Fake Passport Case: বিরাটিতে ধৃত ওই পাকিস্তানি কীভাবে ভারতের পাসপোর্ট দিত বাংলাদেশিদের? ED তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ভুয়ো পাসপোর্ট দেখিয়ে এদেশে প্রবেশ, বসবাসের অভিযোগে ধৃত পাকিস্তানি নাগরিক আজাদ মালিককে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। প্রসঙ্গত, বাংলার মধ্যমগ্রাম ও নৈহাটির ঠিকানায় তার ভোটার কার্ড রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছিল। ওই পাকিস্তানি নাগরিক ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছিল। জাল নথি ব্যবহার করে বাংলায় থাকাকালীন সে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার খেলা শুরু করে।

Advertisement
 বিরাটিতে ধৃত ওই পাকিস্তানি কীভাবে ভারতের পাসপোর্ট দিত বাংলাদেশিদের? ED তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাকিস্তানি আজাদ বাংলাদেশিদের ভারতীয় পাসপোর্ট দিত কীভাবে? চাঞ্চল্যকর তথ্য ED তদন্তে

 ভুয়ো পাসপোর্ট দেখিয়ে এদেশে প্রবেশ, বসবাসের অভিযোগে ধৃত পাকিস্তানি নাগরিক আজাদ মালিককে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করল  এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। প্রসঙ্গত,  বাংলার মধ্যমগ্রাম ও নৈহাটির ঠিকানায় তার ভোটার কার্ড রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছিল। ওই পাকিস্তানি নাগরিক ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছিল।  জাল নথি ব্যবহার করে বাংলায় থাকাকালীন সে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার খেলা শুরু  করে। আজাদ হুসেন, যার আসল নাম আজাদ মালিক, ইন্দুভূষণ হালদারের সঙ্গে  মিলে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ভারতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল। উভয় ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বর্তমানে ইডির বিচারি বিভাগীয়  হেফাজতে রয়েছে।  

কলকাতা আঞ্চলিক কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ১১.১২.২০২৫ তারিখে কলকাতার বিশেষ আদালতে (পিএমএলএ) ইন্দুভূষণ হালদার ওরফে দুলাল এবং আরও চারজনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি নাগরিক আজাদ মালিক ওরফে আহমেদ হুসেন আজাদ ওরফে আজাদ হুসেনের মামলায় প্রথম সম্পূরক অভিযোগ দায়ের করে। কলকাতার বিশেষ আদালত সকল অভিযুক্তকে নোটিস  জারি করে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আজাদ মালিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি এফআইআরের ভিত্তিতে ইডি মামলার তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা গেছে যে পাকিস্তানি নাগরিক আজাদ হুসেন মোনা মালিকের ছেলে আজাদ মালিকের মিথ্যা পরিচয়ে ভারতে বসবাস করছিল এবং  অবৈধ কার্যকলাপ শুরু করেছিল। 

বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে হুসেন স্থানীয় একজন ব্যক্তির সাহায্য নেয়। প্রতিটি মামলার জন্য  ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল  ।  অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতি করে ভারতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ শুরু গয়। এই বছরের ১৫ এপ্রিল আজাদ মালিককে গ্রেফতার করা হয়। ১৩ অক্টোবর ইন্দুভূষণ হালদার ওরফে দুলালকে গ্রেফতার করা হয়। উভয় অভিযুক্ত বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে। তদন্ত চলাকালীন, আজাদ মালিকের সঙ্গে  সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়, যার ফলে অপরাধমূলক নথি এবং রেকর্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়। ইডির তদন্তে জানা গেছে যে আজাদ মালিক, ওরফে আহমেদ হুসেন আজাদ, ওরফে আজাদ হুসেন, একজন পাকিস্তানি নাগরিক। সে ভুয়ো ভারতীয় পরিচয়ে বাংলায় বসবাস করছিল। তার সহযোগীদের সহায়তায়, ভুয়ো তথ্য ব্যবহার করে আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং পাসপোর্ট সহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল।

Advertisement

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের জন্য সে  একটি হাওলা নেটওয়ার্কও পরিচালনা করছিল।  নগদ অর্থ এবং ইউপিআই-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হত। ইডির তদন্তে জানা গেছে যে আজাদ হুসেন ইন্দুভূষণ হালদার ওরফে দুলালের মাধ্যমে আজাদ মালিকের জাল পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে । আজাদ হুসেন ওরফে আজাদ মালিক ভারতীয় পাসপোর্ট পেতে আগ্রহী বাংলাদেশি ক্লায়েন্টদের ইন্দুভূষণ হালদারের কাছে পাঠাত। আজাদ হুসেন তার সহযোগী ইন্দুভূষণ হালদার ওরফে দুলালের সহায়তায়  জাল নথির ভিত্তিতে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করত। এরপর  এই জাল নথির ভিত্তিতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা হত।

