Aindrila Sharma Last journey: টানা ২০ দিন জীবন-মরণের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মানলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা( Aindrila Sharma)। রবিবার দুপুর ১২.৫৯-এ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মাত্র ২৪ বছরের এই সদ্য তরুণী অভিনেত্রী।সকালেই পরিবারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল হাসপাতাল থেকে। ঐন্দ্রিলার শেষ যাত্রায় হাজির ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু, পরিবারের লোকজন, কলিগরা । ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর কলকাতার কুঁদঘাটের আবাসনে। সেখান থেকে অভিনেত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতে। তার পর সোজা কেওড়াতলা। সেখানেই শেষকৃত্য হল ঐন্দ্রিলার।
শেষ মুহূর্তে শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন ঐন্দ্রিলার স্টুডিওপাড়ার কিছু বন্ধু। মিশমি দাস, ঋজু বিশ্বাস, রাজ চক্রবর্তী, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, উষষী চক্রবর্তী, চাঁদনি সাহা, শ্রীতমা দেরা। সারাক্ষণ সঙ্গে ছিলেন তাঁর লড়াইয়ে আগাগোড়া তাঁর পাশে থেকে আগলে রাখা সব্যসাচী চৌধুরীও। তিনিই এদিন মুখাগ্নি করেন তাঁর ছায়াসঙ্গীর।
ঐন্দ্রিলা শর্মার অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীরা শোকবার্তা পাঠান৷ দু-দুবার ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের বিরুদ্ধে যুঝে সাহসের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সবেমাত্র জীবন শুরু করা তরুণী। যাঁর যুদ্ধকে কুর্নিশ করেছে দাদাগিরি থেকে দিদি নম্বর ওয়ানের মঞ্চ থেকে শুরু করে আপামর বাঙালি অনুরাগীরা। তাঁরাই আজ যেন শেষবারের মতো ওই সাহসিনীকে দেখতে ছুটে এসেছিলেন হাওড়ার হাসপাতালে।
শনিবার দুপুরের পর থেকে বারে বারে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। ফলে আরও সঙ্কটজনক হয়ে যায়। দেওয়া হয় সিপিআর৷ কিন্তু একের পর এক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ধাক্কা সামলাতে পারলেন না। হাল ছাড়লেন রবিবারের সকালে। কাছের, দূরের সব মানুষের ভালোবাসার বাঁধন ছাড়িয়ে এক অন্য জীবনে পাড়ি দিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। রেখে গেলেন আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসা, সাহসিকতার মোড়কে মোড়া এক রূপকথাকে।
১ নভেম্বর থেকে আচমকা ব্রেন স্ট্রোক হয়ে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। এর আগে দু'বার ক্যান্সারকে হারিয়ে কাজে ফিরেছিলেন অভিনেত্রী। প্রায় বছর সাতেক আগে ২০১৫ সালে শিরদাঁড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। বছরভর দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, গত বছরের শেষে জানা যায় দ্বিতীয়বার ক্যান্সারকে হারিয়েছেন তিনি।
একাধিকবার ঝুঁকিপূর্ণ সার্জারির পর চলেছে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন। তবুও মুখের হাসি কখনও অমলিন হতে দেখেননি কাছের মানুষেরা। বারবার পড়ে গিয়েও, গা ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও শেষ রক্ষা হল না এবার। আর এই সম্পূর্ণ জার্নিতে তাঁর পরিবার ছাড়াও পাশে ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী। গত কয়েকদিন ধরে নেটপাড়ায় আলোচনায় ছিলেন ঐন্দ্রিলা- সব্যসাচী। একদিকে যেমন অভিনেত্রীর জন্য প্রার্থনা করেছেন সকলে, সেরকম প্রশংসা- শুভেচ্ছায় ভরিয়েছেন জুটিকে। অনেকেই লিখেছেন ঐন্দ্রিলার প্রতি সব্যসাচীর প্রেম দেখে তারা আবার বিশ্বাস করা শুরু করেছেন ভালোবাসায়।
বহরমপুরের মেয়ে ঐন্দ্রিলা 'ঝুমুর' ধারাবাহিকের মাধ্যমে টেলিভিশনে পা রাখেন। এই ধারাবাহিকে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সব্যসাচী। সেখান থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব ও পরে সম্পর্কে। 'জিয়ন কাঠি' ধারাবাহিকে জাহ্নবী চ্যাটার্জী চরিত্রে সকলের মন জয় করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজ ও অরিজিনালসে অভিনয় করেছেন তিনি। ব্রেন স্ট্রোক না হলে, গোয়াতে একটি নতুন ওয়েব সিরিজের শ্যুট করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তা আর হল না। এবছর টেলি আকাদেমির তরফে অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যু সংবাদে শোকের ছায়া নেমে সর্বত্র।