কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় প্রয়াতপ্রধান চরিত্রে অভিনয় না করলেও, পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেই তিনি বরাবর প্রশংসা কুড়িয়েছেন। উত্তম কুমার-দিলীপ কুমারদের সঙ্গে কাজ করে সমান জনপ্রিয়তাই অর্জন করেছিলেন অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়। তাই রবিবার আচমকাই তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া এসে পড়ে টলিপাড়ায়। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন কল্যাণ। তাই অভিনয় থেকেও দূরে ছিলেন তিনি। সিনেমা থেকে সিরিয়াল সব মাধ্যমেই সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন এই অভিনেতা।
পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন কল্যাণ। ছোট থেকেই অভিনয়কে পেশা করবেন বলেই অভিনয় নিয়েই পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর প্রথম ছবি তপন সিংহের আপনজন। প্রায় ৪০০টিরও বেশি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে বাংলা সিনেমায় নিজের জন্য এক বিশেষ জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় আছে 'ধন্যি মেয়ে', 'সাগিনা মাহাতো', 'সাগিনা', 'সবুজ দ্বীপের রাজা', 'রূপবান কন্যা', 'বাইশে শ্রাবণ', 'ব্যোমকেশ বক্সী', 'নির্ভয়া', এবং 'দুই পৃথিবী'।
বাংলা ছাড়া হিন্দি ছবিতেও কাজ করেছেন কল্যাণ । সুজয় ঘোষ পরিচালিত 'কাহানি' ছবিতেও অভিনয় করেন। তপন সিংহ ও অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের প্রিয় অভিনেতা ছিলেন কল্যাণ। অভিনয় করেন সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-তেও । তাঁর সমসাময়িক অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, সন্তু মুখোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে। তবে প্রধান চরিত্রে অভিনয় না করার আক্ষেপ কোনওদিনই ছিল না তাঁর। কারণ তাঁর জনপ্রিয়তা নায়ক বা হিরোর চেয়ে কম কিছু ছিল না। একাধিক বাংলা ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতা। এক আকাশের নীচে কানাইদার চরিত্রটি আজও দর্শকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে। পা রেখেছিলেন ওটিটিতেও। ওয়েব সিরিজ ‘তানসেনের তানপুরা’য় দেখা গিয়েছে তাঁকে। অভিনয় দক্ষতাতেও সকলের মন জয় করেছিলেন কল্যাণ ।
মৃত্যুর সময় কল্যাণের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর । দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন । ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড-সহ একাধিক ব্যাধি শয্যাশায়ী করে ফেলেছিল তাঁকে। দীর্ঘদিন হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন। রোগের সঙ্গে চলছিল লড়াই । শেষ পর্যন্ত তাতেই হার মানলেন কল্যাণ । তাঁর প্রয়াণে বাংলা অভিনয় জগতে শোকের ছায়া ।