মধ্যমগ্রাম খুন কাণ্ডে দোষী ফাল্গুনী ঘোষ ও আরতি ঘোষসাতসকালে টুকরো টুকরো দেহ ব্যাগে ভরে গঙ্গায় ফেলে দিচ্ছিল মা ও মেয়ে। কলকাতার কুমোরটুলি ঘাটে স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তারপর তদন্তে উঠে আসে, সুমিতা ঘোষ নামে এক মহিলাকে খুন করে মা ও মেয়ে মিলে দেহ টুকরো করে ব্যাগে ভরে গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। সেই ফাল্গুনী ঘোষ ও তার মা আরতি ঘোষকে যাবজ্জীবন কারাবাস ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করল আদালত। অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড। একই সঙ্গে খুন করে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অপরাধে ৭ বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
দুজনে একটি ট্রলি ব্যাগ গঙ্গায় ফেলতে যাচ্ছিল
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে কুমোরটুলি ঘাটে ফাল্গুনী ও আরতি, দুজনে একটি ট্রলি ব্যাগ গঙ্গায় ফেলতে যাচ্ছিল। সেই সময় সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাদের ঘিরে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ট্রলি ব্যাগ খুলতেই দেখা যায়, এক মহিলার টুকরো টুকরো দেহ। আসলে ট্রলি ব্যাগ থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল। দুজনকে জেরা করে জানা যায়, মধ্যমগ্রামে বীরেশপল্লি এলাকায় সুমিতা ঘোষ নামে একজনকে খুন করেছে তারা। সুমিতা ছিলেন আরতির পিসিশাশুড়ি। রাতে খুনের পরে মা-মেয়ে সুমিতার দেহ নতুন ট্রলি ব্যাগে ঢোকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ওই ট্রলিতেও পা-সহ পুরো শরীরের জায়গা না হওয়ার অস্ত্র দিয়ে হাঁটুর কাছ থেকে পা কাটে এবং নতুন ট্রলি ব্যাগের দেহের টুকরোগুলি ভরে ফেলে।
প্রথমে দুই মহিলা এটি কুকুরের দেহ বলে জানায়
যতক্ষণ পুলিশ আসছে, ততক্ষণ সবাই মিলে দুই মহিলাকে বারবার প্রশ্ন করতে থাকেন। ব্যাগ খুলে দেখা যায় তাতে কাপড় জড়ানো পচাগলা দেহ। প্রথমে দুই মহিলা এটি কুকুরের দেহ বলে জানায়। স্থানীয়দের দাবি, পরে চাপের মুখে তারা এটি পিসিশাশুড়ির দেহ বলে। পরে আবার বয়ান পাল্টে বলেন, 'ননদ'। পুরো বিষয়টি ঘিরে তীব্র উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়। জনতা কার্যত মারমুখী হয়ে ওঠে।
দেহাংশের ময়নাতদন্তে দেখা যায়, দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। ঘাড়, হাত ও বাহুতে আঘাতের চিহ্ন। ডান ঘাড়, ডান বাহু, ডান হাত, বাম হাত এবং বাহুতে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। মাথার গুরুতর ক্ষত। ডানদিকের টেম্পোরাল অঞ্চলে গভীর ক্ষত। মাথার বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। উভয় পায়ের গোড়ালিতে আঘাতের চিহ্ন। মাথার খুলিতে রক্ত জমাট বাঁধা।
কীভাবে ও কেন খুন?
মধ্যমগ্রামের স্থানীয়দের দাবি, ভাড়া নিয়ে থাকত ফাল্গুনী ও আরতি। তাঁদের সঙ্গে থাকতেন পিসি শাশুড়ি সুমিতা। প্রতিবেশীদের কথায়, প্রায়শই পিসি শাশুড়ির সঙ্গে ফাল্গুনী ও আরতির বচসা লেগেই থাকত। ঘটনার আগের দিনগুলিতেও বচসা চরমে ওঠে বলে দাবি করেন তাঁরা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, তাঁদের ভাড়া থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্যও বাড়িওলার কাছে আর্জি করেছিল তারা। জেরায় মহিলারা জানিয়েছে, রাতে পিসিশাশুড়ির সঙ্গে মা-মেয়ের বচসা চরমে ওঠে। সেই সময়ই সম্ভবত মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়।