বিয়ের এক মাসও হয়নি। এর মধ্যেই খুন স্বামী। খুনের অভিযোগ নববধূ ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, স্বামীকে খুন করতে ব্যাঙ্ককর্মী প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন নববধূ। সেই ব্যক্তি যদিও বর্তমানে পলাতক। আশ্চর্যের বিষয়টি হল, এই ব্যাঙ্ককর্মী প্রেমিকের সঙ্গেই নাকি নববধূর মায়েরও দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলের এই ঘটনা রীতিমতো শিউড়ে ওঠার মতো।
গলা-কাটা দেহ উদ্ধার
মৃত যুবকের নাম তেজেশ্বর (৩২)। পেশায় প্রাইভেট ল্যান্ড সার্ভেয়ার। গত ১৭ জুন তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অন্ধ্রপ্রদেশের পানিয়াম থানা এলাকায় এক নির্জন স্থানে তাঁর দেহ মেলে। গলা-কাটা রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় সেই সময় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় তেলেঙ্গানা-অন্ধ্রপ্রদেশে।
বিয়ের পাঁচদিন আগে হঠাৎ পালিয়েছিল কনে!
গত ১৮ মে তেজেশ্বরের সঙ্গে কুরনুলের ঐশ্বর্যর বিয়ে হয়। জানা গিয়েছে, বিয়ের মাত্র পাঁচ দিন আগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি আচমকা নিখোঁজ হয়ে যান ঐশ্বর্য। স্থানীয়রা সেসময় দাবি করেন, তিনি সম্ভবত কুরনুলের এক প্রভাবশালী ব্যাঙ্ক ককর্মীর সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ফিরে এসে জানান, মা পণের টাকা জোগাড় করা নিয়ে চাপে ছিলেন। অশান্তি সহ্য করতে না পেরে তিনি এক বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে ছিলেন।
সারাক্ষণ ফোনেই ব্যস্ত
পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কোনওমতে বিয়ে হয় ঠিকই, কিন্তু দাম্পত্য সুখী হয়নি।তেজেশ্বরের পরিবারের অভিযোগ, ঐশ্বর্য বিয়ের পরদিন থেকেই সারাক্ষণ মোবাইল ফোনেই ব্যস্ত থাকতেন। বিশেষ কথা বলতেন না।
বিয়ের এক মাসের মাথায় ১৭ জুন তেজেশ্বর হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁর ভাই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এর অল্প পরেই তেজেশ্বরের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়।
মা-মেয়েকে দু'জনের সঙ্গেই সম্পর্ক
তদন্তে নেমেই পুলিশ ঐশ্বর্য ও তাঁর মাকে জেরা করেন। পুলিশি জেরার মুখে ভেঙে পড়ে মা-মেয়ে। জেরায় ঐশ্বর্য ও তাঁর মা সুজাতা দু’জনেই জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরেই এক ব্যাঙ্ককর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিল। প্রথমে মা সুজাতার সঙ্গেই ওই ব্যাঙ্ককর্মীর প্রেম ছিল। পরে মেয়ে ঐশ্বর্যও সেই একই ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
এক মাসে ২ হাজার বার ফোন কল
ঐশ্বর্যর কল রেকর্ড দেখেও চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারীদের। দেখা যায়, বিয়ের পরও এক মাসে ঐশ্বর্য ব্যাঙ্ককর্মীকে ২ হাজার বারেরও বেশি ফোন কল করেছেন।
এই সবকিছু থেকেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, খুনের পিছনে এই সম্পর্কের জটিলতাই কারণ হতে পারে। অন্যদিকে তেজেশ্বরের সম্পত্তি হাতানোও মোটিভ হতে পারে। ব্যাঙ্ককর্মীর খোঁজে নামে পুলিশ।
ব্যাঙ্ককর্মীর বিরুদ্ধে ভাড়াটে খুনি নিয়োগের অভিযোগ
তদন্তে জানা যায়, ১০ একর জমির সার্ভের নাম করে তেজেশ্বরকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। গাড়িতে তোলা মাত্রই তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে ব্যাঙ্ককর্মীর নিযুক্ত ভাড়াটে খুনিরা। নির্মমভাবে খুন করে দেহ ফেলে দেওয়া হয় সুগলিমেট্টু এলাকায়।
পুলিশ ইতিমধ্যেই ঐশ্বর্য ও তার মা সুজাতাকে গ্রেফতার করেছে। পলাতক ব্যাঙ্ককর্মী ও ভাড়াটে খুনিদের খোঁজে চলছে তল্লাশি।
মেঘালয় মার্ডারের ছায়া
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মেঘালয়ে হানিমুনে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন নববিবাহিত রাজা রঘুবংশী এবং তাঁর স্ত্রী সোনম। গত ২ জুন রাজার দেহ উদ্ধার হয়। রাজাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন সোনম, তাঁর প্রেমিক রাজ এবং তিন ভাড়াটে খুনি। জানা যায়, প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেই রাজাকে খুনের চক্রান্ত করেছিল সোনম।