
আল ফালাহ একটি আরবিক শব্দবন্ধ। যার অর্থ, সাফল্য, সমৃদ্ধি এবং কল্যাণ। ফরিদাবাদের অন্যতম নামী মেডিক্যাল কলেজ। ভারতেও বেশ খ্যাতি। তারপর ১০ নভেম্বর দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটল। এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলছে। আল ফালাহ স্কুল অফ মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে সব ধারণা বদলে গেল নিমেষে। ডাক্তার নয়, জিহাদি তৈরির প্রতিষ্ঠান। এই তো সে দিন, ২০১৯ সালে আল ফালাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচের ডাক্তারি ছাত্র-ছাত্রীরা বেরলেন।

অভিযোগ, এই বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল। দিল্লি বিস্ফোরণের প্লট তৈরি হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানেই। এই সব না ঘটলে, আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও প্রতিষ্ঠাতা জওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকি এখন বোধহয় ব্যস্ত থাকতেন তাঁর জন্মদিনের পার্টির আয়োজন নিয়ে, জামিয়া নগরের তাঁর বিলাসবহুল বাড়ি ‘আল-ফালাহ হাউস’-এ।

৬১ বছর বয়সী জাওয়াদ ১৯৬৪ সালের ১৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যপ্রদেশে কেটেছে ছেলেবেলা। ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মস্থানে। পরে ওই শহরের নামও হয় আম্বেদকরের নামে। লিঙ্কড ইন প্রোফাইল অনুযায়ী, জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকি ইন্দোরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে BTech করে। পরে পরিবার দিল্লিতে চলে যান।

ইন্ডিয়া টুডে-কে জাওয়াদের এক প্রাক্তন সহকর্মী জানিয়েছেন, জাওয়াদ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেকচারার পদে ১৯৯৩ সালে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে যোগ দেন। কিন্তু ওর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল অনেক। জামিয়াতে পড়ানোর সময়ই ভাই সাউদের সঙ্গে মিলে ব্যবসা শুরু করে। বেশ কিছু ছোট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে। তার মধ্যে আল ফালাহ ছিল। যে আল ফালাহ এখন দুজনকেই সন্ত্রাসের ছক কষার অভিযোগে তিহাড় জেলে পাঠাল।

জামিয়া থেকে জেল। জাওয়াদের সফরে উত্থান ও পতন। জাওয়াদ যখন আল ফালাহ গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করে, তখন তার বেশ কয়েকজন সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবকেও বিনিয়োগ করতে বলে। প্রতিশ্রুতি দেয়, মোটা টাকা রিটার্নের। প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। ২০০০ সালে কে আর সিং নামে এক ব্যক্তি জাওয়াদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে FIR দায়ের করেন। জাওয়াদকে গ্রেফতার করা হয়। দুই ভাই সেই সময় তিন বছর জেলে ছিল।

মার্চ ২০০৩ এ তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিল, অভিযোগ অনুযায়ী ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (FSL) রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছিল। এমনকী কিছু অচল বা অকার্যকর কোম্পানির নামে টাকা তোলা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল অর্থ ব্যক্তিগত হিসাবে ঘুরিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে অভিযুক্তরা।

শেষ পর্যন্ত জাওয়াদ ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামিন পায় এবং ২০০৫ সালে পাটিয়ালা কোর্ট তাঁকে মামলায় বেকসুর খালাস করে। তবে তার আগে তিনি ও তাঁর ভাই বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত অর্থ ফেরত দিতে রাজি হয়েছিল।

বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে আল ফালাহ স্কুল অফ মেডিকেল সায়েন্সেস বেশ ভাল ভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে কলেজটি কাশ্মীর থেকে বহু চিকিৎসক নিয়োগ করতে থাকে, মূলত তুলনামূলকভাবে কম বেতন দেওয়ার সুযোগে। ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায়, এর পর থেকে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ক্রমশ রক্ষণশীল হয়ে উঠতে থাকে। ব্যবস্থাপনা বিষয়টি জানলেও তারা তা উপেক্ষা করে।

একই সূত্রের দাবি, দিল্লি বিস্ফোরণের পরদিন যিনি গ্রেফতার হন এবং যাঁর নাম জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে যুক্ত, সেই ডাক্তার শাহিনা সইদ প্রায়ই সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয়ভাবে আরও অনুগত হতে উৎসাহ দিতেন এবং হিজাব, বোরখা পরার পরামর্শ দিত। এ কারণে তাঁকে একাধিকবার সতর্কও করা হয়েছিল।

কোভিড ১৯ মহামারির সময়, আল ফালাহ হাসপাতালের নার্সদের অভিযোগ ছিল, উচ্চ-ঝুঁকির পরিবেশে কাজ করার জন্য জীবনবিমা দাবি করায় তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। গত বছরও মেডিক্যাল ইন্টার্নরা কলেজের নিম্নমানের পরিকাঠামো ও বকেয়া ভাতার প্রতিবাদ করলে তাঁদের সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়। জাওয়াদ এতদিন পর্যন্ত এই সমস্ত বিতর্ক সামলাতে পেরেছিল। কিন্তু তার মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত একাধিক চিকিৎসকের জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় এখন আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত সংস্থা NIA-র তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রয়েছে।