আন্ডারকভার পুলিশ শালিনী চৌহানকে মেডিকেলের ছাত্রী হিসেবে কলেজে পাঠান হয়মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের পুলিশ এমজিএম মেডিকেল কলেজের র্যাগিং মামলার সমাধান করেছে এক অনন্য উপায়ে। প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুলাই কলেজে র্যাগিংয়ের অভিযোগ পায় পুলিশ। মামলায় যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহের জন্য, পুলিশ আন্ডারকভার পুলিশ শালিনী চৌহানকে মেডিকেলের ছাত্রী হিসেবে কলেজে পাঠায়। শালিনী মিডিয়াকে জানিয়েছেন কীভাবে তিনি ব্লাইন্ড র্যাগিং কেস ফাঁস করেছেন।
শালিনী জানান, ৫ মাস আগে পুলিশের কাছে র্যাগিংয়ের অভিযোগ পেয়ে তিনি মেডিকেলের ছাত্রী হিসেবে কলেজে ভর্তি হন। এ সময় তিনি কলেজে বন্ধুত্ব করেন, ক্যান্টিনে সময় কাটান। কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শালিনী প্রায় ৫ মাস এই মিশনে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ব্লাইন্ড র্যাগিং মামলাটি উদঘাটনের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন।
শালিনী ক্যান্টিনে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা কাটাতেন
তিনি জানান, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কয়েকজন ছাত্রকে চিহ্নিত করেন যাদের ওপর আমাকে নজর রাখতে হত। আমি প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ক্যান্টিনে কাটাতাম, অল্প সময়ের ব্যবধানে। আমি এমন করত কারণ যাতে মনে হয়, সারাদিন ঘোরাঘুরি করি না, কাজও করি। ক্যান্টিনে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম। ধীরে ধীরে, আমরা যারা ফ্রেশারদের র্যাগিং করছিল তাদের চিহ্নিত করতে শুরু করি।
শিক্ষার্থীদের আচরণ লক্ষ্য করা হয়
শালিনী জানান, তিনি নিজেও সিনিয়র শিক্ষার্থীদের আচরণ লক্ষ্য করেছেন যাদের ওপর কর্তৃপক্ষ নজর রাখতে বলেন। তাদের আচরণ ছিল অত্যন্ত অভদ্র এবং আক্রমণাত্মক। তারপর শালিনী তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ রিপোর্ট দেন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চালান পেশ করবে পুলিশ
এরপর ১০ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জনকে প্রথমে আটক করে পরে জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে এখন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আদালতে চালান পেশ করবে পুলিশ। অভিযুক্ত ছাত্রদের মধ্যে প্রেম ত্রিপাঠী, ঋষভ রাজ, রাহুল প্যাটেল, উজ্জ্বল পান্ডে, রৌনক পতিদার, প্রভাত সিং, ক্রাপ্রাংশু সিং, চেতন ভার্মা এবং আরও ২ জন ছাত্র রয়েছে।
পুরো ব্যাপারটা কী ছিল?
ইন্দোরের মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজে সিনিয়র ছাত্রদের দ্বারা প্রথম বর্ষের ছাত্রদের র্যাগিংয়ের ঘটনাটি ২৪ জুলাই সামনে এসেছিল। জুনিয়র ছাত্ররা অ্যান্টি র্যাগিং হেল্পলাইনের মাধ্যমে সাহায্য চেয়েছিল। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধর ও হয়রানি করে বলে অভিযোগ ওঠে।
এভাবেই র্যাগিং চলত
র্যাগিং-এর শিকার ছাত্রদের অভিযোগ, সিনিয়র ছাত্ররা তাদের জোর করে অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাত। তাদের যেকোনো মহিলা ক্লাসমেটের নাম বেছে নিতে হত এবং তার সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করতে বলা হত। মেডিকেল কলেজের অ্যান্টি র্যাগিং সেল প্রাথমিক তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ আদালতে চালান পেশ করবে
সংযোগিতা গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তেহজিব কাজী জানান, অভিযোগের পর ১০ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন যে ব়্যাগিং-এর শিকার শিক্ষার্থীরা কলেজের পরিবর্তে একটি আবেদনের মাধ্যমে দিল্লির অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির কাছে তাদের অভিযোগ পাঠিয়েছিল। এরপর ডিন ডক্টর সঞ্জয় দীক্ষিতের নির্দেশে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক হয়। এরপর বিষয়টি পুলিশের কাছে পৌঁছায়। বর্তমানে ওই মামলায় ৮ শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেওয়ার পর তাদের জামিন দেওয়া হয়েছে। এখন পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আদালতে চালান পেশ করবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের র্যাগিং মামলায় এমজিএম মেডিকেলের ডিনকেও তথ্য দেওয়া হয়। র্যাগিং নিয়ে মিডিয়ার সামনে খোলাখুলি কিছু বলেননি ডিন সঞ্জয় দীক্ষিত। তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।