প্রায় চার দশকেরও বেশি সময়ের ফিল্মি কেরিয়ারে তিনি পরিচালক মৃণাল সেনের অভিনেত্রী হিসাবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি, শ্রীলা মজুমদার। ক্যান্সারের সঙ্গে ৩ বছরের লড়াইয়ে শেষে শনিবার হার মানলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। কিংবদন্তী পরিচালক মৃণালের একের পর এক ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন শ্রীলা। মৃণালের যেন 'মানসকন্যা' ছিলেন শ্রীলা। তবে এর পাশাপাশি বাংলার মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতেও নজর কেড়েছিলেন তিনি। সেই ছবিতে সফলও হয়েছিলেন তিনি। অঞ্জন চৌধুরীর 'পূজা' কিংবা পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীর সুপারহিট ছবি 'প্রতিবাদ'-এর মধ্যে অন্যতম। এই দুই ছবির দৌলতে গ্রাম বাংলায় জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন মৃণালের অভিনেত্রী।
'পূজা'য় ময়নার চরিত্রে শ্রীলা
অঞ্জন চৌধুরীর বিখ্যাত ছবি 'পূজা'। এই ছবিতে ময়নার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীলা। ছবিতে ময়নার গায়ের রং কালো ছিল বলে তার বিয়ে হচ্ছিল না। পূজাই (এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রীনা চৌধুরী) কৌশলে ময়নার বিয়ে ঠিক করেছিল। আর তার পরে শ্বশুরবাড়িতে রোজই অত্যাচারিত হতে হয়েছিল ময়নাকে। শেষে তাকে উদ্ধার করেছিল পূজাই। এই ছবির হাত ধরে গ্রামে ঘরে ঘরে পরিচিতি পেয়েছিলেন শ্রীলা।
প্রসেজিতের দিদির চরিত্রে শ্রীলা
২০০১ সালে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রয়োজনায় মুক্তি পেয়ছিল সুপারহিট ছবি 'প্রতিবাদ'। পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীর এই ছবিতে নায়কের চরিত্রে ছিলেন প্রসেনজিৎ। নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন অর্পিতা পাল (এখন চট্টোপাধ্যায়)। এই ছবিতে প্রসেনজিতের দিদির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীলা। তাঁর চরিত্রের নাম ছিল মীনু। ছবিতে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারিত মহিলার চরিত্রে রূপ দিয়েছিলেন শ্রীলা। এই ছবিতে আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন শ্রীলা। যা গ্রামবাংলায় তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
এক সাক্ষাৎকারে শ্রীলা জানিয়েছিলেন, 'পূজা' এবং 'প্রতিবাদ', এই দুই ছবির হাত ধরে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। মৃণাল সেনের ছবির পাশাপাশি এই দুই ছবিও তাঁর অন্যতম। ২০০৩ সালে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের 'চোখের বালি 'মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবিতে বিনোদিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ঐশ্বর্য রাই। তাঁর ডাবিং করেছিলেন শ্রীলা। ঐশ্বর্যের মুখে শ্রীলার ডাবিং মানিয়েও গিয়েছিল। ছবিতে শ্রীলার এ হেন উপস্থিতি দর্শক হৃদয়ে ছাপ ফেলেছিল।
সেই শ্রীলা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৩ বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে লড়তে শনিবার হার মানলেন অভিনেত্রী। অনেকেই বলে থাকেন, শ্রীলাকে আরও কাজে লাগাতে পারতেন পরিচালকরা। অনেকের মতে, শ্রীলার মতো উঁচুমানের অভিনেত্রীকে সে ভাবে ব্যবহারই করতে পারেননি পরিচালকরা। তবে যে সব ছবি শ্রীলা উপহার দিয়ে গিয়েছেন, তা চিরকাল দর্শক-হৃদয়ে অমলিন থেকে যাবে।