শনিবার ফেডারেশনের বৈঠকের পরও সমাধান সূত্র কিছুই বের হয়নি। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে বয়কট করার পথই বেছে নিয়েছে টেকনিশিয়ানরা। অপরদিকে পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকেই অনির্দিষ্ট কর্মবিরতির পথে গেলেন পরিচালকেরা। আর তার জেরেই সপ্তাহের প্রথমদিনই নিঃস্তব্ধ টালিগঞ্জের শ্য়ুটিং পাড়া।
সোমবার সকাল থেকেই টালিগঞ্জের একের পর এক স্টুডিও ফাঁকা। দাসানি স্টুডিও থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান স্টুডিও কোথাও কেউ নেই। আগে যেখানে শ্যুটিংয়ের কাজের ব্যস্ততা চোখে পড়ত সোমবার ঠিক তার উল্টো দৃশ্য দেখা গেল। সিনেমার পাশাপাশি বন্ধ সিরিয়ালের শ্যুটিংও। টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও, কুদঘাটের এনটিওয়ান স্টুডিও, রিজেন্ট পার্কের দাসানি স্টুডিওতে হচ্ছে না শ্যুটিং। অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক পরিচালকদের, পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রযোজকরাও। রবিবার রাতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিরেক্টর্স গিল্ড জানিয়েছিলেন, অধিকাংশ পরিচালক সদস্যের আবেগ ও মতামতকে গুরুত্ব এবং মান্যতা দিয়ে সংগঠনের কার্যকরী সমিতি আগামী কাল ২৯ জুলাই থেকে যত দিন পর্যন্ত না পরিচালকদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত বাংলা ভাষার সমস্ত শুটিং ফ্লোরে সদস্যদের অনুপস্থিত থাকতে অনুরোধ করছে। বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার ক্ষেত্রে এই অনুরোধ প্রযোজ্য নয়।
আর সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সোমবার থেকেই সিনেমা-সিরিয়ালের শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই পরিচালকদের সই সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মতি জানিয়ে সই করেছেন, রাজ চক্রবর্তী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, অতনু ঘোষ, দেবালয় ভট্টচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। অপরদিকে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে বয়কট করার প্রসঙ্গে WATP-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ফেডারেশনের কার্যকলাপ সর্বদাই তাদের কাজ ও শিল্পের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিচালকদের এবং প্রযোজকদের স্বাধীনতার দাবি করেছেন। নিজেদের কাজ বেছে নেওয়া, কাজের টিম বেছে নেওয়ার অধিকার তাদের হাতেই থাকতে হবে। সুতরাং যতক্ষণ না সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির সমাধান হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত তাদের প্রযোজনা গুলির শ্যুটিং বন্ধ থাকবে।
পরিচালক ও ছোটপর্দার প্রযোজকদের এই সিদ্ধান্তের ফলে অথৈ জলে বাংলা সিনেমা, সিরিয়াল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের শ্যুটিং। রবিবার থেকেই সব সিরিয়ালের শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। টালিগঞ্জের টেকনিশিয়াদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন পরিচালকরা। টলিপাড়ার পরিচালকদের একাংশের দাবি, ফেডারেশনের এই স্বৈরাচার অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। প্রসঙ্গত, পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ফেডারেশন বাংলাদেশে গিয়ে শ্যুটিং করার অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদেই রাহুলকে বয়কট করার কথা বলে ফেডারেশন। রাহুল নিজে ডিরেক্টর্স গিল্ডের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রথমে গিল্ডই তাঁকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল। কিন্তু পরে তারাও মনে করে, রাহুল ভুল কিছু করেননি। ফলে সাসপেনশন তুলে নেওয়া হয়। শনিবার টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়োয় প্রযোজক সংস্থা এসভিএফের একটি সিনেমার শুটিং ছিল। পরিচালকের আসনে ছিলেন রাহুল। অভিযোগ, তাঁকে দেখেই টেকনিশিয়ানরা কাজ না-করে চলে আসেন। অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্যরা দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও শুটিং করতে পারেননি। এর পরেই নজিরবিহীন ভাবে প্রতিবাদ শুরু করেন পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতারা। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে তা নিয়ে সোমবার বৈঠকে বসবেন পরিচালকেরা।