অপর্ণা সেন পরিচালিত 'ঘরে বাইরে আজ' ছবিতে বৃন্দা চরিত্রে সকলের মন জয় করেছিলেন তুহিনা দাস (Tuhina Das)। 'দময়ন্তি' ওয়েব সিরিজেও তিনি নজরকাড়া। এবার অপরাজিতা হয়ে উঠলেন তিনি। ১১ মার্চ মুক্তি পেল, রোহন সেন পরিচালিত তাঁর নতুন ছবি 'অপরাজিতা' (Aparajita)। এতদিন পর ছবি মুক্তি, এছাড়াও এদিনই অভিনেত্রীর জন্মদিন। এজন্যে দিনটি বাড়তি স্পেশাল। নতুন, পুরনো ছবি নিয়ে আজতক বাংলার সঙ্গে আড্ডায় তুহিনা দাস।
আজতক বাংলা: বহুদিন পর বড় পর্দায় আপনার ছবি মুক্তি পেল। নার্ভাস না উৎসাহিত?
তুহিনা: প্রচণ্ড উৎসাহিত। নিজের কাজ মুক্তি পেলে তো ভালই লাগে। ১১ মার্চ আমার জন্মদিন, এজন্যেই ছবি মুক্তির জন্য এই দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে। আগেই নির্মাতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি এজন্যে।প্রথমবার আমার জন্মদিন এভাবে উদযাপন হবে।
প্রশ্ন: তাহলে তো এটা আরও বড় পরীক্ষা...
তুহিনা: (হেসে) সেটা তো বিভিন্ন বটেই। প্রায় দু' বছর পর ছবি মুক্তি। তবে দর্শকেরা একটু একটু করে সিনেমা হলে ফিরছেন। তাই আশা রাখতে তো অসুবিধা নেই। বড় পর্দার যে অপূর্ব আবেদন, তা দু'বছর ধরে মিসিং। দর্শকেরা কোথাও গিয়ে, সেটার জন্য মুখিয়ে আছেন।
প্রশ্ন: বাবা -মেয়ের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে 'অপরাজিতা' তৈরি। ছবিটা করার সময় কতটা আবেগপূর্ণ জার্নির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে?
তুহিনা: একজন মেয়ে হিসাবে আমি বিশ্বাস করি, বাবা ও মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণ একটু আলাদা হয়। একজন মেয়ের কাছে তাঁর বাবা একটা আবদারের জায়গা, একটা ছাদের মতো...ব্যতিক্রম থাকলেও অধিকাংশ বাবার কাছে তাঁর মেয়ে, একেবারে রাজকন্যার মতো। যেহেতু এই ছবিতে একটা অব্যক্ত সম্পর্ক ফুটে উঠেছে, সেটা ব্যক্তি তুহিনা হিসাবে আমি ভাবতেও পারি না। এটা খুবই কষ্টকর। আমি ভাবতে পারি না আমার বাবার সঙ্গে আমার সাড়ে তিন বছর কথা হবে না। আর যেটা আমি ভাবতে পারি না, সেটা পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সত্যি চ্যালেঞ্জিং ছিল। বেশ কিছু দৃশ্য শ্যুট করতে গিয়ে খুব মন খারাপ হয়েছে।
প্রশ্ন: রিয়েল লাইফে বাবার সঙ্গে কেমন বন্ডিং?
তুহিনা: আমাদের খুবই ভাল বন্ডিং। বাবার সঙ্গে আমার খুব আদরের ও আবদারের একটা সম্পর্ক।
প্রশ্ন: বর্তমানে বিভিন্ন সম্পর্কের ক্ষেত্রেই শোনা যায় 'কমিউনিকেশন গ্যাপ' তৈরি হচ্ছে। কী কারণে হয় বলে মনে হয়?
তুহিনা: আমাদের এই জেনারেশনের ছেলে-মেয়েদের, বড্ড বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার জন্য অধিকাংশ সময় কেটে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল দুনিয়ার জন্যও কোথাও গিয়ে ওই দূরত্বতা তৈরি হয়। উল্টো দিকের মানুষটা কী ভাবছেন, তা মেসেজ, ইমোজির উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। যার ফলে মাঝে অনেকটা ব্যবধান তৈরি হচ্ছে...এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।
প্রশ্ন: তুহিনার সঙ্গে অপরাজিতার মিল বা অমিল কতটা?
তুহিনা: 'অপরাজিতা' তোমার-আমার মতো একটা মেয়ে। সেও অফিস সামলানোর পাশাপাশি পরিবারকে সামলায়। সর্বপরি অনেকটা দায়িত্ব আছে। তবে অপরাজিতার বাবার সঙ্গে যে রসায়ন, সেটার সঙ্গে আমার কোনও মিল নেই।
প্রশ্ন: শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় আপনার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে এত প্রবীণ একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
তুহিনা: শান্তি দা যেহেতু বহু বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন, ফ্লোরে থাকলে ওঁর মধ্যে অদ্ভুত ধৈর্যশীলতা ও ধীরতা আছে। এছাড়াও অফ ক্যামেরাও শান্তি দা-র মধ্যে একটা বাবাসত্ত্বা রয়েছে। এদিকে উনি আবার খুব মজাও করেন। কখনই মনে হয়নি যে ওঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি, আমার থেকে। এজন্যেই কাজ করতে অনেক সুবিধা হয়েছে।
প্রশ্ন: বৃন্দা থেকে অপরাজিতার কতটা পরিবর্তন হয়েছে?
তুহিনা: বৃন্দা থেকে অপরাজিতার পরিবর্তন হয়েছে, তবে তুহিনার হয়নি। আমি একজন অভিনেতা হিসাবে বদলেছি, মানুষ হিসাবে একই রকম আছি। আমার মনে হয় প্রতিটা অভিনেতার শুরুর কাজ এবং তারপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, পরবর্তী সব কাজই একটু একটু করে উন্নতমানের হয়। সেই উন্নতি আমার মধ্যেও হয়েছে। আমি সব সময় মাথায় রাখি, আগের কাজের থেকে পরেরটা যেন আরও ভাল হয়।
প্রশ্ন: এবারের জন্মদিন নিঃসন্দেহে অনেকটা বেশি স্পেশাল। কী 'উইশ' করলেন?
তুহিনা: আমি সবে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু ১১ মার্চ কোনও কাজ মুক্তি পেয়েছে, এরকম আগে কখনও হয়নি। এমনিতে আমি একেবারে 'পার্টি পার্সন' না। হৈ হৈ করে প্রচুর সাজগোজ করে, বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করব, আমি এরকম না। বরং এর একেবারে উল্টো ঘরকুনো একজন মানুষ। তবে জন্মদিনে ছবির মুক্তি আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার। একটাই জিনিস চাই যে, মানুষের কাছে যখন সুযোগ এসেছে সিনেমা হলে ফেরার, তাঁরা গিয়ে ছবিটা দেখুক। আমার মনে হয়, সকলে একটু সচেতনভাবে যদি আমাদের ভাষা এবং কাজকে সাপোর্ট করে, তাহলে সকলে একটু শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারে।