একদিন হঠাৎ দেখলেন আপনার ছোটবেলার বা হাইস্কুলের কোনও এক বন্ধু আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেছে। ডিপি দেখে পুরনো বন্ধুকে একদম চেনার উপায় নেই! চেনার কথাও নয়, সেই কোনকালে যে শেষ দেখা হয়েছিল তাই মনে করতে পারছেন না! এত বছরে তো আবার গোঁফ দাড়ি গজিয়ে চেহারায় আমূল পরিবর্তন। কিন্তু সেই বন্ধু রীতিমতো আপনার অন্যান্য সহপাঠীদের নাম, শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা স্কুল জীবনের খুঁটিনাটি দিব্যি মনে করিয়ে দিচ্ছে! তাই দেখে দুম করে আপনি বিশ্বাসও করে গেলেন, সে আপনার বাল্যবন্ধু। এই করেই শুরু হল ছেলেবেলার স্মৃতিচারণা এবং তা থেকেই ফের গাঢ় বন্ধুত্ব। দিন তিনেক কথাবার্তা চালানোর পর হঠাৎ জানতে পারলেন, আপনার সেই 'বাল্যবন্ধু' বিদেশে গিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছে এবং তার এই মুহূর্তে কিছু টাকার প্রয়োজন। বিপদের সময় 'বন্ধুর' পাশে দাঁড়াতে আপনিও আগে-পিছে বিন্দুমাত্র না ভেবেই টাকা পাঠিয়ে দিলেন দ্রুত। এমন ঘটনা যদি আপনার সঙ্গে ঘটে থাকে, তাহলে এখনই সতর্ক হোন। সতর্কবার্তা দিচ্ছেন খোদ কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা। কারণ, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্যনতুন অপরাধের ধরণ বদলাচ্ছে প্রতারকরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু ছেলেবেলার বন্ধু পরিচয় দিয়েই নয়, অনেক সময় পরিচিত, বন্ধু, প্রতিবেশী বা সহকর্মীর ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি লাগিয়ে তার নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে মেসেজ করা হচ্ছে। কাজের ব্যস্ততায় বা দৈনন্দিন জীবনের ইঁদুর দৌড়ে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর পরিচয়ের সত্যতা যাচাই করছেন না অনেকেই। কেউ কেউ আবার হোয়াটসঅ্যাপে একদম চেনা 'ডিপি' দেখেই বিশ্বাস করে ফেলছেন 'বন্ধুকে'। একটা ফোন করে পরিচয় যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করছেন না। আর সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই বোনা হচ্ছে প্রতারণার জাল। সম্প্রতি এই ভাবেই বন্ধু ভেবে টাকা দিয়ে সাহায্য করার পর, প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে লালবাজারের বা স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হচ্ছেন বহু মানুষ। পুলিশ সূত্রে খবর, সাম্প্রতিক কালে এমন অসংখ্য অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।
লালবাজার সূত্রে খবর, এক্ষেত্রে যাকে নিশানা করা হচ্ছে তার ফেসবুক-সহ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল ঘেঁটে তার সম্পর্কে সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিয়ে, তবেই তৈরি করা হচ্ছে অপরাধের ব্লু প্রিন্ট। ফলে সহজেই বিশ্বাস করে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। তবে এই ধরনের অপরাধে প্রযুক্তির জটিলতায় অপরাধীদের নাগাল পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। এক গোয়েন্দা আধিকারিকের দাবি, "এই ধরনের অভিযোগের তদন্তে নেমে ক্লু বলতে, একটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার এবং গুগোল পে বা ফোন পে আইডি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। পরে দেখা যাচ্ছে, অপরাধে ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটিও ভুয়ো। এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ব্যাঙ্ক একাউন্ট গুলিও অন্যের নামে নেওয়া থাকে। তাই আসল অপরাধীর কাছে পৌঁছানো যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ হয়ে উঠছে"। আরেক গোয়েন্দা কর্তা জানান, "একাধিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরে তদন্তও দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে, কেউ ছাড় পাবে না"। তবে এই ধরনের অপরাধ মূলত রাজস্থানের ভরতপুর এবং ভরতপুর সংলগ্ন আশেপাশের কয়েকটি জেলা থেকেই সংঘটিত হচ্ছে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে। লালবাজারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "আমাদের কাছে এই ধরনের অসংখ্য অভিযোগ এসেছে। সব অভিযোগের তদন্ত করছে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ, খুব শীঘ্রই অপরাধীরা ধরা পড়বে বলে আমরা আশাবাদী। তবে সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। পরিচয়ের সত্যতা যাচাই না করে যাকে-তাকে অনলাইনে টাকা পাঠাবেন না"।