১৯৫৩ সালে প্রায় নতুন এক জুটির দেখা মেলে বাংলা সিনেমায়। ছবির নাম সাড়ে চুয়াত্তর। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, তুলসি চক্রবর্তী এবং মলিনা দেবীর পাশে নিজেদের চেনানো সহজ নয়। কিন্তু সহজ কাজ করেই যদি বাঙালির মনে চিরকালীন আসন জুটে যেত তা হলে তো যে কেউ সিনেমায় এমন জুটি তৈরি করতে পারতেন! সেই শুরু। তার পর আরও ৩০টি ছবিতে এক সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা। এক সময় উত্তম-সুচিত্রার নামে হল কানায় কানায় ভরে গিয়েছে। একের পর এক হিট। পর্দায় তাঁদের উপস্থিতি এতটাই জীবন্ত, এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে সাধারণ দর্শক ভাবতে শুরু করলেন এঁরা বুঝি আসল জীবনেও এমনটাই।
আসল জীবনে এঁরা একে অপরের অত্যন্ত পছন্দের সহশিল্পী ছিলেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ১৯৫৭ সালে উত্তম কুমারের প্রযোজনায় হারানো সুর ছবিতে অভিনয় করবেন সুচিত্রা। তখন এক সঙ্গে অনেকগুলি ছবিতে কাজ করছেন তিনি। ডেট নিয়েও সমস্যা হতে পারে। তবে উত্তমকে জোর গলায় সুচিত্রা বলেছিলেন, 'তোমার জন্য সব ছবির ডেট ক্যান্সেল করব।' এতটাই বিশ্বাস ছিল তাঁদের নিজেদের জুটির ক্যারিশমার প্রতি। যথারীতি বিরাট হিট হয়েছিল হারানো সুর।
তার আগে ১৯৫৪ সালে উত্তম কুমারের সঙ্গে অগ্নিপরীক্ষা ছবি নিয়েও হইচই পড়ে গিয়েছিল। ছবির পোস্টারে অটোগ্রাফ দিয়ে সুচিত্রা লেখেন, 'আমাদের প্রণয়ের সাক্ষী হল অগ্নিপরীক্ষা।' প্রায় সাত দশক পেরিয়ে এসেও এমন কাজ এখনকার কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রী করতে হয়তো সাহস পাবেন না। কিন্তু সুচিত্রা অন্য ধাতে গড়া ছিলেন। ঘটনার পর উত্তমের সাংসারিক জীবনে প্রবল অশান্তির খবরও ফলাও করে লেখা হয়েছিল তৎকালীন নানা পত্রিকায়। উত্তমের স্ত্রী গৌরী দেবী মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন। অন্য দিকে স্বামী দিবানাথের সঙ্গে মন কষাকষি শুরু হয় সুচিত্রার। একে দর্শকের চরম বিশ্বাস এবং ফিল্ম পত্রিকার নানা খবর, তার পর এই ঘটনা চাপা গুঞ্জনকে সমবেত কণ্ঠে পরিণত করে।
ভালোর সঙ্গে খারাপ এবং খারাপের সঙ্গে ভালো একই সঙ্গে যেন সেঁটে থাকে। কয়েনের দুটো পিঠ। এ ঘটনা অনেকটা সে রকমই। বক্স অফিস সাফল্য এবং দর্শকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার মাঝে ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা তৈরি হয় মহানায়ক এবং মহানায়িকার। যে দিবানাথ সুচিত্রাকে সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রাজি করিয়েছিলেন, সেই দিবানাথ রাতারাতি সন্দেহের বশে তাঁকে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এমন পরিস্থিতিতে সুচিত্রার বালিগঞ্জের বাড়িতে একটি ঘরোয়া পার্টিতে দিবানাথের আক্রমণের মুখে পড়েন উত্তম। ঘটনা এতটাই আকস্মিক ছিল যে উপস্থিত কেউ অনুভবও করতে পারেননি যে এমন কিছু ঘটবে। কিন্তু ঘটেছিল। ঘটনার পর থেকে দিবানাথের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব আরও বাড়তে শুরু করে সুচিত্রার। এক সময় বাড়ি ছেড়ে নিউ আলিপুরে আলাদা থাকতে শুরু করেন তিনি।