Zubeen Garg: 'সেই রাতে ভয়ে কাঁপছিলাম...' জুবিনের 'দামালপনা' আজও ভোলেননি গীতিকার প্রিয়

'চিরদিনই তুমি যে আমার', বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এক ঝড় তুলেছিল। সিনেমার গল্প থেকে গান সবেতেই সেই সিনেমা আর পাঁচটা তৎকালীন সিনেমা থেকে আলাদা ছিল। এই সিনেমারই গান 'পিয়া রে পিয়া রে'। এই গান লিখেছিলেন প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। আবার তাঁরই লেখা, 'মন মানে না', 'আয়না মন ভাঙা আয়না', 'তোমার আমার প্রেম' 'চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম'-এর মতো অসংখ্য হিট গান 'হামিং কিং' জুবিনের জন্য লিখেছিলেন প্রিয় চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement
'সেই রাতে ভয়ে কাঁপছিলাম...' জুবিনের 'দামালপনা' আজও ভোলেননি গীতিকার প্রিয়জুবিনের স্মৃতিচারণায় গীতিকার প্রিয় চট্টোপাধ্যায়।-গ্রাফিক্স:সৌমিক মজুমদার
হাইলাইটস
  • 'ওর গাড়ি চড়াটা একটা মজার অভিজ্ঞতা। ভুলতে পারব না।
  • ও গাড়ি যখন চালাত, স্পিডেই চালাত। গ্রাম বা শহর যে রাস্তাই হোক।
  • একবার রাতে ও ডাবিংয়ে যাবে। আমায় বলল, চল প্রিয় বোসো।

'হাতে কাজ প্রচুর, কিন্তু একদম মনোযোগ দিতে পারছি না। জুবিনের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠা মুশকিল।' বললেন বাংলার বিনোদন জগতের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় গীতিকার প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। জুবিন গর্গের বেশিরভাগ হিট গানই প্রিয়র লেখা। বললেন, 'তোর নাম সিনেমার বন্ধু রে গানটা ওঁর জীবনের সঙ্গে এভাবে মিলে যাবে ভাবতে পারছি না।' 

'চিরদিনই তুমি যে আমার', বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এক ঝড় তুলেছিল। সিনেমার গল্প থেকে গান সবেতেই সেই সিনেমা আর পাঁচটা তৎকালীন সিনেমা থেকে আলাদা ছিল। এই সিনেমারই গান 'পিয়া রে পিয়া রে'। এই গান লিখেছিলেন প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। 'মন মানে না', 'আয়না মন ভাঙা আয়না', 'তোমার আমার প্রেম' 'চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম'-এর মতো অসংখ্য হিট গান 'হামিং কিং' জুবিনের জন্য লিখেছিলেন প্রিয় চট্টোপাধ্যায়।

Bangla.aajtak.in-কে গীতিকার বললেন,'আমরা একটা সম্পদকে হারালাম। আমার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। ও ছোট-বড় দেখত না। ভালো লাগলেই মিশে যেত। ওর রুটিনটা ছিল অন্যরকম। রাতে কাজ করত, দিনে ঘুমোত। সিঙ্গাপুরে রাত জাগার পর দিনের বেলায় সমুদ্রে ওকে ভাবাই যায় না। ওটাই আমার বড় প্রশ্ন। যদি রাত জেগে পার্টিই হয়ে থাকে, তাহলে দিনে ও ওখানে কেন গিয়েছিল? পাশাপাশি এটাও ঠিক, ও যেটা ঠিক মনে করত, সেটাই করত। এখন কেউ ওকে ইনসিস্ট করেছিল কী না, জানি না।'
 
প্রিয় আরও বললেন, ''কলকাতায় 'দেয়া নেয়া' নামে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে জুবিনের সঙ্গে প্রথম আলাপ। 'সান রেকর্ডস'-এর সরিৎ দাশগুপ্ত আমাকে ওর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে বলেছিল, আশাজির গান লেখে প্রিয়। সেই থেকেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আমি ওর বম্বের বাড়িতেও গিয়েছিলাম। ইদানিং যোগাযোগটা কমে এসেছিল আমাদের। কারণ ও সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তবে একটা জিনিস ভালো লাগছে, যে রই রই বিনালে সিনেমার স্বপন স্বপন গানটা আগের বাংলা ভার্সনের চেনা চেনা গানটির অসমীয়া ভার্সন। যে বাংলা ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিল স্বয়ং জুবিন। আমার লেখা শব্দ ও মানে অসমীয়া গানটাতেও রয়েছে। ট্রান্সলেট বলব না, টান্সক্রিয়েশন করা হয়েছে। এটা আমার ভালো লেগেছে, যে আমার শব্দগুলো ওর সুরে বসেছিল, সেটা ওর ভালো লেগেছে বলেই অপরিবর্তিত রেখেছে।'

Advertisement

জুবিন গর্গের সঙ্গে একাধিক মজার মুহূর্তের সাক্ষী প্রিয়। বললেন, 'ওর গাড়ি চড়াটা একটা মজার অভিজ্ঞতা। ভুলতে পারব না। ও গাড়ি যখন চালাত, স্পিডেই চালাত। গ্রাম বা শহর যে রাস্তাই হোক। একবার রাতে ও ডাবিংয়ে যাবে। আমায় বলল, চল প্রিয় বোসো। আমি আর কলকাতার দুএকজন বসলাম গাড়িতে। এবার ও ডাবিংয়ে গেল। যাওয়ার সময় ঠিকঠাকই চালাল। গান-টান হয়ে যাওয়ার পর ফেরার সময় আমাদের আন্ধেরি ইস্টের রাস্তায় ঘোরাতে নিয়ে গেল। ও থাকত মহাকালী কেভ-এ। বম্বেতে রাতেও রাস্তায় লোক থাকে। দুটো পর্যন্তও রাস্তা জমজমাট থাকে। ব্যাপক স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিল জুবিন। আমরা গাড়িতে বসে ভয়ে কাঁটা হয়েছিলাম। লোকজন ভয় পাচ্ছিল, রাগ প্রকাশ করছিল মারাঠি ভাষায়। জুবিন সেগুলো দেখে মজা পাচ্ছিল।'

জুবিনের অকালমৃত্যু নিয়ে গীতিকার বললেন, 'কিছু শোক স্তব্ধ করে দেয়। আমি চুপ হয়ে গিয়েছিলাম খবরটা পেয়ে। আমি গরিমাকেও ফোন করিনি। কী বলব ফোন করে। আমি যতই লেখালেখি করি, এসব ক্ষেত্রে ভাষা হারিয়ে যায়। আমার খুব রাগ হচ্ছিল। খালি মনে হচ্ছিল, নিজেকে একটু যত্ন করতে পারল না। একবার তো সাগরে গেল, ফিরেও এল। আবার কেন নামল? যার সুইমিং পুলে পর্যন্ত নামা বারণ, সে সাগরে সাঁতার কাটতে গেল! ওর আশেপাশে যারা ছিল, তাদের ওকে ভাঙিয়েই জীবন চলত। যাকে ভাঙিয়ে জীবন চলত, তার একটু যত্ন নেব না? এটা কী করে হয়।'


 

POST A COMMENT
Advertisement