বাঘের ঘরেই ঘোগ বাসা বাঁধতে গিয়েছিল। কিন্তু তা আর হল না। ফোর্ট উইলিয়ামে প্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়ল ভুয়ো 'আর্মি অফিসার'। রীতিমতো BMW গাড়ি চড়ে ফোর্ট উইলিয়ামে এসেছিলেন তিনি।
ফোর্ট উইলিয়ামের ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। নিজেকে উচ্চপদস্থ সেনা অফিসার হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। প্রবেশের আগে, গেটেই তাঁর ভাবগতিক দেখে সন্দেহ হয় নিরাপত্তা আধিকারিকদের। কাগজপত্র দেখে কম্পিউটারে এন্ট্রি করতেই ধরা পড়ে যায় ওই যুবক। ১৫ মার্চের ঘটনা।
সেনা সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তির নাম বোরাদা সুধীর। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের বাসিন্দা। জাল পরিচয়পত্রে অবশ্য নাম ছিল মেজর এম এস চৌহান। ৫ম গোর্খা রাইফেলস (ফ্রন্টিয়ার ফোর্স) এর মেজর।
জানা গিয়ে গিয়েছে, গত ১৫ মার্চ ফোর্ট উইলিয়ামের পূর্ব গেটে পৌঁছান ওই যুবক। গেটে তাঁকে পরিচয়ের প্রমাণ দিতে বলা হয়। তখন তিনি মোবাইলে থাকা জাল পরিচয়পত্র দেখান।
অফিসারের এন্ট্রি-এক্সিট রেজিস্টারে তাঁর বিবরণ লিখতে বলা হয়। তখনই দেখা যায়, মোবাইল ফোনে একাধিকবার জাল পরিচয়পত্রটাই দেখিয়ে চলেছেন যুবক। তাই দেখেই সন্দেহ হয় নিরাপত্তা আধিকারিকদের।
গার্ড কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। এরপর ওই ব্যক্তিকে মিলিটারি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সুধীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে, জানা যায় এই প্রথম নয়। এর আগেও জালিয়াতি এবং প্রতারণার অভ্যাস আছে তাঁর। গত সেপ্টেম্বরে আইপিসির 420 ধারার অধীনে ওড়িশার একটি জুভেনাইল হোমেও ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মুক্তি পান।
মুক্তির পরেই ফের ময়ূরের পালক পরে নেন। কটকের হোটেল প্রাইডে গিয়ে ওঠেন। সেখানে ৬,৩৯৩ টাকার বিল না দিয়েই কেটে পড়েন।
এর পর ১৪ বিনা টিকিটেই হাওড়া রেলস্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে যান।
বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে, বিশ্ব বাংলা সরণীর নিকটস্থ এক ফাইভ-স্টার হোটেলে ফোন করেন। তাঁকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ক্যাব পাঠাতে বলেন।
বড় হোটেল। স্বাভাবিকভাবেই সেখান থেকে একটি ঝাঁ চকচকে BMW গাড়ি পাঠানো হয়। গাড়িতে উঠেই ড্রাইভারের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলেন সুধীর। নিজেকে রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী টিমের সেনা আধিকারিক হিসাবে পরিচয় দেন।
সেটাই বিশ্বাস করে নেন গাড়িচালক। তিনিও সুযোগ বুঝে আবদার করে বসেন, 'আমার মেয়েকে ডিফেন্স কোটায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেবেন?' একেবারে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সুধীর জানিয়ে দেয়, 'নিশ্চই'।
হোটেলে আসার পর, সেখান তাঁরা প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখান থেকে এনরোলমেন্টের কাজ শেষ করার জন্য ফোর্ট উইলিয়ামে আসেন। আর তারপরেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ে। ভুয়ো পরিচয় দিয়েও কীভাবে ফোর্ট উইলিয়ামের মতো জায়গায় প্রবেশের চেষ্টার সাহস পেলেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না সেনাকর্তারা।
এর আগেও ওই ব্যক্তি বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেল ও দোকানে ফেক ডিজিটাল পেমেন্ট করেছেন বলে জানা গিয়েছে। BHIM অ্যাপ ব্যবহার করে প্রথমে ঠিকঠাক পেমেন্ট করতেন। সেটা কম অঙ্কের টাকার। তারপর সেই পেমেন্টের নোটিফিকেশনের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতেন। সেটায় এডিট করে করে বারবার বড় বড় পেমেন্ট করেছেন বলে দেখাতেন।
কলকাতার বিলাসবহুল হোটেলে তাঁর রুম তল্লাশি করা হলেও কোনও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বা নথি পাওয়া যায়নি।
তদন্তকারীরা বলছেন, এর আগে হায়দরাবাদ পুলিশের কনস্টেবল সুনীল কুমার নামেও একটি আলাদা পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছিলেন। কটক এবং কলকাতার হোটেলেই চেক ইন করার সময় সেটা দেখিয়েছিলেন।
জেরায় যুবকের দাবি, তার বয়স ২৪ বছর। তিনি একজন বি.টেক ছাত্র৷ তবে সেটাও সত্য়ি না মিথ্যা ভেবে কুল পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা।