কোটি কোটি টাকার নিয়োগ দুর্নীতিতে যখন শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে, তখন আরও এক চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগ খবরের শিরোনামে। তা হল, জাল সার্টিফিকেট নিয়ে MBBS-এ ভর্তি। ভুয়ো সার্টিফিকেটধারী ডাক্তারি পড়ুয়া। ইতিমধ্যেই মামলা গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।
ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি
হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজে জাল তফশিলি জাতি ও উপজাতি সার্টিফিকেট বা SC ও ST সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে বহু পড়ুয়াকে। যাতে বিশেষ কোটায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সহজ হয়ে যায়। আসলেই যাঁরা ST ও SC, তাঁরা সুযোগ পাননি, অথচ জাল সার্টিফিকেট নিয়ে একাধিক পড়ুয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সেলিংয়ে বসার সুযোগ পেয়েছে। যার জেরে বহু ST ও SC পড়ুয়া বেসরকারি কলেজে বহু খরচ করে মেডিক্যাল পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। যাঁদের অর্থের সামর্থ নেই, তাঁরা পড়তে পারছেন না।
ইতশা সোরেন প্রথম মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে
দুর্গাপুরের বাসিন্দা ইতশা সোরেন প্রথম মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে। তাঁর অভিযোগ, তিনি ST কোটায় তাঁর র্যাঙ্ক অনুযায়ী এমএমবিবিএস-এ ভর্তির জন্য দ্বিতীয় কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ পান। কিন্তু তিনি ভর্তি হতে পারেননি, অথচ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর, এনআরএস সহ কলকাতার নামী সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভুয়ো ST সার্টিফিকেট নিয়ে বহু পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে। আবেদনকারীর আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য জানান, এই পরীক্ষা হয় দেশজুড়ে। কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষেরই ভূমিকা সমান।
পদবী নিয়ে বিতর্ক
এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট তলব করে মেডিক্যাল শিক্ষা অধিকর্তা ডাক্তার দেবাশিস ভট্টাচার্যকে। তিনি জানিয়েছেন, মোট ৫৮টি পদবী নিয়ে এই ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়টি রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এলেই পরবর্তী পদক্ষেপ।
এই মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'এটা তো ভয়ংকর।' বিচারপতির বক্তব্য ছিল, সিনহা, মণ্ডল, বড়ুয়া এই ধরনের একাধিক পদবী রয়েছে, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের আওতায় পড়ে না।
২০২৩ সালের নিট দিয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান ইতশা। প্রায় ২৭ জনের নামে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আসন দখলের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘সিনহা, ভৌমিক, মণ্ডল, বড়ুয়া— এঁরা কি সত্যি সংরক্ষিত কোটায় পড়েন?’