টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে 'ঠোঁটকাটা' বলে পরিচিত স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)। সোজাসাপ্টা কথা থেকে স্টাইল স্টেটমেন্ট, বিভিন্ন সময় ট্রোলড হন অভিনেত্রী। তবে নিন্দুকরা শত কটূকথা বললেও, 'কেয়ার নট অ্যাটিটিউটই' রাখতে পছন্দ করেন তিনি। শনিবার রেড রোডে আয়োজন করা হয়েছিল দুর্গা পুজো কার্নিভাল ২০২২-র।
ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পরে এটাই ছিল প্রথম দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। মোট ৯৯ দুর্গাপুজো কমিটি এই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, তারকা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা। আর সেখানে অংশগ্রহণ করেই এবার বিতর্কে নাম জড়াল স্বস্তিকার। অভিনেত্রীকে কটাক্ষ শুরু করেছেন নেটিজেনদের একাংশ। অবশেষে রবিবার, এবিষয় মুখ খুললেন পর্দার 'শ্রীমতী'।
আসলে দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসব কমিটির হয়ে কার্নিভালের অংশগ্রহণ করেছিলেন স্বস্তিকা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ায়, তাঁর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন নায়িকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর হাতে দুটি চকোলেট দেন। আর এরপর থেকে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। কেউ লিখেছেন, "ওখান থেকে কয়েক পা হাঁটলেই দেখতে পেতেন একটা অনশনমঞ্চে প্রায় ৬০০ দিন ধরে কিছু ন্যায্য শিক্ষক তাদের ন্যায়বিচারের দাবীতে আন্দোলন করছে, অবশ্য 'হনরেবল' উনি তা আজ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। কুকুরদের জন্য আপনার যত চিন্তা তা সেই সমস্ত মানুষগুলোর জন্য থাকলেও ভালো লাগতো। আপনাকে সংবেদনশীল ভাবতাম, আজ ভুলটা ভাঙল। ভালো থাকবেন।" অন্য আরেকজন আবার লিখেছেন, "আপনাকে ভাল লাগত, ফলো করতাম... এখন আপনিও চটি চাটা শুরু করলেন...?"
বিভিন্ন নেতিবাচক কমেন্টে নেটমাধ্যম ভরে যাওয়ার পর, স্বস্তিকা মুখ খুললেন। ফেসবুকে তিনি সাফাই দিয়ে লিখেলেন, "কাল রাত থেকেই চলছে তাই ভাবলাম কথাগুলো বলা দরকার। আমি একটা ক্লাবের সাথে কার্নিভালে গেছিলাম, এই প্রথমবার। ৯৫ টারও বেশি ক্লাব যেখানে অংশগ্রহণ করেছে, সেই সমস্ত প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষ ঠাকুর দেখতে গেছেন, সেই সমস্ত ক্লাব আমাদের রাজ্যের। কালকেও উপচে পরা ভীড় ছিল। রাজ্যের কি খারাপ অবস্থা সেটা ভেবে কেউ বাড়িতে বসে পুজো বয়কট করেনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁকে নমস্কার করে বিজয়া জানানোটা ভদ্রতা, সৌজন্য। আমায় দুটো চকলেট দেওয়াটা ওনার ইচ্ছে, সেটা খেয়ে নেওয়াটা আমার । চকলেট নিয়েছি ইলেকশন টিকিট নয়, চকলেট খেয়েছি মোটা টাকার ঘুষ নয়।"
নায়িকা আরও লেখেন, "আমরা একটা সভ্য দেশে বাস করি, বর্বর নই। কাল দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলেও একই ভাবে নমস্কার করব কারণ সেটাই ঠিক। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাক্তিত্বকে আমি শ্রদ্ধা করি। তার মানে রাজনৈতিক মতবিরোধিতার সঙ্গে আপোষ করা নয়। যেটা অন্যায় তা নিয়ে নিশ্চই বলব কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত বিষয় নিয়ে আমায় জিহাদ ঘোষনা করতেই হবে নাহলেই আমার মেরুদন্ড ধ্বসে পরবে এমন কোনো দাসখত আমি লিখিনি। আর আমার ধ্যান ধারণা বিবেক বিচার আপনাদের কথায় ওঠা নামা করেনা। পরে আবার কোনো অনুষ্ঠানে যদি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয় আমি আবারও ওনাকে নমস্কার জানাব এবং উনি চকলেট দিলে নেব এবং খাব। অসভ্য হওয়ার জন্য যে শিরদাঁড়াহীনতা লাগে সেটাও আমার নেই। তাই বেশ করেছি...।"
স্বস্তিকার এই পোস্ট দেখে অনেকে তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেউ লিখেছেন, "আপনার ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। যা করেছেন ঠিক করেছেন। আপনার থেকে এখনও দৃঢ় অবস্থান আশা করি। তবে কিছু মানুষ অবশ্যই ব্যথিত হয়েছেন।" অন্য আরেক ব্যক্তি লিখেছেন, "বেশীরভাগ মানুষ জবলেস আজকাল। সবার সব বিষয় কথা বলা একটা স্বভাব।" তবে সেই সঙ্গে এই পোস্টের কমেন্ট বক্সেও ভরে গেছে সমালচনা, কটুকথার ঝড়। একজন লিখেছেন, "একদমই আমরা সভ্য দেশে বাস করি!অনশন মঞ্চ বসে থাকা মানুষগুলো এই সমাজের নয়, ওরা তো এলিয়েন। ওদের নিয়ে ভাবলে চলে...।" আরেকজনের মন্তব্য, "শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার আপ্রাণ চেস্টা করলেন গলা মোটা করে...।"
প্রসঙ্গত, দু'বছর পর দুর্গা পুজো কার্নিভাল উপলক্ষ্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল রেড রোড চত্বর। এদিন অনুষ্ঠানে একেবারে অন্য মুডে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কখনও তিনি বাজালেন কাঁসর-ঢাক। তো কখনও আবার আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে নাচের তালে পা মেলাতেও দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।