মধ্যেও মায়ের অভাব বোধ করছেন সুদীপা। মা নেই, তবে সুদীপাকে এই পুজোতে সহায়তা করছেন তাঁর দুই বৌদি। সুদীপা তাই বলেন, 'মা যেটা করতেন তা হল নিঃশব্দে আমায় সাহায্য করে যাওয়া। আর ভোগের কিছু জিনিস ছিল যেটা মা রান্না করতেন, সেটা বড় বৌদি করে দেয় ঠিকই কিন্তু তাও মনটা সব সময় খালি খালি লাগে। মায়ের অভাব প্রতিদিন মনে হয়। বিশেষ করে ভোগ রান্নার সময়। আমাদের অষ্টমীতে সন্ধিপুজোয় একটা ভোগ হয়, ওই ভোগটা দিতে দিতে আমাদের দুপুর ১টা বেজে যায়। এবার তো তা হবে না, সন্ধিপুজো ১টা ৪৫ থেকে শুরু, সাড়ে বারোটার মধ্যে অষ্টমীর ভোগ দিতে হবে আবার ১টা ৪০-৪৫-এর মধ্যে সন্ধিপুজোর ভোগ দিতে হবে। আবার সন্ধিপুজো কেটে গেলে আমাদের আমিষ হয়, তখন আমার রাধামাধব, জগন্নাথ দেব ঠাকুরঘরে চলে যায়, কারণ মা আমিষ খেতে শুরু করে। তখন ওই আর একটা ভোগ। মা যখন থাকত সব সময়ই বলত ঠিক হয়ে যাবে ঠিক হয়ে যাবে। এখন আর সেই কথাটা বলার মতো কেউ নেই। আমার দুই বৌদি এখন টেনশনে। যতক্ষণ না ভোগ নিবেদন হয়, ততক্ষণ আতঙ্ক থাকে মনে।' 

ছবি সৌজন্যে: ফেসবুক

মায়ের আমিষ-নিরামিষ ভোগ
প্রতিবছরই মায়ের ভোগ একই রকম থাকে। মেদিনীপুরের গয়না বড়ি থাকে সেই ভোগে। মা একেক দিন একেক রকমের ভোগের চাল খান। তাতে থাকে রায়গঞ্জের তুলাইপঞ্জি, ঢাকার চিনিগুঁড়া, বাঁশকাটি চাল আছে, গোবিন্দভোগ আছে, রাধাতিলক আছে। আমরা চেষ্টা করি মাকে সব ধরনের ফল দেওয়ার। আসলে আমাদের ভোগ কোনওভাবেই বদলানো যায় না। সাত রকমের মাছ, নিরামিষ মাংস এগুলো করতে হয় একেবারে পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া। ভোগের সাত রকমের মাছে থাকে পাবদা মাছ, পার্শে মাছ, ইলিশ মাছ, কাতলা, কুড়ি মাছ এগুলো থাকবেই। এছাড়াও কাজরি মাছ যদি ভাল পাওয়া যায়, সেটা। ইলিশ আর কাতলা ছাড়া, সব মাছই গোটা দিতে হয় আর হয় ট্যাংরা মাছ।' 

মিষ্টিভোগ
চ্যাটার্জি বাড়িতে মিষ্টি মহিলারা রান্না করে না। পায়েসটা ছেলেরা রান্না করে। মায়ের অন্নভোগ বাড়ির এঁয়ো স্ত্রীরা রান্না করবেন আর বাড়ির ছেলেরা সেই ভোগ নিবেদন করেন। পায়েস ভোগের ক্ষেত্রে ছেলেরা রান্না করবে আর ছেলেরাই নিবেদন করবে। পায়েসের পাশাপাশি মিষ্টি ভোগে যায় লবঙ্গলতিকা, মোহনভোগ এগুলো। সুদীপা বলেন, 'দশমীতে মিষ্টিমুখ যেটা করে, আমাদের সন্দেশ দিতে নেই। ছানার কোনও মিষ্টি, পনির এগুলো দিই না। কারণ দুধ কেটে গিয়ে ছানা হয় যেহেতু অর্থাৎ দুধের পচন ঘটলে ছানা হয়। আর মাকে তো পচা জিনিস দিতে পারি না। তাই ক্ষীরের মিষ্টি, ক্ষীরের প্যাড়া, মালপোয়া দেওয়া হয়। তবে দশমীর দিন প্রধান খাবারই হল ইলিশ মাছ ও শাপলার টক। মাকে বিদায় জানানোর আগে পান্তাভাত, ইলিশ মাছ ভাজা, কচুর শাক ও শাপলার টক খাইয়ে পাঠানো হয়।' 

Advertisement

POST A COMMENT
Advertisement