
বৈষম্যের শিকার বাংলা ছবি। কয়েক বছর ধরেই বাংলা ছবি নিজের রাজ্যেই কদর পায় না। বলিউডের বিগ বাজেট ছবির দাপটে প্রাইম টাইমে শো দেওয়া হয় না বাংলা ছবিকে। ফলে মুক্তির পর দ্বিতীয় সপ্তাহ পৌঁছানোর আগেই প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বহু ছবি। এরকম একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে মিলিতভাবে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিং রানে, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়রা। এরপর ৭ অগাস্ট) নন্দনে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বৈঠকের ডাক দেন প্রসেনজিৎদের। এদিন গোটা বিষয় নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা হয়। বৈঠক সফল হয় এবং মন্ত্রী জানান, "বাংলায় বাংলা সিনেমাই প্রাধান্য পাবে।"
রাজ্যে সিনেমা হলগুলিতে বাংলা ছবির প্রাইম টাইমে শো পাওয়া নিয়ে আজ (বুধবার) ফের অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে টলিপাড়ার সদস্যদের বৈঠক হয় নন্দনে। এরপর রাজ্যের তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়। যেখানে বলে দেওয়া আছে বেশ কিছু নিয়ম। এবার থেকে, প্রতিটি সিনেমা হলে এবং এই রাজ্যে অবস্থিত প্রতিটি মাল্টিপ্লেক্সের সমস্ত স্ক্রিনে (প্রতিটি স্ক্রিনে) ৩৬৫ টি প্রাইম টাইম শো/স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলকভাবে চালাতে। অর্থাৎ বছরের ৩৬৫ দিন রোজ কমপক্ষে একটি করে বাংলা শো রাখতে হবে। প্রাইম টাইম শো অর্থাৎ বিকেল ৩:০০ টা থেকে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত।
একই সময় বাংলা ছবি ও হিন্দি ছবি মুক্তি পেলে, এ রাজ্যে টলিউডকেই পিছনে ফেলে দেয় বলিউড। প্রাইম টাইমে শো দেওয়া হয় না বাংলা ছবিকে। এই সমস্যার সমাধানের আশায় একজোট হন টলিউড তারকারা। সেদিনের বৈঠকের পরে দেব বলেন, "সমস্ত ডিস্ট্রিবিউটর ও এক্সিবিটর অর্থাৎ সিনেমা হলের মালিকদের ধন্যবাদ জানাই। হিন্দি ছবি এলেই বলে বাংলা ছবি চালাতে দেব না। আমাদের মনে হয় এটা বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ এই নিয়ম ভারতবর্ষের কোথাও নেই। দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রি হোক পঞ্জাব, এই নিয়ম কোথাও নেই। আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইছে। এটা আমি ফেস করেছি 'টনিক' মুক্তির সময় '৮৩' এসেছিল।"
তিনি যোগ করেন, "আজ 'ধূমকেতু'-র সময় আবার একই জিনিস হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে যৌথভাবে ঠিক করলাম এই 'নো শো শেয়ারিং' শব্দটাই বন্ধ হবে বাংলায়। বাংলায় বাংলা ছবি চালাতে হবে। যেই ছবিই আসুক না কেন। তাদেরতাও চলুক, আমাদেরতাও চলুক। আমরা যেন জায়গাটা পাই নিজেদের প্রমাণ করার জন্য। আমার শেষ ছবি খাদান ব্লকবাস্টার হওয়ার পরও আমায় এই লড়াইটা করতে হচ্ছে। তাহলে ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টররা কী করবেন। এই লড়াইটা ধূমকেতুর না, এটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রির লড়াই।"
প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ অগাস্ট মুক্তি পাবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি 'ধূমকেতু'। যা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে। অপরদিকে, ১৫ অগাস্ট মুক্তি পাচ্ছে হৃত্বিক রোশন ও কিয়ারা আদবাণীর 'ওয়ার ২'। এই ছবি ডিস্ট্রিবিউটাররা শর্ত রেখেছিলেন যে, তারা এ রাজ্যে কোনও বাংলা ছবির সঙ্গে শো ভাগ করে নেবেন না। এরপরই গোটা বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে একত্রে চিঠি লেখেন টলিউডের অভিনেতা- পরিচালক- প্রযোজকরা।