কলকাতায় ধৃত বাংলাদেশি নাগরিক আজাদ শেখের জেরা থেকে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্ট অনুযায়ী, জেরায় সে জানিয়েছে— মাত্র ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছে। এবিপি আনন্দের প্রতিবেদন সূূত্রে এই খবর। জানা গিয়েছে, ভারতে অনুপ্রবেশের পর এক দালালের মাধ্যমে নকল নথিপত্র বানিয়ে ফেলে আজাদ। সেই দালালই ন্যাজাট এলাকায় জাফর আলি শেখ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। সেখানে সে নিজেকে জাফরের দাদা বলে পরিচয় দেয়। এরপর জাফরের মা-বাবার নাম ব্যবহার করে বানিয়ে ফেলে একের পর এক জাল নথি— ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, এমনকি আয়ুষ্মান ভারত কার্ডও।
কিছুদিন আগেই দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট এলাকা থেকে আজাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ভারতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স। যেহেতু তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ছিল, বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না, তাই প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন ওঠে— কীভাবে সে এই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেল? পরিবহণ দফতরের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন।
১৮ মে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সদানন্দ রোডে প্রাইভেট গাড়ি চালাতে গিয়ে আজাদ শেখ ধাক্কা মারে নেতাজিনগর থানার এএসআই সুষেণ দাসকে। গুরুতর আহত হন ওই পুলিশ অফিসার। তাঁর বাঁ পা ভেঙে যায়, মুখে ও হাতে লাগে আঘাত। তাঁকে প্রথমে এসএসকেএম ও পরে অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরেই আজাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রথমে দাবি করা হয়েছিল, ধৃত ব্যক্তি উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। কিন্তু তার নথি খতিয়ে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। তদন্তে উঠে আসে— তার অধিকাংশ নথি জাল। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় মিথ্যা তথ্যও দেয় সে। পরে পুলিশের তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায়, আজাদ শেখ আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। বর্তমানে কালীঘাট থানার হেফাজতে রয়েছে সে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আজাদ শেখ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ভারতে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কলকাতার রাস্তায় দিব্যি প্রাইভেট গাড়ি চালাত। এমন ঘটনায় হতবাক প্রশাসন। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এই ভুয়ো পরিচয়ে সে গাড়ি চালানোর অনুমতি পেল? কারা তাকে সাহায্য করেছিল? পুলিশের তদন্তের মূল লক্ষ্য এখন সেই দালাল চক্রকে ধরার চেষ্টা।
কলকাতা পুলিশের প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, আজাদ শেখ নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে ভুয়ো তথ্য দিয়ে সরকারি কাগজপত্র বানিয়েছিল। সে দাবি করেছিল, সে উত্তর ২৪ পরগনার খাসসনকদাহর বাসিন্দা। তবে তদন্তে দেখা যায়, আজাদের আসল ঠিকানা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি।
এই ঘটনার জেরে কালীঘাট থানায় Foreigners Act-এর ১৪A(b) ধারা এবং Bharatiya Nyaya Sanhita (BNS)-এর ২১২ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
১৮ মে সকাল ৬টা ২৫ মিনিট নাগাদ, আজাদ প্রাইভেট গাড়ি চালানোর সময় কালী মন্দির রোড ধরে সদানন্দ রোডের মোড়ে পুলিশের এএসআই সুসেন দাসকে ধাক্কা মারে। পুলিশ অফিসার গুরুতর আহত হলে তাঁকে এসএসকেএম এবং পরে কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়।
পুলিশের প্রশ্ন, কীভাবে এত সহজে বাংলাদেশি আজাদ কলকাতায় এতদিন লুকিয়ে থাকতে পারল? আরও বড় প্রশ্ন— তার নামে প্রাইভেট গাড়ির নথি কারা তৈরি করে দিল? সেই গাড়ির কাগজপত্রে কার নাম ছিল? কার সহযোগিতায় গাড়ি চালানোর অনুমতি পেল সে?
পুলিশ এখন তদন্ত করছে— আজাদ কীভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করল, কে তাকে আশ্রয় দিল, এবং কোনও সংগঠিত দালাল চক্র এই কাজে যুক্ত কিনা।
কলকাতা পুলিশের তরফে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হয়েছে, যদি কোথাও কোনও সন্দেহজনক অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যায়, তাহলে তা যেন দ্রুত পুলিশকে জানানো হয়। বেআইনি অনুপ্রবেশ রুখতে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।