কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবার ধৃত অভিযুক্ত আফরোজ খান ওরফে গুলজারের সঙ্গে অস্ত্র কারবারীদের যোগ খুঁজতে শুরু করলেন তদন্তকারীরা। রেকর্ড খতিয়ে পুলিশের দাবি, এর আগেও আফরোজ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ধরা পড়েছেন। ফলে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ থাকতেও পারে বলে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা।
তদন্তের এই মোড় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আগে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। প্রশ্ন করেছিলেন, ভিনরাজ্য থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এলেও পুলিশ সেটা রুখছে না কেন। তিনি বলেন, 'বিহারের মুঙ্গের থেকে আর্মস আসছে বলছে। তাহলে পুলিশ ধরছে না কেন।' পুলিশকে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলার আর্জি জানান ফিরহাদ। এর পরপরই অস্ত্র কারবারীদের যোগ নিয়ে পুলিশের তদন্ত লক্ষ্যণীয়।
ফিরহাদের ভিন্ন মত সুশান্তের
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু সুশান্ত ঘোষ তাঁর সঙ্গে একমত হলেন না। উল্টে পুলিশের পাশেই দাঁড়ালেন। বললেন,' আমার মনে হয় না পুলিশের শৈথিল্য আছে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। গলসি থেকেও একজন গ্রেফতার হয়েছে বলে খবর পেলাম। তদন্ত চলছে। যেটুকু যা বাকি আছে, তাও পুলিশ দু-একদিনের মধ্যে সমাধান করে ফেলবে বলে আমি আশা করি।'
তদন্তে আরও এক বড় তথ্য উঠে আসছে। জানা যাচ্ছে, অভিযুক্ত আফরোজ সম্ভবত এক বছর দুবাইতে কাজ করেছেন। সেখান থেকে জমানো টাকা দিয়েই জমি কিনেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন। আফরোজের দাবি, তাঁর সেই জমিই নাকি দখল করে নিয়েছিলেন এক স্থানীয় প্রোমোটার। আর সেই প্রোমোটার নাকি কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের ঘনিষ্ঠ। সেই কারণেই সুশান্তকে খুনের পরিকল্পনা করেন আফরোজ। তবে পুরো বিষয়টাই অস্বীকার করেছেন সুশান্ত। তিনি সাফ জানিয়েছেন, 'গুলশান কলোনির রাজনীতি আলাদা। সেখানে আমার প্রভাব নেই।' অভিযুক্তকে তিনি চেনেন না বলেও জানান সংবাদমাধ্যমকে।
মুখ্যমন্ত্রীর ফোন
খবর পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও। শনিবার সুশান্ত ঘোষকে ফোন করেন তিনি। জানান, দল পাশে আছে। এর আগে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ফোনে সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন।
ভরসন্ধ্যায় খুনের চেষ্টা
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে কসবায় নিজের বাড়ির সামনে বসে ছিলেন সুশান্ত ঘোষ। সেই সময় হঠাৎ স্কুটারে চেপে দুই দুষ্কৃতী হাজির হয়। তাদের মধ্যে একজন ব্যাকসিট থেকে নেমে সুশান্তের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। যদিও সৌভাগ্যক্রমে ট্রিগার জ্যাম হয়ে যাওয়ায় গুলি চলেনি। বেগতিক দেখে পালানোর চেষ্টা করে। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দুষ্কতীকে তাড়া করেন সুশান্ত ও তাঁর সঙ্গীরা। স্কুটার আরোহী দ্রুত বেরিয়ে যায়। কিন্তু বন্দুকধারীকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। এরপর তাকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। ওই যুবককে জেরা করেই আফরোজের খোঁজ মেলে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে নাকা চেকিংয়ের মাধ্যমে তাকে পাকড়াও করে পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার পুলিশ। বাইকে করে বিহার পালানোর চেষ্টা করছিলেন আফরোজ। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তার আগেই জাতীয় সড়ক থেকে ধরে ফেলা হয়।