রই রই বিনালের পোস্টার।-ফাইল ছবিঅসমে এখন একটাই সুর, ‘রই রই বিনালে’। প্রয়াত জুবিন গর্গের শেষ অসমীয়া সিনেমাকে ঘিরে গোটা রাজ্য এখন আবেগ ও শ্রদ্ধার জোয়ারে ভাসছে। ৩১ অক্টোবর মুক্তির আগে থেকেই ছবিটিকে ঘিরে ভক্তদের উন্মাদনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রি-বুকিং শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গুয়াহাটির প্রায় সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
ভক্তদের কাছে এই চলচ্চিত্র শুধুই বিনোদন নয়, বরং প্রিয় শিল্পীর প্রতি চূড়ান্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'এটা শুধু একটা ছবি নয়, জুবিন দা’র আত্মার সঙ্গে শেষ সংযোগ।'
টিকিট উধাও, গুয়াহাটিতে ‘জুবিন ফিভার’
গত শুক্রবার সন্ধেয় প্রি-বুকিং শুরু হতেই রাতের মধ্যেই সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে ‘হাউসফুল’ বোর্ড ঝুলে যায়। অনেক ভক্ত সিনেমাটিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রদর্শনের দাবি তুলেছেন, মুম্বইয়ের ‘মারাঠা মন্দিরে’ শাহরুখ খানের ‘ডিডিএলজে’-এর মতো স্থায়ীভাবে চালানোর আবেদনও করেছেন।
টিকিটের দাম বাড়ল, শুরু বিতর্ক
ছবির মুক্তির আগে আবেগপূর্ণ পরিবেশে আচমকা টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। গুয়াহাটির বেশ কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্স টিকিটের দাম ১০০-১৫০ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, যার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে ভক্তরা।
টিম ‘রই রই বিনালে’ পরে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, এটি কোনও বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং ‘ডাইনামিক প্রাইসিং সিস্টেম’ অনুযায়ী বেড়েছে। এক শোয়ের ৬০ শতাংশ আসন পূর্ণ হলে দাম বাড়ে, আর ৮০ শতাংশের পর আরও বৃদ্ধি পায়।
এই ঘটনাকে ঘিরে অল অসম সিনেমা হল মালিক সমিতি (ACHOA) জানিয়েছে, 'আমরা টিকিটের দাম বাড়াইনি। কেউ আলাদা ভাবে বাড়িয়ে থাকলে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।' তবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘রই রই বিনালে’ চলাকালীন কোনও সিনেমা হলে হিন্দি ছবি দেখানো হবে না। তাঁদের বক্তব্য, 'এই সিনেমা আমাদের আবেগের প্রতীক, এটি কেবল একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি আসামের আত্মার প্রতিফলন।'
অসমীয়া সিনেমার অস্তিত্বের লড়াই
ACHOA অভিযোগ করেছে যে রাজ্যে হিন্দি চলচ্চিত্র ব্যবসার ওপর 'অ-অসমীয়া লবি'র নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে, যার ফলে স্থানীয় প্রযোজকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা স্থানীয় চলচ্চিত্রের ন্যায্য মুনাফা বণ্টন এবং আঞ্চলিক নীতি জোরদারের দাবি তুলেছে।
শ্রদ্ধা, আবেগ ও ইতিহাস তৈরির পথে
জুবিন গর্গের মৃত্যুর পর থেকে গোটা অসম এখন যেন এক আবেগময় অভিযাত্রায় অংশ নিচ্ছে। ভক্তদের চোখে ‘রই রই বিনালে’ কেবল একটি সিনেমা নয়, এটি এক যুগের সমাপ্তি ও এক কিংবদন্তির অমর স্মৃতি।