নববর্ষের (Noboborsho 1429) ঠিক আগের দিন বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে 'দ্য একেন' (The Eken)। বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা একেন বাবু (Eken Babu), এবার শৈল শহরের এক ভয়ঙ্কর রহস্যের সমাধান করবেন। এসভিএফ (SVF)-র প্রযোজনায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায়, রুপোলী পর্দাতেও চমক দিচ্ছেন একেন বাবু -অনির্বাণ চক্রবর্তী (Anirban Chakrabarti)। ছবিতে প্রমোথ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরজে সোমক (RJ Somak)। ছবি নিয়ে আজতক বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় আরজে -অভিনেতা।
আজতক বাংলা: পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছেন, এবার রেজাল্টের আশায়?
সোমক: আমি বরাবর স্কুলের রেজাল্টের দিন মাকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম। মা বন্ধুর মতো আর বাবা একটু কড়া হাতে শাসন করত। ভুল হলে মা সামলে নিত। একবার অঙ্কে একশোয়- বাহান্ন মতো পেয়েছি। আমার বাবা আবার অঙ্কে খুব ভাল। মা সই করে সবটা সামলে নিয়েছিল এবং বাবাকেও বলেনি... (হেসে)। কিন্তু ছবির ক্ষেত্রে তো আর মা ম্যানেজ দিতে পারবে না কিছু। এখানে দর্শকেরাই সবটা বলবেন।
প্রশ্ন: স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে মা -বাবা থাকছেন?
সোমক: ইচ্ছে আছে। কিন্তু মা তো সংসার সামলে সহজে বেরতে পারেন না। তাই ভেবেছি সপ্তাহান্তে মা -বাবাকে টিকিট কেটে দেব। দু'জনে গিয়ে দেখে আসবে।
প্রশ্ন: আর আপনি থাকবেন না সেখানে?
সোমক: আমি সেখানে যাবই না। নিজের ছবি বসে অতবার দেখতে পারব না (হেসে)।
প্রশ্ন: সেকি? কেন?
সোমক: আমি নিজের ব্যাপারে খুব লাজুক। এই যে শহরে এত হোর্ডিং পড়েছে আমার, তাকাতেই পারছি না। পাশ দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: এটা কি নার্ভাসনেস? খুন টেনশনের ফল?
সোমক: অবশ্যই নার্ভাসনেস। আমি খুব প্যানিক করি। হয়তো আমার কাজের জন্য মনে হয় না, কিন্তু আমি একটু মুখচোরা ধরনের। হঠাৎ করে মিশতে পারি না সকলের সঙ্গে। এতে আবার অনেকে অহংকারী ভাবেন।
প্রশ্ন: এত তারকাদের সাক্ষাৎকার নেন। এখন উল্টো দিকের আসনে বসতে কেমন লাগছে, যেখানে আপনার সাক্ষাৎকার কেউ নিচ্ছে?
সোমক: আমি তো টেবিলের দুটো দিকই দেখছি, তাই বুঝতে পারছি প্রশ্ন করার থেকে, প্রশ্নের সম্মুখিন হওয়ার চাপটা অনেক বেশি। খুব সহজে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া যায়, কিন্তু সেটার উত্তর দেওয়া সত্যিই কঠিন। এটা জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
প্রশ্ন: নতুন মাধ্যমে কাজ করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ট্রোলড হওয়ার ভয় লাগে কখনও?
সোমক: আমার প্রধানত ভয় লাগে কোনও পারফরম্যান্সের সঙ্গে যদি ন্যায্য বিচার না করতে পারি, সেটা নিয়ে। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ কী বলল, সেটা আমি খুব একটা ভাবতে চাই না। কারণ মানুষ বলবেই, তাদের বলার অধিকারও আছে। সবটা গায়ে না মাখতেই চেষ্টা করি, সেটা ভাল বা মন্দ দুটোর ক্ষেত্রেই। কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক খারাপ লাগে ঠিকই। কিন্তু আমি মেনে নিয়েছি যে, আমরা যখন দর্শক বা শ্রোতার সামনে কাজ করি, তখন আমাদের প্রতিটা কথা মানুষের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনার মধ্যে পরে। আমার কাজ হল, আমি কতটা নিয়ে কথা বলতে দেব, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আমার মনে হয়, যে কোনও শিল্পীর এটাও একটা জার্নি। এজন্যে আমি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কম, কাজের কথাই বেশি শেয়ার করি।
প্রশ্ন: অন্যান্য গোয়েন্দা চরিত্রের সহকারীর থেকে প্রমোথ কতটা আলাদা?
