এখনও হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। জীবনযুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন অভিনেত্রী। দেখা যাচ্ছে তাঁর সেরে ওঠার প্রার্থনা। সকলেই জানতে চাইছেন, 'এখন কেমন আছেন ঐন্দ্রিলা?'
শুক্রবার রাতে অভিনেত্রীর শারীরিক অবস্থার স্থিতি জানিয়ে একটি লম্বা পোস্ট করেন সব্যসাচী চৌধুরী। যা পড়ে, কিছুটা আশার আলো দেখছেন অনেকে।
শনিবার দুপুরের হাসপাতাল সূত্রের খবর অনুযায়ী, এখনও ভেন্টিলেশন সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন ঐন্দ্রিলা। নোরাড সাপোর্টে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।
ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি এখনও। চিকিৎসায় কিছুটা সাড়া দিচ্ছেন তিনি, তবে এখনও জ্ঞান ফেরেনি।
কোমায় থাকাকালীন, কখনও অঙ্গ নড়াচড়া হতে পারে সাময়িক। তাই এখনই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না চিকিৎসকেরা।
এখনও বিপদ কাটেনি। তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, নতুনভাবে স্বাস্থ্যের অবনতি না হওয়াই, অনেকটা ইতিবাচক নিঃসন্দেহে।
বৃহস্পতিবার শহরের এক সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের স্নায়ুরোগ চিকিৎসকরা দেখে গিয়েছেন অভিনেত্রীকে। গ্লাসগো কোমা স্কোর স্কেলের (Glascow Coma Score Scale) রিপোর্ট ভাল ছিল না ঐন্দ্রিলা শর্মার।
কোনও রোগীর মান নির্ধারিত হয়, চোখের নড়াচড়া, অঙ্গ সঞ্চালনা, মৌখিক প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে। ঐন্দ্রিলার E1VtM1 অর্থাৎ গ্লাসগো কোমা স্কেল-র মাত্রা ছিল ৫-র কম। একজন সুস্থ মানুষের গড়ে গ্লাসগো কোমা স্কেল-র মাত্রা থাকা উচিত ১৫-র মধ্যে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে সব্যসাচী লেখেন, "কয়েক হাজার মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্য এতখানি লেখা প্রয়োজন ছিল...পরশুদিন সকালে ঐন্দ্রিলার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, চোখের সামনে দেখলাম ওর হার্টরেট ড্রপ করে চল্লিশের নিচে নেমে তলিয়ে গেলো, মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক লাইন, কান্নার আওয়াজ, তার মাঝে ডাক্তাররা দৌড়াদৌড়ি করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন ফের ফিরে এলো বিভিন্ন সাপোর্টে, হার্টবিট ১২০। তারপরই কে যেন একটা অদৃশ্য বালিঘড়ি উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলো, ঝুরো বালির মতন সময় ঝরে পড়ছে, সাথে স্থিরভাবে একটা একটা করে হার্টবিট কমছে, কমছে রক্তচাপ, কমছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস।"
তিনি আরও লেখেন, "ডাক্তাররা জবাব দিয়েছেন, হসপিটালের নিচে পুলিশ পোস্টিং, বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষ এসে সমবেদনা জানাচ্ছেন, কিছু উত্তেজিত ইউটিউবার এবং মিডিয়ার লোকজন নিচে ঘোরাঘুরি করছেন। শেষ চেষ্টার জন্য অন্য হাসপাতালের এক নামকরা নিউরোসার্জনকে ডেকে আনা হলো, তিনি খানিক নাড়াচাড়া করে জানালেন যে “ও চলে গেছে অনেক আগেই, শুধুশুধু এইভাবে আটকে রাখছেন কেন? এমনিতেও কালকের মধ্যে সব থেমেই যাবে। লেট্ হার গো পিসফুলি।"
ছোটপর্দার বামাক্ষ্যাপা আরও লেখেন, "রাত বাড়লো, দাঁতে দাঁত চিপে একটা ছোট্ট অসাড় হাত ধরে বসে আছি, চোখদুটো অনেক আগেই ডাইলেটেড হয়ে গেছে, একটা করে বিট কমছে আর অসহায়তা বাড়ছে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আগেই দেখা করে গেছে। লোকজন মাঝেমধ্যেই ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে যে ‘আজ রাতেই হবে? নাকি সকালে আসবো?’ ইতিমধ্যে ফেসবুকের কল্যাণে কারা যেন মাঝরাতে ছড়িয়ে দিয়েছে যে ঐন্দ্রিলা আর নেই। বানের জলের মতন হুহু করে ফোন ঢুকতে শুরু করলো, সৌরভ শুটিংয়ে বাইরে গেছে, দিব্য একা সামলাতে পারছে না। অগত্যা ঠেকা দেওয়ার জন্য আমি পোস্ট করতে বাধ্য হলাম, মিনিট কুড়ির মধ্যে আবার সব শান্ত। সকাল থেকে রক্তচাপ কমতে শুরু করলো, ওর বাবা-মা কে ডাকলাম, বাকিদের খবর দিলাম। গতকাল আর বাধা দিইনি কাউকে, সারাদিন ধরে কাছের মানুষরা এসেছে, ওকে ছুঁয়েছে, ডুকরে কেঁদেছে। কত স্মৃতিচারণ, কত গল্প।"
অভিনেতা লেখেন, "বিকেলের পর দেখলাম হাত, পা, মুখ ফুলছে ঐন্দ্রিলার, শরীর ঠান্ডা। হার্ট রেট কমতে কমতে ৪৬, বিপি ৬০/৩০। আগের দিনের ডাক্তারের কথাটা কেবলই আমার মাথায় ঘুরছিলো,ওর শরীরটাকে এভাবে আটকে রাখার জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে, থাকতে না পেরে ওর মাকে বললামও যে এত কষ্ট আর দেখতে পারছি না, কি দরকার ছিল এত কিছু করার, শান্তিতে যেত। মুখে বলছি বটে, কিন্তু ছাড়তে কি আর পারি, মায়ার টান বড় কঠিন। ঠিক রাত আটটায় যখন আমি বিমর্ষমুখে নিচে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ হাত নড়ে ওঠে ঐন্দ্রিলার। খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি হার্টরেট এক লাফে ৯১, রক্তচাপ বেড়ে ১৩০/৮০, শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। কে বলে মিরাকেল হয় না? কে বলে ও চলে গেছে? এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এলো মেয়েটা। গেছে বললেই ও যাবে না কি, যেতে দিলে তো যাবে। এই মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা একপ্রকার সাপোর্ট ছাড়াই আছে, এমন কি ভেন্টিলেশন থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আগে ক্লিনিক্যালি সুস্থ হোক, নিউরোর কথা পরে ভাববো।"