টলিউডে বড় খবর। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ঘটনায় দু'ভাগ হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি। এবার ফেডারেশনের বিরুদ্ধে একজোট হলেন পরিচালকেরা। এমনকী তাঁদের দাবি না মানলে, সঠিক সমঝোতা না হলে, আগামী সোমবার থেকে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিলেন বাংলার পরিচালকেরা। শনিবার স্টুডিওপাড়ায় একসঙ্গে এই ঘোষণা করলেন বড় পর্দা ও ছোট পর্দার পরিচালকেরা।
পরিচালকদের বক্তব্য
শনিবার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পুজোর ছবির। তবে শ্যুটিং ফ্লোরে আসেননি কোনও টেকনিশিয়ান। তাঁদের দাবি, রাহুল পরিচালনা করলে, তাঁরা কাজ করবেন না। এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন পরিচালক- অভিনেতারা। এদিন টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে হাজির হন সকলে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ সেন, রাহুল মুখোপাধ্যায়, রাজা চন্দ, বিরসা দাশগুপ্ত, শ্রীকান্ত মোহতা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, অনির্বাণ ভট্টাচার্য সহ আরও অনেকে।
রাহুলের শ্যুটিং ফ্লোরে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে। শোনা যাচ্ছে, শুক্রবার টেকনিশিয়ানদের কাছে এদিনের শ্যুটিংয়ে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ফেডারেশনের তরফে। টলিউডের পরিচালকেরা ক্ষোভ উগড়ে দেন ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। তাঁরা জানান, ফেডারেশনের চাপানো বহু নিয়মে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাঁদের, তা সত্ত্বেও তাঁরা সব নিয়ম মেনে নেন। পরিচালকদের সঙ্গে অসহযোগিতা করা মানে, তাঁদের চরম অপমান করা।
'গুপি শ্যুট' প্রসঙ্গে পরিচালকেরা
এমনকী ফেডারেশনের ব্যবহৃত 'গুপি শ্যুট' নিয়ে আপত্তি জানান পরিচালকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এটা আইন বিরুদ্ধ। এমনকী, কম দিনের শ্যুটিংয়ে প্রয়োজন না লাগলেও, ফেডারেশন জোর করে প্রচুর সংখ্যক টেকনিশিয়ান নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করায়। শুধু তাই নয়, ফেডারেশন- টেকনিশিয়নরা সহযোগিতা না করলে, সোমবার থেকে পাল্টা কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন পরিচালকরা।
রাহুল মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য
এদিন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় জানান, "আমি অনেক কষ্ট করে একটা সিনেমা বানাতে চেয়েছি। আমি শান্তি মতো সিনেমাটা বানাতে চাই। বাকিটা আমার সিনিয়ররা আছেন, তাঁরা বলবেন।"
সমস্যার সুত্রপাত
শিরোনামে রাহুল মুখোপাধ্যায়। টলিপাড়ার তরুণ এই পরিচালকের কর্মবিরতির নির্দেশ নিয়ে, গত কয়েক দিন ধরে কার্যত তোলপাড় স্টুডিওপাড়া। শুক্রবার নয়া বিবৃতি আসে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার (Directors Association Of Eastern India) তরফে। পরিচালককে নিয়ে জট কেটেও যেন কাটছে না। শুক্রবার, নতুন সিদ্ধান্ত হয় তাঁকে নিয়ে। রাহুলের উপর থেকে তিন মাসের কর্মবিরতি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা জানায় ডিএইআই (DAEI)। অর্থাৎ ছবি পরিচালনায় আর কোনও বাধা থাকে না রাহুলের। তিনি কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদলে গেল চিত্র। ডিরেক্টর্স গিল্ড অব্যাহতি দিলেও, ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার (Federation of Cine Technicians & Workers of Eastern India) থেকে ছাড়পত্র পেলেন না পরিচালক।
ফেডারেশন কী বলেছে?
ডিরেক্টর্স গিল্ডের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তাহলে কি এসভিএফ-র পুজোর ছবি পরিচালনা করতে পারবে রাহুল? এই নিয়ে নানা জল্পনা চলাকালীন, এদিন সন্ধ্যায় ফের বৈঠক ডাকেন ফেডারেশন (FCTWEI) সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। এরপর তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকছে। পরিচালক নয়, সৃজনশীল প্রযোজক হিসেবে এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থার পুজোর ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন রাহুল এবং ছবিটি পরিচালনা করবেন সৌমিক হালদার।
ফেডারেশন সভাপতির মন্তব্য
সংবাদমাধ্যমকে স্বরূপ বিশ্বাস আরও জানান, "শনিবার সমস্ত তথ্য-প্রমাণ নিয়ে আমরা সাংবাদিক বৈঠক করব। তখনই প্রকাশ্যে আসবে সব। রোজের জীবনেও তো কত দ্বন্দ্ব, টানাপড়েন, বিরোধিতা, প্রতিবাদ। এটাও তেমনই একটি ঘটনা।" এবিষয়ে প্রযোজনা সংস্থার তরফে এখনও কোনও নতুন বিবৃতি আসেনি। এমাসেই নতুন এই ছবিটির শ্যুট শুরু হওয়ার কথা। এজন্যে দ্বন্দ্বে পড়েছে তারা। এবার রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ছবি পরিচালনার ভবিষ্যৎ ঠিক কী হবে, তা কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাবে শনিবার।
ঠিক কী সমস্যা হয়েছিল?
রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, নিয়ম বিরুদ্ধভাবে ফেডারেশনকে না জানিয়ে বাংলাদেশে লুকিয়ে শ্যুটিং করেছিলেন তিনি। তার জেরেই রাহুলকে ৩ মাসের কর্মবিরতির নির্দেশ দেয় চলচ্চিত্র ফেডারেশন। আর এই নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।