আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ- খুনের ঘটনার জেরে এখনও ধুন্ধুমার শহর- শহরতলি। জেলায় জেলায় চলছে বিক্ষোভ। সুবিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে, প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের কর্মবিরতি চলছে এখনও। গর্জে উঠেছে দেশবাসী। এমনকী প্রতিবাদে সরব হয়েছেন প্রবাসীরাও। লক্ষ লক্ষ মানুষের গলায় শোনা যাচ্ছে, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' কিংবা 'জাস্টিস ফর আরজি কর'।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিও এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে প্রতিবাদে নেমেছে। তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য, 'দাবি এক দফা এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ'। কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে নামে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। নবান্ন অভিযানকে সমর্থন জানায় বিজেপি। এদিকে এদিন কার্যত রণক্ষেত্র পরিস্থিতি দেখা যায় হুগলি পারের দুই জেলা হাওড়া ও কলকাতায়।
অশান্তি নিয়ন্ত্রণে করতে কমব্যাট ফোর্স, ব়্যাফ, কিউআরটি, এইচআরএফএস, জলকামান রাখা হয় পুলিশের তরফে। হাওড়া ব্রিজ, সাঁতরাগাছিতে কাঁদানে গ্যাসের সেল, জলকামান ছোড়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যারিকেড ভাঙে ও ইট ছোড়ে আন্দোলকারীরা। হাওড়া ময়দানে আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটে মাথা ফাটে পুলিশের। অনেক আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ ডাক দিয়েছিল নবান্ন অভিযানের। এদিকে আন্দোলনকারীদের অনেকেই ছাত্র- ছাত্রী ছিলেন না বলেই দাবি রাজ্য। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এরকম রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরিকে ভাল চোখে দেখেননি অনেকেই। এই ঘটনার নিন্দার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তীব্র নিন্দা করে নিজের সোশ্যাল পেজে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন অপরাজিতা আঢ্য। অভিনেত্রী লেখেন, "ছাত্র সমাজের ডাক মানে হল শিক্ষার ডাক, শিক্ষিতের ডাক ,আলোর ডাক, ভিতরের অন্ধকার মুছে ফেলে আলোর উন্মোচনের ডাক, সমাজকে সচেতন করে শীত ঘুম ভাঙ্গানোর ডাক। নূতন যৌবনের দূত দের ডাক। তারা বুক পাততে জানে তারা পুলিশকে ঢিল ছুঁড়তে পারে এটা আমি বিশ্বাস করি না। যারা ঢিল ছোঁড়ে তারা কখনও ছাত্র সমাজ হতে পারে না। সত্যিই যারা ছাত্র সমাজ এবং যারা সেই সমাজের প্রতিমূর্তি এটা তাদের কলঙ্কিত করা এবং কলুষিত করা। জানি আমার এই বক্তব্যের বিপক্ষে যুক্তি দেওয়ার প্রচুর লোক আছেন কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করি আমাদের নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।"
অপরাজিতা আরও লেখেন, " যারা সক্রিয়ভাবে জাস্টিস ফর আরজি কর আন্দোলনটা করছেন,যে ছাত্র সমাজ করছে যে মেডিকেলের ছাত্ররা করছেন,বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যারা আন্দোলন করছেন, যে সাধারণ মানুষ আন্দোলন করছেন, বিশেষভাবে সক্ষম যে সমস্ত মানুষরা আন্দোলন করছেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে আন্দোলন করছেন, যারা শুধুই বিচারের স্বপক্ষে, তাদের আবেগকে ধাক্কা দেওয়ার অধিকার কারো নেই ,সেটা কোন রাজনৈতিক দলেরও নেই ,সেটা কোন মাধ্যমের ও নেই। সেটা কোনো মানুষেরও নেই। এই ধরনের আচরণ শুধুই মনুষ্যত্বের অপমান।"
প্রসঙ্গত, নবান্ন অভিযানে ইটের ঘায়ে দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তী। বুধবার ফেসবুক পেজে এই তথ্য জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে কর্মরত ছিলেন ওই ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। আচমকাই তাঁর চোখে এসে লাগে ইট। জখম হয় তাঁর কর্নিয়া এবং রেটিনা। এর ফলে সারাজীবনের মতো দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন কিনা, তা জানা যাবে আরও এক সপ্তাহ পরে। নবান্ন অভিযানে পুলিশি লাঠিচার্জের অভিযোগে বুধবার রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় বিজেপি। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, কোনও বাংলা বনধ হবে না এবং সমগ্র রাজ্যে স্বাভাবিক জনজীবন সচল থাকবে। এদিন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঝামেলা- অশান্তি নজরে আসে।