scorecardresearch
 

Exclusive Saswata Chatterjee: 'বাহুবলীর সেটে শুটিং, বড় পর্দায় না দেখলে খুব মিস করবেন', হবু-গবু নিয়ে জানালেন শাশ্বত

তাঁর পর পর দুটি সিনেমা দেখলে চরিত্রের কোনও মিল পাওয়া যায় না। কথা বলার ভঙ্গি থেকে হাঁটাচলা, সব কিছু পাল্টে ফেলেন। বার বার ভাঙেন, বার বার গড়েন নিজেকে। তিনি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee)। দীর্ঘ অপেক্ষার পর হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী (Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri) মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা হলে। যা নিয়ে রীতিমতো এক্সাইটেড টলিউডের সকলের প্রিয় 'অপু দা' এবং সিনেমার রাজা হবুচন্দ্র। আজতক বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন অনেক অজানা কথা।

Advertisement
রাজা হবুচন্দ্রের বেশে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় রাজা হবুচন্দ্রের বেশে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
হাইলাইটস
  • বার বার ভাঙেন, বার বার গড়েন নিজেকে
  • তিনি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা হলে
  • যা নিয়ে রীতিমতো এক্সাইটেড টলিউডের সকলের প্রিয় 'অপু দা' এবং সিনেমার রাজা হবুচন্দ্র।

তাঁর পর পর দুটি সিনেমা দেখলে চরিত্রের কোনও মিল পাওয়া যায় না। কথা বলার ভঙ্গি থেকে হাঁটাচলা, সব কিছু পাল্টে ফেলেন। বার বার ভাঙেন, বার বার গড়েন নিজেকে। তিনি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee)। দীর্ঘ অপেক্ষার পর হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী (Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri) মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা হলে। যা নিয়ে রীতিমতো এক্সাইটেড টলিউডের সকলের প্রিয় 'অপু দা' এবং সিনেমার রাজা হবুচন্দ্র। আজতক বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন অনেক অজানা কথা।


প্রশ্ন: এতদিন দেব (Dev) যে সমস্ত ছবি প্রযোজনা করেছেন সেখানে তিনি নিজেই মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। এই প্রথমবার শুধুমাত্র প্রযোজক দেব-কে (Dev Adhikari) দেখা গেল। প্রযোজক হিসাবে তাঁকে কত নম্বর দেবেন?

শাশ্বত: একশোয় একশো। তার কারণও আছে। প্রযোজক মানে চেয়ারে বসে হুকুম করেনি। ইউনিটের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করেছে দেব। প্রপ কোথায় বসছে, কোনটা বাঁকা আছে, কোনটা সোজা করতে হবে, পোশাক থেকে খাওয়া-দাওয়া সব কিছুতেই ভীষণ নজর ছিল। অভিনয় বাদ দিয়ে একটা ছবিতে যা যা করা যায় সব করেছে। কাজের প্রতি ভীষণ প্যাশন না থাকলে এটা করা সম্ভব নয়।


প্রশ্ন: একটা জেনারেশনের কাছে এই গল্পটা একটা নস্ট্যালজিয়া। এখনকার বাচ্চারা এই গল্পের সঙ্গে হয়তো রিলেট করে না। ইংরেজিতে সিন্ডেরেলা থেকে স্নো হোয়াইট, সব সিনেমার পর্দায় দেখা গিয়েছে। কোথাও গিয়ে আপনার মনে হয় বাংলার এই রূপকথার ভাণ্ডার ব্রাত্য থেকে গিয়েছে?

