পাকড়াও জালিয়াত।-ফাইল ছবিউত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে ধরা পড়া এক ভুয়ো আইএএস অফিসারের কীর্তিকলাপ যেন যেন সিনেমাকেও হার মানায়। এমএসসি পাশ করা গৌরব কুমার সিং ওরফে ললিত কিশোর কোচিং শিক্ষক হিসেবে শুরু করেছিলেন, কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই বড়লোকি ও ক্ষমতার মায়াজালে জড়িয়ে পড়েন। এরপরই তৈরি করেন এক ভয়ানক প্রতারণার জাল, নিজেকে আইএএস অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতানোর চক্রান্ত।
আইএএস সেজে বিলাসবহুল বাহাদুরি
দিনে টিউশন পড়ালেও রাতারাতি তিনি তৈরি করে ফেলেন ভুয়ো 'আইএএস লাইফস্টাইল' সাদা ইনোভা গাড়ি, তার ওপর লাল-নীল বাতি। সঙ্গে কয়েকজন অনুসারী; গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো। এই বাহাদুরিতেই তিনি চারজন প্রেমিকা জুটিয়ে ফেলেছিলেন। এদের মধ্যে তিনজনই নাকি গর্ভবতী।
বিহারের ভাগলপুরে একবার সত্যিকারের এসডিএমের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারান গৌরব। রাগের মাথায় দুই চড় বসিয়ে দেন ওই অফিসারকে। আশ্চর্যের বিষয়, এসডিএম সাহেব পাল্টা কোনও অভিযোগও করেননি।
৯৯ লক্ষ টাকার দুর্নীতি তদন্তে গ্রেফতার
বিহারে ভোটের সময় হওয়া ৯৯ লক্ষ টাকার একটি কেলেঙ্কারির তদন্তে নাম জড়ায় এই ভুয়োআইএএসের। গোরক্ষপুর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে সামনে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। গৌরব চারটি রাজ্যে প্রতারক নেটওয়ার্ক চালাতেন। সরকারি টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এআই ব্যবহার করে জাল নথি বানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
৪৫০ কোটি টাকার টেন্ডারের লোভ দেখিয়ে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া
এক ব্যবসায়ীকে ৪৫০ কোটি টাকার টেন্ডার পাইয়ে দেবেন বলে ৫ কোটি টাকা এবং দুটি ইনোভা গাড়ি আদায় করেন তিনি। তার শ্যালক অভিষেক জাল আইএএস আইডি, নেমপ্লেট ও সফটওয়্যার-ভিত্তিক নথি তৈরি করতে সাহায্য করত।
কোচিং থেকে শুরু প্রতারণা
২০১৯ সালে গণিতে এমএসসি করার পর সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নেন। পরে সীতামারহিতে 'আদিত্য সুপার ৫০' নামে কোচিং শুরু করেন। সেখানকার এক ছাত্রীকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২ লক্ষ টাকা নেন। প্রতিশ্রুতি রাখতে না পেরে প্রথম এফআইআরটি তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয়। জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
প্রেমের নাটক, ৪ বান্ধবী, ৩ জন গর্ভবতী
আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এক তরুণীকে বিয়ে করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় প্রতারণার আসল খেলা, ফেসবুকে ভুয়োআইএএস পরিচয়ে মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো। পুলিশ তাঁর মোবাইল ঘেঁটে নানা ব্যক্তিগত চ্যাট পেয়েছে, যাতে চারজন বান্ধবীর সম্পর্কে তথ্য মিলেছে, এদের মধ্যে তিনজনই গর্ভবতী ছিলেন। কাউকেই তিনি তার বিয়ে বা প্রকৃত পরিচয় জানাননি।
চার রাজ্যে জালিয়াতির জাল
গোরক্ষপুর শহরের এসপি অভিনব ত্যাগীর দাবি, এই নেটওয়ার্ক আরও বড় হতে পারে। বিহার, ঝাড়খণ্ড ও মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হয়েছে, কারণ প্রতারণার ধাঁধায় আরও অনেক চক্র জড়িত থাকতে পারে।