মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে যাওয়া পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় গোটা দেশ শিহরিত। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮ জন পর্যটক। জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে নিরপরাধ মানুষ, যাঁরা সেদিন সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেশ কিছু ছবি, ভিডিও। এই নিয়ে গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন টলিউড ও বলিউডের সব তারকারাই। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা ভরত কল আদপে কাশ্মীরি পণ্ডিত। আর এই নিয়ে তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন।
এখন কলকাতায় থাকলেও ভরত কলের শিকড় রয়েছে কাশ্মীরের মাটিতে। বউ জয়শ্রীকে নিয়ে অভিনেতা কাশ্মীরে ঘুরেও এসেছিলেন। পরিকল্পনা ছিল আবার যাওয়ার কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল ভয়াবহ ঘটনা। ভরত কল তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এই নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে লেখেন, আমার হৃদয় থেকে রক্তপাত হচ্ছে...ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কিছু নিরিহ পর্যটকদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে...আমার মেরুদণ্ড কাঁপছে...আমার মনে পড়ছে ১৯৮৯ সাল...আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অনুরোধ করব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, একেবারেই রেয়াত নয়। যদি এদের ছেড়ে দেওয়া হয় এরা আবার ফিরে আসবে আমাদের ওপর আঘত করতে...দেখিয়ে দিতে হবে ভারত কী করতে পারে।
ভরত কলের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী জয়শ্রীও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, কাশ্মীর আমার খুব প্রিয় জায়গা, আমার ঘোরা, আমার স্বামী একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত...আমার মেয়ে আরিয়া এখনও ও ওর বাবার জন্মভূমি দেখেনি, খুব ইচ্ছে ছিল আরিয়াকে নিয়ে যাব ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। যখনই বলতাম আমার স্বামী বলতো আমি যাব না...আমার খুব রাগ হতো। এখন বুঝছি কেন বলতো...ছিঃ ছিঃ লজ্জা। প্রসঙ্গত, এক সংবাদমাধ্যমকে ভরত কল জানিয়েছেন যে দিন কয়েক আগেই তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী বায়না জুড়েছিলেন গরমের ছুটিতে কাশ্মীরে যাবেন। কন্যা আয়রাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবেন ভেবেছিলেন। কলকাতার গরম থেকে বাঁচতে শ্বশুরবাড়ির জন্মভূমি থেকে ঘুরে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। এমনিতেও কথায় কথায় কাশ্মীরে বেড়াতে চলে যান ভরত ও তাঁর পরিবার। কিন্তু এ বার কে যেন মনে কু ডেকেছিল ভরতের। কাশ্মীরে স্ত্রী-কন্যাকে ভ্যাকেশন কাটানোর অনুমতি দেননি তিনি।
অভিনেতার কথায় এখন আর কাশ্মীর নিরাপদ নয় সকলের জন্য। ন’য়ের দশকে কাশ্মীর থেকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বের করে দেওয়া হয়। বহু কাশ্মীরি পণ্ডিতের মৃত্যুও হয়েছে সেই সময়ে। ভারতীয় ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যাবে সেই সব ঘটনা, বিশ্বাস করেন দেশের বহু মানুষ। বিশেষ করে ভরতের মতো কাশ্মীরি পণ্ডিতরা, যাঁদের ঘটিবাটি সব গিয়েছে। গণহত্যার বীভৎস স্মৃতি অভিনেতার মনে জ্বলজ্বল করে আজও। প্রিয় কাশ্মীরকে চিরতরে হারিয়েছেন এই ভূমিপুত্র। আর এখন এই ধরনের ঘটনা দেখলে রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিনেতা। তার সঙ্গে কষ্ট হয় ভীষণ।