শাশ্বত: আমরা এই গল্প শুনে ঘুমোতে যেতাম একটা সময়। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা যে এগুলো পড়ে না, এর জন্য বাচ্চাদের দায়ী করলে ঠিক হবে না। হ্যারি পটার বা স্নো হোয়াইট পড়লে যে ঠাকুরমার ঝুলি পড়া যাবে না এমনটা তো নয়! কিন্তু কোথআও গিয়ে ইংরেজির প্রতি লালায়িত হওয়া এর জন্য দায়ী বলে মনে হয়। ইংরেজি পড়ুক, কেউ তো বারণ করছে না, কিন্তু বাংলা ভুলে পড়তে হবে এটাকে সমর্থন করি না। সে দিক থেকে দেখলে প্রত্যেক বাবা-মায়েদের উচিত বাচ্চাদের সিনেমা হলে নিয়ে এই ছবিটা দেখানো উচিত। তারা দেখুক, আগের প্রজন্ম কী পড়ে বড় হয়েছে। আর তারা কী কী মিস করছে এগুলো না পড়ে বা দেখে। আমার মনে হয় বাচ্চারাও ভীষণ এনজয় করবে। হাতি-ঘোড়া, অত বড় সেট, একটা ভিসুয়াল ট্রিট। এটা কিন্তু একেবারে বড় পর্দার ছবি। ট্রেলার লঞ্চের দিন যারা হলে ট্রেলারটা দেখেছেন তারা ভালো বুঝবেন, যে মোবাইলে বা টিভির পর্দায় অনেক কিছু তাদের চোখে ধরাই পড়বে না। বড় পর্দার ১০০ ভাগের এক ভাগ মজাও পাচ্ছি না।

Advertisement


প্রশ্ন: ট্রেলার দেখার পর অনেকেই সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) সিনেমার সঙ্গে বিশেষ করে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার জঁরে মিল খুঁজছেন। তুলনা করছেন। আপনি এটাকে কী ভাবে দেখছেন?

শাশ্বত: তুলনা করা ঠিক হবে না। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা আমরা দেখেছিলাম বলেই আমরা আজ এ রকম ভাবে ভাবতে পারছি। ছোটবেলায় যখন গুগাবাবা (Goopy Gyne Bagha Byne) বা হীরক রাজার দেশে (Heerak Rajar Deshe) দেখেছি তখন তার এক রকম মানে বুঝেছই। ঘোড়া, উট, আকাশ থেকে রসগোল্লা পড়ছে। এখন যখন দেখি তখন তার মানে সম্পূর্ণ আলাদা। এখন বুঝতে পারি ভেতরে কী বলে আছে। সেটা এই সিনেমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাচ্চারা এবং বড়রা দু ভাবে এটাকে বুঝবেন এবং এনজয় করবেন। সত্যজিৎ রায় এক কথায় মাস্টার। তিনি একটা অরণ্যের দিনরাত্রি করেছিলেন বলে গৌতম ঘোষ একটা আবার অরণ্যে বা অঞ্জন দত্ত একটা চলো লেটস গো করতে পেরেছেন, সে ভাবে ভাবতে পেরেছেন। অরণ্যের দিনরাত্রি না হলে ও দুটো ছবি হত না। এ জন্যই সত্যজিৎ রায় মাস্টার, প্রভু।


প্রশ্ন: হাতকাটা কার্তিক থেকে বব বিশ্বাস, টুটি-ফুটি থেকে ঋত্বিক ঘটক, আপনার কোনও চরিত্রের সঙ্গে কোনও চরিত্র চট করে মেলানো যাবে না। বাংলার গুটিকতক অভিনেতাদের মধ্যে আপনি একজন, যিনি লাগাতার তাঁর চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন। কেমন লাগে এই পরীক্ষানিরীক্ষা?

শাশ্বত: আমার মনে হয় এখানে স্ক্রিপ্ট শেষ কথা। স্ক্রিপ্টে যদি কিছু না থাকে একজন অভিনেতা কী করবেন! তাকে তো কিছু করার একটা জায়গা দিতে হবে। স্ক্রিপ্টই আসল হিরো। আমি চিরকাল এ কথাটা বলে আসছি।


প্রশ্ন: হবু-গবু একেবারে ম্যাগনাম ওপাস। লার্জার দ্যান লাইফ, বিরাট গ্র্যাঞ্জার। শুটিংয়ের এক্সপেরিয়েন্স কী রকম?

