scorecardresearch
 

"হাসপাতালে তাঁর কানের কাছে গিয়ে যদি বলতে পারতাম, ফাইট ক্ষীদ দা ফাইট!...ফাইট"

যে মানুষটা একদিন একটি সাধারণ মেয়ের মনে লড়াইয়ের স্পার্ক জাগিয়েছিলেন, আজ তিনিই জীবনযুদ্ধের সম্মূখীন। জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। সেদিনের সেই সাধারণ মেয়েটি আজ প্রতিষ্ঠিত। তাই, জীবনের স্পার্ক এনে দেওয়া মানুষটার এই অবস্থা দেখে আজ মন ভালো নেই তাঁর। তিনি কোনি। রিল লাইফের কোনি থেকে আজ প্রতিষ্ঠিত শ্রীপর্ণা ব্যানার্জী।

Advertisement
১৯৮৪ সালে 'কোনি' ছবিতে  ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্রে সৌমিত্র চট্টপাধ্যায় ১৯৮৪ সালে 'কোনি' ছবিতে ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্রে সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়
হাইলাইটস
  • ক্ষীদ দা' র পুরানো দিনের স্মৃতিচারণে কোনি।
  • "জীবনে লড়াই করা সৌমিত্র বাবুর থেকেই শিখেছি"।
  • সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক।

যে মানুষটা একদিন একটি সাধারণ মেয়ের মনে লড়াইয়ের স্পার্ক জাগিয়েছিলেন, আজ তিনিই জীবনযুদ্ধের সম্মুখীন। জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। সেদিনের সেই সাধারণ মেয়েটি আজ প্রতিষ্ঠিত। তাই, জীবনের স্পার্ক এনে দেওয়া মানুষটার এই অবস্থা দেখে আজ মন ভালো নেই তাঁর। তিনি কোনি। রিল লাইফের কোনি থেকে আজ প্রতিষ্ঠিত শ্রীপর্ণা ব্যানার্জী। আর যেই মানুষটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছেন, তিনি তাঁর 'ক্ষীদ দা'। কোনির ক্ষীদ দা, ওরফে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত ৬ অক্টোবর থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মধ্য কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। ক্রমেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে সকলের।  

মতি নন্দীর লেখা কোনি সিলভার স্ক্রিনে মুক্তি পায় সরোজ দে'র হাত ধরে ১৯৮৪ সালে। ছবিটি জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত। সেখানে এক অভাবী পরিবারের মেয়ে কোনি (শ্রীপর্ণা ব্যানার্জী)। চোখ ভড়া স্বপ্ন জাতীয় স্তরের সাতারু হবে। কিন্তু, আর্থিক অনটনের জন্য যখন স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছিল, ঠিক তখনই তার জীবনে স্পার্কের মতো হাজির হন ক্ষীদ দা। ক্ষিতীশ সিংহ (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)। সংসারের প্রায় সর্বস্ব নিশ্বেস করে কোনিকে জাতীয় স্তররের সাঁতার প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করেন তিনি। কোনির চোখ ভরা স্বপ্ন, আর ক্ষীদ দা'র কঠোর শাসন, তৈরি করেছিল ইতিহাস। প্রতিযোগিতার শেষ লব্ধে দেশের সেরা সাঁতারুদের সঙ্গে লড়ছে কোনি, আর ক্ষীদ দা'র সেদিনের চিত্কার "ফাইট, কোনি ফাইট! ফাইট..."। সেদিনের যুদ্ধে জিতেছিল রিল লাইফের কোনি।  

আজ সেই কোনির ক্ষীদ দা-ই অসুস্থ। প্রতিযোগিতা নয়, জীবন যুদ্ধে সামিল তিনি। তাই কোনিরও মন ভালো নেই। আজতক বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বাস্তরের কোনি অর্থাত্ শ্রীপর্ণা ব্যানার্জী বলেন, "সেদিনের মতো আমি যদি ক্ষীদ দা-কে কানের কাছে গিয়ে আজ বলতে পারতাম ফাইট, ক্ষীদ দা ফাইট! ফাইট..., তাহলে হয়তো আমার কথা ফেলতে পারতেন না। তাঁকে লড়তেই হবে। তিনি লড়বেনই।"      

Advertisement

তিনি বলেন, "প্রতি মুহুর্তে আমার কেবল ওনার কথা মনে পড়ছে। জীবনে লড়াই করা আমি ওনার থেকেই শিখেছি। যেদিন থেকে ওনার অসুস্থতার কথা জেনেছি মন ভীষণ খারাপ। বার বার ওনার মেয়ের দেওয়া আপডেট দেখছি। উনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন এটাই চাইছি"। প্রায় ৩৬ বছরের পুরানো স্মৃতিচারণ করে শ্রীপর্ণা আরও বললেন, " আমাদের যিনি কোচ ছিলেন অনিলদা, আমার বারবার মনে হতো 'ক্ষীদ দা' বোধহয় তাঁর ওপরই লেখা। সৌমিত্র বাবু আমার মুখে সেই কথা শুনে আমাদের যখন ট্রেনিং হত ভোর ৫.৩০ - ৬ টায় এসে এক কোনায় বসে থাকতেন অনিল দা'র মুভমেন্ট দেখার জন্য। চরিত্রের স্বার্থে এটা সৌমিত্র বাবুর মতো একজন শিল্পীর পক্ষেই সম্ভব। প্রয়োজনে সব বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া, এটাই আমি ওনার থেকে শিখেছি। এখনও ওনার নাটক দেখতে গেলে গ্ৰিন রুমে গিয়ে দেখা করি। আমায় চিন্তে পেরে জড়িয়ে ধরেন ।"

প্রসঙ্গত কলকাতা সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকা শ্রীপর্ণা ব্যানার্জী জানালেন, তিনি আর অভিনয়ে ফিরতে চান না। বললেন, আমরা যখন যে কাজটা করি সেটাতেই সম্পূর্ণ উৎসর্গ করা উচিত, এটাও আমি সৌমিত্র বাবুর থেকেই শিখেছি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা ক্রমেই আরও খারাপের দিকে এগোচ্ছে। চিকিত্‍সায় সাড়া দিচ্ছেন না তিনি। তাঁর চিকিৎসায় দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল টিমের প্রধান অরিন্দম কর বলেন, 'গত ৭২ ঘণ্টায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থার অবনতি হয়েছে। ঠিক কোন দিকে পরিস্থিতি এগোচ্ছে, এখনই তা নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা ওঁর শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলি খতিয়ে দেখছি। স্টেরয়েড দেওয়া সহ একাধিক চিকিত্‍সা করেও উনি চিকিত্‍সায় সাড়া দিচ্ছেন না। যদিও ওঁর অর্গ্যানগুলি ঠিকঠাক কাজ করছে। প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাচ্ছে। রক্তে ইউরিয়া ও সোডিয়াম লেভেল বেড়ে গিয়েছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, বর্ষীয়ান অভিনেতার ফুসফুস ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রয়েছে থাকলেও প্লেটলেট কাউন্ট কমছে। কেন এরকম হচ্ছে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। আগামী সোমবার কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তাঁর কথায়, 'আমরা সেরা চেষ্টা করছি। তবে এই বয়সে এতগুলি অসুখে অনেক সময় সেরা চেষ্টাতেও ফল মেলে না।'

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্নায়ু সমস্যা এখনও ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের। তাঁর স্নায়ুর সমস্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। প্রবীণ অভিনেতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন তাঁর অসংখ্য অনুগামীরা।

 

 

 

Advertisement