পাসপোর্ট সহ সকল ভারতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করার জন্য তারা প্রায় ৫০,০০০ টাকা চার্জ করা হত। আজাদ হোসেন এবং ইন্দুভূষণ তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য প্রায় ৩০০-৪০০টি পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া করেছিল। ২৯টি পাসপোর্ট আবেদনের মধ্যে, ইন্দুভূষণ হালদার আয়কর রসিদ এবং পেমেন্ট স্লিপের কপি জমা দিয়েছিল। এগুলি অভিন্ন বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং আয়কর কর্তৃপক্ষের স্ট্যাম্প ছিল না। এই নথিগুলিতে প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প ছিল না। ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার উদ্দেশ্যে এগুলি স্পষ্টতই জাল করা হয়েছিল।  তদন্তের সময়, দেখা গেছে যে ইন্দুভূষণ হালদারের উল্লেখ করা কিছু পাসপোর্ট আবেদন এবং তার সঙ্গে  থাকা নথিতে অসংখ্য অসঙ্গতি ছিল।  এটি প্রমাণ করে যে পাসপোর্টগুলি জাল নথির ভিত্তিতে জারি করা হয়েছিল। তদন্তে জানা গেছে যে একটি ক্ষেত্রে, দুই ভাই তাদের পাসপোর্ট আবেদনে যথাক্রমে ০১.০১.১৯৮৮ এবং ০১.০৪.১৯৮৮ তারিখকে তাদের জন্ম তারিখ লিখেছিলেন, যা মাত্র তিন মাসের পার্থক্য, যা জৈবিকভাবে অসম্ভব।  অন্য একটি মামলায়, দুই ভাইয়ের জন্ম তারিখ যথাক্রমে ২৪.১০.১৯৭৫ এবং ২৪.০৫.১৯৭৬ হিসেবে লেখা হয়েছিল, মাত্র সাত মাসের পার্থক্য, যা  সন্দেহজনক। তদুপরি, তদন্তের সময়, দুই ব্যক্তির আরেক ভাইয়ের নামে  বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, যা তাদের বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দা বলে প্রমাণ করে।

ইডির তদন্তে আরও জানা গেছে যে, মেসার্স গোল্ডেনাইজ ফরেক্স অ্যান্ড ট্র্যাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড, একটি পূর্ণাঙ্গ মানি চেঞ্জার (এফএফএমসি) আরবিআইয়ের নিয়ম অনুসারে লাইসেন্সপ্রাপ্ত, এবং এর পরিচালকরা আরবিআইয়ের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে অননুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে জড়িত ছিল। তারা আজাদ হুসেন নামে একজন পাকিস্তানি নাগরিককে ভারতীয় পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও একটি বৈদেশিক মুদ্রা কাউন্টার পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছিল, কমিশনের বিনিময়ে কোনও সহায়ক নথি ছাড়াই জনসাধারণের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করেছিল।  আজাদ হুসেন, মেসার্স গোল্ডেনাইজ ফরেক্স অ্যান্ড ট্র্যাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড, এবং এর পরিচালকরা অন্যান্য এফএফএমসি বা এডি-II ব্যাঙ্ক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনেছিল এবং তারপরে কোনও আইনিভাবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়াই দেশীয় বাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করেছিল। আরবিআইয়ের নির্দেশিকা অনুসারে প্রয়োজনীয় নথিপত্র বজায় রাখা এড়াতে, তারা জালিয়াতির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ব্যক্তি/সত্তার নামে বিক্রয় দেখিয়েছিল, তাদের অজান্তে বা সম্মতি ছাড়াই তাদের নথি ব্যবহার করে। কোম্পানির পরিচালকরা অবৈধ তহবিল পাচারের জন্য তাদের কোম্পানির পরিকল্পিতভাবে অপব্যবহার করেছিল। বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির আড়ালে ৮০ কোটিরও বেশি অর্থ কোম্পানির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছিল। তদন্তে জানা গেছে যে এই লেনদেনগুলির বেশিরভাগই আসলে জাল নথি, জাল ক্যাশ মেমো এবং অসংখ্য গ্রাহকের ব্যক্তিগত পরিচয়ের অননুমোদিত ব্যবহার জড়িত। অধিকন্তু, ১৩ জুন, ২০২৫ তারিখে আজাদ হুসেন ওরফে আজাদ মালিক ওরফে আহমেদ হুসেন আজাদ (ভারতীয় নাগরিকের মিথ্যা পরিচয়ে ভারতে বসবাসকারী একজন পাকিস্তানি নাগরিক) এর বিরুদ্ধে ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪৪ এবং ৪৫ ধারায় একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল। 

Advertisement

POST A COMMENT
Advertisement