শাশ্বত: প্রথমত বাংলা ছবিতে এভাবে কেউ ভাবেনি আগে। এত টাকা কেউ ইনভেস্ট করতে সাহস করবে না। চেষ্টা করেছি যত কম দিনে শুটিং শেষ করা যায়। প্রত্যেকে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছেন। সেটা দর্শকরা পর্দায় বুঝতে পারবেন। কারণ ওই সেটের যা ভাড়া তা বাংলা ছবির করার মতো নয়। তাই সবাই হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করেছে। এই ধরনের পোশাক পরে ওই গরমের মধ্যে শুটিং করা খুবই কষ্টকর ছিল। ২টো বড় সেটে সিনেমার শুটিং হয়েছে। একটা প্রয়াগ ফিল্ম সিটি, অন্যটা হায়দরাবাদ ফিল্ম সিটিতে বাহুবলীর (Bahubali) সেটে। তাই গরমে বেশ কষ্ট হয়েছে। আর একটা বিষয় বলতেই হবে, যেটা নিয়ে কমবেশি সবারই অসুবিধা হয়েছে, সেটা হল ছন্দ মিলিয়ে ডায়ালগ বলতে হয়েছে। তাই ইমপ্রোভাইজেশনের কোনও জায়গা ছিল না। যা স্ক্রিপ্টে ছিল সেটাই বলতে হয়েছে। তার উপর হাতে বেত নিয়ে মাস্টারমশাই বসেছিলেন, গোঁফে তা দিয়ে। তাঁর নাম অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। তাই খুই কষ্টকর শুটিং ছিল (হা হা করে হেসে উঠলেন)।

Advertisement


প্রশ্ন: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে সত্যজিৎ রায়, সকলেই আক্ষেপ করেছেন যে তাঁরা আরও বেশি করে বাচ্চাদের জন্য ছবি তৈরি করতে বা কাজ করতে পারলেন না। আপনি এ রকম একটা ছবিতে কাজ করে কেমন অনুভব করছেন?

শাশ্বত: সৌমিত্র জেঠু এই সিনেমাটা দেখে যেতে পারলেন না এই আক্ষেপটা সারা জীবন থেকে যাবে। উনি ভয়েস ওভার দিলেন সিনেমায়। কিন্তু সিনেমা হলে বসে ছবিটা দেখতে পারলেন না। আমার মনে হয় উনি খুব খুশি হতেন। আপনার কথার সূত্র ধরে বলি, আজকাল এ রকম মজার চরিত্র লেখার লোক কোথায়? আমাদের জীবন থেকেই তো মজাটা হারিয়ে যাচ্ছে। আজকে যে সমাজ, যে পরিবশে আমরা রয়েছে তাতে হাসিঠাট্টা করার জায়গায় আছি খুব একটা? আমাদের চিন্তাধারাটাই তো একটু প্যাঁছ খেয়ে যাচ্ছে। যদি বাচ্চাদের ছবি করতে হয় তবে বাচ্চাদের মতো সহজ-সরল করে ভাবতে হবে। চারদিকে এত সমস্যা, দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বসে লেখাটাও তো চাপের। না লিখলে ছবি কোথা থেকে হবে! যেটা লেখা অনেক বেশি কঠিন। বাচ্চাদের দিয়ে অভিনয় করানোটাও কঠিন। সেটা সত্যজিৎ রায়ের মতো তো আর কেউ করতে পারেননি।


প্রশ্ন: জয় বাবা ফেলুনাথে রুকু-র চরিত্র করতে পারেননি বলে কি আজও আফসোস হয়?

শাশ্বত: ভীষণ আফসোস হয়। এবং এটা সারাজীবন থেকে যাবে। ওই বাটি ছাঁটের জন্য আর করা হয়ে উঠল না।

 

Advertisement