পেশায় অ্যাপ বাইক চালক যুবক। বয়স মাত্র একুশ। অভিযোগ, সেই যুবকের সম্পর্ক ছিল প্রেমিকা ও তাঁর মায়ের সঙ্গে। তিনি নাকি ফোনে প্রেমিকা ও তাঁর মায়ের আপত্তিকর ভিডিও রেখে দিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সম্পর্কের জেরে খুন অয়ন মণ্ডল। হরিদেবপুরের বাসিন্দা অয়নের মৃত্যুর তদন্তে নেমে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। যা হয়তো সিনেমার স্ক্রিপ্টকেও হার মানাবে। কীভাবে খুন হলেন অয়ন, কেন তাঁকে খুন করা হল, প্রেমিকা ও তাঁর মায়ের সঙ্গে সত্যিই কি অয়নের সম্পর্ক ছিল? অয়নের মোবাইলে কী ভিডিও ছিল যার জন্য খুন হতে হল অয়নকে ? এমন একাধিক প্রশ্ন সামনে আসছে। সামনে আসছে বিভিন্ন তথ্যও। সেই সব এই প্রতিবেদনে তুলে ধরব।
প্রথমেই যেটা জানাব, অয়ন কে এবং তিনি কীভাবে খুন হলেন? অয়নের বন্ধুদের দাবি, দশমীর রাতে বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন অয়ন। তার পর থেকেই নিখোঁজ। পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার মগরাহাটের মাগুরপুকুরে অয়নের দেহ মেলে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাথায় আঘাতের জেরে অয়ন মারা যান। গাড়ি ভাড়া করে তাঁর দেহ ফেলে দিয়ে আসা হয়। অয়নের পাড়া প্রতিবেশীদের দাবি, অয়নের বাড়ি থেকে তাঁর প্রেমিকার বাড়ির দূরত্ব এক কিলোমিটার মতো। দুই বাড়ির সবাই সম্পর্কের কথা জানতেন। অয়ন ও তাঁর বান্ধবী দুজনেরই একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত ছিল।
আরও পড়ুন : 'অয়নকে শারীরিক সম্পর্কের জন্য মেয়েটির মা ডাকত,' বিস্ফোরক দাবি বন্ধুর
এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই চলে আসেন তৃতীয়জন। ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কে এই তৃতীয় ব্যক্তি? আর কেউ নন। সেই প্রেমিকার মা। অয়নের বন্ধুদের অভিযোগ আবার পুলিশ সূত্রে খবর, অয়নের সঙ্গে তাঁর বান্ধবীর মায়েরও সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অশান্তির সূত্রপাত এখান থেকেই।
কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ?
অয়নকে দশমীর রাতে তাঁর বান্ধবীর বাড়িতে রাখতে গিয়েছিলেন এক বন্ধু। তাঁর দাবি, অয়নের সঙ্গে শারীরির সম্পর্ক ছিল প্রেমিকার মায়ের। তিনি নাকি অয়নকে ফোন করে নিজের বাড়িতে ডাকতেন। আর তা বেশ ঘনঘন। অয়নও যেতেন। ওই বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে অয়নের কতদিন ধরে সম্পর্ক চলছিল সেই বিষয়ে কোনও তথ্য সামনে আসেনি। আবার অয়নের পরিবারেরও অভিযোগ, বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক এবং তা জানাজানি হওয়ার পরই অয়নকে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়।
আরও পড়ুন : 7th Pay commission: DA পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কর্মীরা, ১৮ মাসের এরিয়ার কবে পাবেন ? বড় UPDATE
পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্ত এইভাবেই এগোচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যে উঠে আসে মোবাইলের তত্ত্ব। অভিযোগ, মা ও মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক অয়নের খুনের একটি কারণ ঠিকই। তবে মূল কারণ হল সেই মোবাইল। কী ছিল সেই মোবাইলে? সেই মোবাইলে ছিল মা ও মেয়ের আপত্তিকর ছবি। অয়নের এক বন্ধুর অভিযোগ, অয়নের মোবাইলে সত্যিই সেই ছবি বা ভিডিও ছিল। এবং অয়ন নিজেই নাকি তা বন্ধুদের দেখিয়েও ছিল। আর সম্প্রতি এই তথ্য বান্ধবীর বাবা জানতে পারেন।
তাহলে কি অয়নকে পরিকল্পনা করে খুন করল তাঁর বান্ধবীর পরিবারের সদস্যরা ?
অভিযোগ কিন্তু তেমনই। পুলিশও এমনটাই অনুমান করছে। তদন্তে নেমে অয়নের বান্ধবী, তাঁর মা-বাবা, ভাই-সহ ৭ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অভিযোগ, বান্ধবীর পরিবারের সদস্যরাই অয়নকে খুন করে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে। সরকারি আইনজীবীও জানিয়েছেন, জেনে বুঝে পরিকল্পমাফিক অয়নকে খুন করা হয়েছে। তারপর পরিকল্পনা করে দেহ সরিয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। অয়নের দেহে একাধিক গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, খুনের উদ্দেশেই আঘাত করা হয়েছিল তাঁকে। কোথায় খুন করা হয় অয়নকে? অভিযোগ, বান্ধবীর বাড়ির দোতলার ঘরে খুন হন অয়ন। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, ফরেন্সিক পরীক্ষায় এক ফোঁটা রক্তের নমুনাও কিন্তু সেই ঘরে মেলেনি। খুব সম্ভবত খুনের পর রক্তের দাগও মুছে ফেলা হয়।
আরও পড়ুন : TET-এ বসতে কী যোগ্যতা প্রয়োজন, কারা পরীক্ষায় বসতে পারবেন না ?
অয়ন খুনে যেটি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তা হল, যে রাতে তিনি খুন হন বলে অভিযোগ সেই রাতে ফোনে কথাও বলেছিলেন বন্ধুর সঙ্গে। এই হল সেই বন্ধু যিনি অয়নকে তাঁর প্রেমিকার বাড়িতে রাখতে গিয়েছিলেন। সেই বন্ধু জানাচ্ছেন, অয়নের সঙ্গে রাত ৩ টে নাগাদ তাঁর ফোনে কথা হয়। অয়ন জানান যে, প্রেমিকার মা তাঁকে মারধর করেছে। অশান্তিও হয়েছে। অয়নের বন্ধুর দাবি, তিনি সেই সময় অয়নের বাড়িতে খবর দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। তবে দেননি। কারণ, অয়নের মা-বাবা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রায় অয়নের সঙ্গে তাঁর প্রেমিকার বান্ধবীর পরিবারের ঝামেলা হত। সেটা অনেকেই জানতেন। অয়নকে যে ফোন করে তাঁর বান্ধবীর মা ডাকতেন মাঝে মধ্যে তাও জানতেন তাঁরা।
তাহলে যেটা দাঁড়াল অভিযোগ অনুযায়ী, দশমীর রাতে অয়নকে ফোন করে ডাকা হয় তাঁর প্রেমিকার বাড়িতে। তারপর সেখানে খুন হন অয়ন। তাঁর দেহ মেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের মাগুরপুকুরে। কিন্তু যেটা নিয়ে এত কাণ্ড অর্থাৎ অয়নের সেই মোবাইল সেটা কিন্তু এখনও পুলিশের হাতে হাতে আসেনি বলেই জানা যাচ্ছে। তদন্তকারীদের অনুমান, অয়নের ফোন এই রহস্যর জট আরও খুলে দিতে পারে। হয়তো সেই ফোনে অনেক তথ্য লুকিয়ে রয়েছে।