সোমক: আমি 'সানডে সাসপেন্স'-এ তোপসে করারও সুযোগ পেয়েছি। সেটা থেকে বলতে পারি, তোপসের কাছে ফেলুদা একজন আদর্শ। কিন্তু প্রমোথ একেন বাবুর বন্ধু। দু'জনেই একই স্তরে আছে। যে কারণে প্রমোথ অনেক সময়ই একেন বাবুকে একটু ধমকে দেয়, মজা করে। আবার তাকে সাহায্যও করে। আবার যদি আমি অজিতের কাছে যাই, সে তো ব্যোমকেশের বন্ধু। কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা ম্যাচিওর।
প্রশ্ন: আপনার সবচেয়ে পছন্দের গোয়েন্দা চরিত্র কোনটি?
সোমক: অবশ্যই শার্লক হোমস। সেটা সাহিত্য হোক কিংবা চলচ্চিত্র। অনেক ছোটবেলা থেকে শার্লক হোমস পড়ছি, এমনকী স্কুলের পাঠ্যতেও ছিল। মূলত শার্লককে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেটা খুব মজার।
প্রশ্ন: গোয়েন্দাদের সহকারীরাও তো অনেকগুলো রহস্যের সমাধান করেন। তারাও তো স্বতন্ত্র গোয়েন্দা হয়ে উঠতে পারেন...
সোমক: সেটা সব সময় যে হবে, তা কিন্তু নয়। প্রথমত এটা লেখকের কল্পনাপ্রসূত, তার তৈরি করা দুনিয়ায় এই ঘটনাগুলো ঘটছে। আর তার বানিয়ে দেওয়া নিয়মগুলো আমরা খুব একটা ভাঙতে চাই না। এর বাইরেও একটা বিষয় রয়েছে, অনেক সময় সরাসরি সামনে এসে একটা কাজ করার থেকে, নেপথ্যে থেকে কাজটা করা অনেক বেশি সুবিধাজনক। বিশেষত কিছু মানুষ ও চরিত্রের ক্ষেত্রে। এই সহকারীরা কোথাও গিয়ে দর্শক বা পাঠক ও গোয়েন্দার মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। এই কারণে গল্পে সহকারীর চরিত্র থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: সব শেষে আপনার 'সেই পরীক্ষার ফল' নিয়ে দর্শকদের কী বলবেন?
সোমক: বাংলা ছবি আবার মুক্তি পেতে শুরু করেছে। শুধু 'দ্য একেন' নয়, আরও বাংলা ছবি রিলিজ করছে ও করবে। সবকটা ছবিই সকলে ভাগাভাগি করে একবার অন্তত দেখে নিন। এটা বলব না যে, শুধু আমার ছবি দেখুন। কারণ একা আমার ছবি দেখলে হবে না। সব বাংলা ছবিই দেখতে হবে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পাশে দাঁড়াতে হবে। তবে হ্যাঁ, 'দ্য একেন' দেখে, আমায় কেমন লেগেছে, ভাল বা খারাপ দুটোই জানাবেন। যেটা মনে হচ্ছে, সেটা একেবারে নির্মমভাবে জানাবেন। তাহলে আমার ভুলগুলো সংশোধনে খুব সুবিধা হবে। আমার ক্ষেত্রে একেবারে নতুন একটা জগৎ, ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছি। সেজন্যে সৎ রিভিউ পেলে, আঁখেরে আমারই লাভ হবে।