শিশু কন্যাকে খুন করে স্ত্রীকে খুনের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নিজের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তাতেও মৃত্যু না হওয়ায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করল এক চা শ্রমিক। সোমবার সকালে ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল শিলিগুড়ি মহকুমার অন্তর্গত নকশালবাড়ির ত্রিহানা চা বাগানের জাবরা ডিভিশনের শ্রমিক লাইনে। ঘটনার খবর পেয়ে নকশালবাড়ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মহিলাকে উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে পাঠায়। একইসাথে মৃত শ্রমিক ও তার কন্যার দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পাঠায়।
রাত পর্যন্ত সব স্বাভাবিক ছিল
নকশালবাড়ি ব্লকের বেলগাছি চা বাগানের বাসিন্দা প্রদুম প্রজা। তিনি ওই বাগানে অস্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি স্থানীয় একটি হোটেলে কর্মরত ছিলেন। রবিবার সকালে প্রদুমের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ও মেয়ে অনিকাকে নিয়ে নিজের বাপের বাড়ি জাবরা শ্রমিক লাইনে যায়। রাতে কাজ থেকে সরাসরি শ্বশুর বাড়ি চলে যায় প্রদুম প্রজা। রাতে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পরে।
ভোরে হঠাৎ দা নিয়ে তাণ্ডব প্রদুমের
স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মাটিতে শুয়ে পরে প্রদুম। আর খাটে শোয় শাশুড়ি রতিয়া ওঁরাও। ভোররাতে আচমকা ঘুম থেকে উঠে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় প্রথমে নিজের মেয়েকে কুপিয়ে খুন করে প্রদুম। তারপর স্ত্রী আটকাতে গেলে স্ত্রীকেও কোপাতে শুরু করে। চিৎকারে শাশুড়ি উঠে যায়। স্ত্রী ও শাশুড়ি মিলে অস্ত্রটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু উলটে প্রজা নিজের গলাতেই কোপাতে শুরু করে৷ অস্ত্রটি কোনমতে কেড়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান রতিয়াদেবী ও তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা।
রক্তাক্ত অবস্থাতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা
এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে প্রদুম। এদিকে চিৎকার শুনে ছুটে আসে স্থানীয়রা। তারা জখম অবস্থায় প্রিয়াঙ্কাকে হাসপাতালে পাঠায় ৷ জানা গিয়েছে ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রদুম প্রজা (২৩) এবং তার আড়াই বছরের শিশু কন্যা অনিকা প্রজার। পাশাপাশি আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রদুম প্রজার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রজাকে (ওঁরাও) স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভর্তি করেছে।
ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করছে পুলিশ
তবে ওই গৃহবধূর পরিস্থিতি সংকটজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, বাকি দেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে নকশালবাড়ি থানার পুলিশ। ঘটনাটি কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দার্জিলিং জেলা পুলিশের ডিএসপি রুরাল অচিন্ত্য গুপ্ত।
কেন খুন করল কিছু জানি না
রতিয়া ওঁরাও বলেন, "ঘুমের মধ্যে আচমকা দেখি প্রদূম মেয়ে আর নাতনিকে কোপাতে শুরু করেছে। আটকাতে গেলে মেয়েকেও কোপায়। আমি আর আমার মেয়ে কোনমতে প্রাণে বাঁচি। কিন্তু নাতনিকে বাঁচাতে পারলাম না। কেন খুন করল কিছু জানি না।" দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসি নেতা নির্জল দে বলেন, "খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কেন এরকম ঘটনা ঘটল তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।"