কসবায় সাউথ ক্যালকাটা আইন কলেজের ২৪ বছরে ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ। গ্রেফতার ৩। কেন ওই ছাত্রীর সঙ্গে এমন নির্মম নির্যাতন? নির্যাতিতার বক্তব্য,বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল মূল অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা মনোজিৎ মিশ্র। প্রস্তাব ফেরানোর জন্যই মনোজিৎ তাঁকে ধর্ষণ করে। কলেজ চত্বরে ঠিক কী ঘটেছিল, তা অভিযোগপত্রে বর্ণনা করেছেন ওই ছাত্রী।
নির্যাতিতার অভিযোগপত্রে ৩ জন অভিযুক্তের নাম রয়েছে। তারা হল- এম, পি এবং জে। পুরো নাম, মনোজিৎ মিশ্র (বয়স ৩১), প্রথম বর্ষের ছাত্র জইব আহমেদ (বয়স ১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (বয়স ২০র)। তরুণীর উপর নির্যাতন করছিল মনোজিৎ মিশ্র। মনোজিৎকে সাহায্য করে বাকি দু'জন। নির্যাতিতার অভিযোগ, অনুনয় করেও রেহাই মেলেনি। প্রেমিককে প্রাণে মারার, মা-বাবাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
নির্যাতিতার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২৫ মে পরীক্ষার ফর্ম পূরণের জন্য কলেজে গিয়েছিলেন। দুপুরে ফর্ম পূরণ হয়ে যায়। তারপর দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ইউনিয়ন রুমে যান। জে ইউনিয়ন রুমে ঢুকে বলে, সকলে যেন ইউনিয়ন রুমে থাকে। সেই আদেশ পালন করেন। ওই ব্যক্তি কলেজের প্রাক্তনী এবং বকলমে কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের প্রধান। এবং প্রভাবশালী। সকলেই ওর কথা শোনে। তাঁকে-সহ অনেককে টিএমসিপি-র বিভিন্ন পদে বসিয়েছিলেন। তাঁকে ছাত্রীদের সেক্রেটারি করেছেন।
নির্যাতিতার আরও বক্তব্য, জে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তরুণী বলেন,'আমি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানাই আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি ওঁকে ছাড়তে পারব না। আমরা ইউনিয়ন রুমে ফিরে যাই'। সন্ধে ৬টা ১০ মিনিটে ইউনিয়ন রুম ছেড়ে বেরিয়ে যান অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা। তিনিও বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। জে আটকে দেয়। তারপর দুই অন্য অভিযুক্ত পি এবং এম ইউনিয়ন রুমের বাইরে বেরয়ে যায়। বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া দরজা। ওয়াশরুমের দিকে জে টেনে নিয়ে যায় ওই ছাত্রীকে। শারীরিক সম্পর্কের জন্য জোর করতে থাকে।
নির্যাতিতা জানিয়েছেন,'ওকে অনুরোধ করি, আমায় ছেড়ে দিন। কিন্তু কোনও কথাই শোনেনি। আমার প্যানিক অ্যাটাক হয়। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এম এবং পি-কে ডাকে জে। রুবি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। ওরা শোনেনি। একটা ইনহেলার এনে দেওয়ার অনুরোধ করি। এম ইনহেলার এনে দেওয়ার পর ঠিক হই। পালাতে যাচ্ছিলাম, দেখলাম ওরা মেন গেট বন্ধ করে দিচ্ছে। আমি গার্ডের কাছে সাহায্য চাই। এম এবং পি জোর করে আমায় ইউনিয়ন রুমে নিয়ে যায়। জে-কে অনুনয়-বিনয় করি। ওর পা ধরি। ও এম এবং পি-কে বলে, আমায় গার্ড রুমে নিয়ে যেতে। নিরাপত্তারক্ষীকে যেন বাইরে রাখা হয়। ওরা সেটাই করে। এরপর জোর করে গার্ড রুমে নিয়ে যায়। নিরাপত্তারক্ষী নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার পোশাক খুলে ধর্ষণ করে। আমার দুটো ভিডিও রেকর্ড করে। আমি সহযোগিতা না করলে সেই ভিডিও সবাইকে দিয়ে দেবে বলে হুমকিও দেয়'।
তিনি আরও জানান,'আমার মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত লেগেছিল। ওরা আমায় ছাড়েনি। ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আমায় হকি স্টিক দিয়ে মারধর করতে চায়। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা ছেড়ে দিই। অর্ধমৃত অবস্থায় পড়েছিলাম। আমায় ধর্ষণ করে উঠে যায়। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে কোনও রকমে ওই ঘর থেকে বেরোই। জে আমায় হুমকি দিয়েছিল, এই সব কথা যেন বাইরে কাউকে না বলি। আমার ফোন ছিল এম-এর কাছে। ফোনটা নিই। বাবাকে ফোন করি। বাবাকে সবটা বলি। পুলিশের কাছে যেতে আমার ভয় করছিল। আমি জে-র ক্ষমতা জানি। ওর ক্ষমতাকে ভয় পাই। কিন্তু আজ আমি ঠিক করেছি পুলিশকে জানাব। তাই পুরো ঘটনাটা লিখলাম'।
পরিশেষে তিনি লিখেছেন,'আমি সুবিচার চাই। আইনের ছাত্রী হয়েও আমি নির্যাতিতা'।