কসবার খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।দু’জনেরই বয়স কুড়ির কোঠায়। একজন ডেলিভারি এজেন্ট, অন্যজন আপাত সাধারণ এক তরুণী। দক্ষিণ কলকাতার কসবার এক হোটেলে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট যুবকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ধৃত দুই অভিযুক্ত। CA আদর্শ লোসালালকারের সঙ্গেই এই দুই জন হোটেলে ঘর নিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এর পিছনে ডেটিং অ্যাপ মারফত সেক্স ব়্যাকেট চক্রের যোগ আছে বলেও ধারণা কলকাতা পুলিশের।
শনিবার দুপুর। কসবার হোটেল রুম থেকে আদর্শের দেহ উদ্ধার হয়। পায় তোয়ালে দিয়ে বাঁধা। মাথার পিছনে গভীর ক্ষত। পরে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায় শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ অভিযুক্ত ধ্রুব মিত্র ও কমল সাহাকে(তরুণী) আদর্শের রুমে ঢুকতে দেখা গিয়েছে। তার CCTV ফুটেজ আছে। এরপর রাত ২.৩০ এ তারা বেরিয়ে চলে যায়।
তদন্তে বেশ কিছু নতুন তথ্যও উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে আদর্শের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয়। ঘটনার দিনই প্রথম দেখা। জনপ্রিয় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ওই হোটেলে ২টি রুম বুক করেন আদর্শ। এরপর ঘটনার রাতে ৩ জনেই সেখানে পৌঁছান। আদর্শ ও তরুণী একটি রুমে ছিলেন। পাশের রুমে অপর যুবক।
তরুণীর দাবি, এরপর হঠাৎ কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সূত্রের খবর, সম্ভবত টাকাপয়সা নিয়ে তরুণীর সঙ্গে বচসার সূত্রপাত। এরপরেই 'মীমাংসা'র জন্য পাশের রুম থেকে 'পার্টনার' ধ্রুবকে ডাকেন তরুণী। ধ্রুব এরপর আদর্শদের ঘরে আসেন। বচলা গড়ায় হাতাহাতিতে। ধৃতদের দাবি, এসবের মাঝেই নাকি 'ধাক্কা খেয়ে' পড়ে যান আদর্শ। রক্তক্ষরণ হতে দেখে নাকি তরুণ তরুণী আতঙ্কে পালিয়ে যায়।
কিন্তু তাহলে পা তোয়ালে দিয়ে বাঁধা কেন? ধৃতদের দাবি, আদর্শ যাতে উঠে তাদের মারধর করতে না পারে, তার জন্যই নাকি পা বেঁধে পালানো। যদিও পুলিশের অনুমান, পিছন থেকে আঘাত করে পরে গলায় চেপে ধরা হয়। কারণ পোস্টমর্টেম রিপোর্টে শ্বাসরোধের লক্ষণ স্পষ্ট।
আদর্শের রুম থেকে অব্যবহৃত কন্ডোম উদ্ধার হয়েছে। তবে আদর্শের মোবাইল ও ওয়ালেট পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের সন্দেহ, খুনের পর হয়তো এগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তবে এখন একটিই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। এই দু’জন কি কোনও সেক্স র্যাকেটের অংশ? ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণত তরুণ, তরুণীরা প্রেমের সম্পর্ক গড়তে আলাপ, পরিচয় করেন। কিন্তু প্রথম আলাপেই হোটেল রুম, সঙ্গে পাশের ঘরে পুরুষ পার্টনার, এই সবই যে ডেটিং অ্যাপ কাজে লাগিয়ে সেক্স ব়্যাকেট চালনার লক্ষণ, তা বলাই বাহুল্য।
বীরভূমে বাড়ি আদর্শের। খুবই মেধাবী। চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্সির মতো কঠিন বিষয় নিয়ে পড়েছেন। গোটা বিষয়টিতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর বাবা বিমল লোসালালকার। বলেন, 'ছেলে খুব হাসিখুশি স্বভাবের ছিল। অফিসে প্রমোশন পাচ্ছিল। কে যে ওর শত্রু হতে পারে বুঝতে পারছি না…'
এই জাতীয় অপরাধের বাড়বাড়ন্তে চিন্তিত কলকাতা পুলিশ। গত কয়েক মাসে শহরের বিভিন্ন হোটেল রুম থেকে একাধিক দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। আর সেই কারণেই এবার শহরের সমস্ত হোটেলের জন্য কড়া নজরদারির গাইডলাইন আনতে চলেছে লালবাজার।