বর্তমান যুগে, এক সময়ের বনেদি পরিবারগুলি বেশিরভাগই আলাদা। পরিবারের সদস্যরা সারা বছর একসঙ্গে না থাকলেও মিলিত হয় বাড়ির দুর্গাপুজোয়। যাঁদের সকলের জীবনে রয়েছে আলাদা আলাদা 'ক্রাইসিস'... আর সেই সমস্যা কীভাবে যৌথভাবে সমাধান করেন তাঁরা, তাই 'একান্নবর্তী'-র সারমর্ম।
বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো, পরিবার, প্রেম ও নস্ট্যালজিয়া নিয়ে 'একান্নবর্তী, ৫১ নয় এক অন্ন' ছবির গল্প বুনেছেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক (Mainak Bhaumik)। এই ফ্যামিলি ড্রামায় মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন অপরাজিতা আঢ্য ও সৌরসেনী মৈত্র। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অলকানন্দা রায় ও অনন্য সেন। ১৯ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে 'একান্নবর্তী'। আজতক বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন 'একান্নবর্তী'-র মালিনী ওরফে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য।
আজতক বাংলা: প্রায় এক বছর পর প্রেক্ষাগৃহে আপনার ছবি মুক্তি পেল। টেনশন হচ্ছে?
অপরাজিতা: এতদিন কাজ করার পর, নতুন করে আর টেনশন হয় না। তবে যে কোনও ছবি নিয়েই একটা আশা থাকে। আর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর এটা একটা অন্য রকমের ভাল লাগা। সম্প্রতি আমি নিজে সিনেমা হলে একটা হিন্দি ছবি দেখলাম। দর্শকরা আসছেন দেখে, আমি এই ছবিটা নিয়েও আশাবাদী।
প্রশ্ন: 'একান্নবর্তী'-র গল্প একটি পরিবারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। আপনারও তো যৌথ পরিবার। সেই মুহূর্তগুলির ছোঁয়া পাবেন দর্শকরা ছবিতে?
অপরাজিতা: এই ছবিতে কিন্তু বিশাল কিছু একটা নতুন গল্প নেই। পুরোটাই, অনেকগুলি মুহূর্ত নিয়ে বানানো একটা ছবি। বাড়িতে দুর্গাপুজো হচ্ছে। অথচ পরিবারের কেউ ভাল নেই। সকলে নিজের ক্রাইসিস নিয়ে ভুগছে। সকলে মিলে সেই সমস্যাগুলি আলোচনা করে একটা সমাধান করলে, তবেই মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এটাই 'একান্নবর্তী' -র মূল গল্প।
প্রশ্ন: মালিনী চরিত্রের সঙ্গে, অপরাজিতাকে কতটা মেলাতে পেরেছেন?
অপরাজিতা: আমি যৌথ পরিবারের মেয়ে। বিয়েও হয়েছে যৌথ পরিবারেই। ছবিতে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলির সঙ্গে আমি খুব পরিচিত। নিজের জীবনে এরকম বহু ঘটনা আমি দেখেছি, প্রতি নিয়ত দেখছি... এই ছবিটা প্রতিটা মেয়ের গল্প, এটা আমাদের গল্প।
প্রশ্ন: আপনাকে বেশিরভাগ ছবিতেই চেনা জঁনরের মধ্যেই দেখা যায়। এটাই ভাল লাগে না এই ধরণের কাজ 'কমফোর্ট জোন'?
অপরাজিতা: যে কোনও চরিত্র করতে গেলেই তো সেটার উপর এক্সপেরিমেন্ট করতে হয়। আমাকে নিয়ে যে পরিচালক কাজ করেন, তিনি একটা জঁনর ভাবেন, যেটায় আমাকে নিয়ে কাজ করতে তাঁর সুবিধা হবে। আমি সবই করতে পারি। তবে হ্যাঁ আমারও কিছু লিমিটেশন আছে।
প্রশ্ন: কী ধরণের লিমিটেশনের কথা বলছেন?
অপরাজিতা: আমি খুব খোলামেলা পোশাক পরে পাঠ করতে পারব না। কিংবা খুব ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে বা নেগেটিভ চরিত্র অভিনয় করব না। এবার শুধুই পজিটিভ চরিত্র করতে গেলে, নিজের জঁনরের মধ্যে থেকেই প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে এবং সেটা ধরে রাখতে হবে।
প্রশ্ন: মৈনাক ভৌমিকের সঙ্গে এটা আপনার চতুর্থ ছবিতে কাজ ছিল। বন্ডিং কেমন দু'জনের?
অপরাজিতা: ইয়ং পরিচালক, যাঁদের সঙ্গে আমি কাজ করতে খুব পছন্দ করি, তার মধ্যে মৈনাক একজন। কোনও কাজ করার সময় আমাদের রাত দেড়টা -দুটো অবধি আলোচনা হয়। ও আমায় বলে কীভাবে ছবিটা বানাতে চায়, আমি ওঁকে বলি আমি কীভাব ছবিটা করতে চাই। এরপর দু'জনে একটা মাঝামাঝি জায়গায় আসি। আমি যেটা বলি ওঁকে সেটে গিয়ে, যে এভাবে কাজটা করতে চাই, ও সেটা মেনে নেয়। আবার নিজের ইনপুটটাও দেয়।
প্রশ্ন: ছবিতে তো সৌরসেনী, অনন্যার মতো ইয়ং ব্রিগেডও রয়েছে। ওঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
অপরাজিতা: ওঁরা দু'জনেই খুব মিষ্টি এবং অসম্ভব ভাল অভিনেতা। কিছু বলার দরকার হয় না ওঁদের, এত ভাল অভিনয় করে। আমি যদি বলি এই দৃশ্যটা এরকম করলে ভাল হবে, ওঁরা এক কথায় মেনে নেয়। এমনকী একসঙ্গে বসেও সিন নিয়ে আলোচনা করে তারপর রিহার্সাল করেছি আমরা।
প্রশ্ন: টেলিভিশন থেকে জার্নি শুরু করেছিলেন। ছোট পর্দার দর্শকরা তো আপনাকে মিস করে...
অপরাজিতা: (হেসে) আমিও টেলিভিশনের দর্শকদের মিস করি। সেরকম ভাল চরিত্র পেলে অবশ্যই ফিরব। টেলিভিশনের দর্শকরা একজন অভিনেতাকে যে জায়গায় পৌঁছে দেয়, সেটা অন্য কোনও মাধ্যম দিতে পারে না। আমার থেকে সেই সময় অনেক মানুষ নৈতিক সমর্থন পেয়েছে। যখন 'কুরুক্ষেত্র' বা 'জল নূপুর' করতাম, বহু মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখেছি ধারাবাহিকগুলি দেখে।
প্রশ্ন: বহু পরিচালক বর্তমানে কাস্টিং করার সময় ভাবছেন আপনাকে ছাড়া সেই চরিত্রটা আর কাউকে মানাবে না। ২৫ বছর ইন্ড্রাস্ট্রিতে থাকার পর গর্ব হয়, নাকি কিছুটা তৃপ্তি?
অপরাজিতা: ২৫ বছর ধরে কাজ করেও যদি পরিচালকদের আত্মবিশ্বাস না জন্মায়, তাহলে সেই অভিনেতা কাজটাকে আয়ত্তে আনতে পারেনি, মনে করতে হবে। এখন যে অনেকে ভাবছেন যে অপরাজিতাকে ছাড়া এই চরিত্রটা হবে না, সেটা তো আমার এতদিনের অধ্যাবসার ফল।