বুধবারই খবরটা পাওয়া গিয়েছিল। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। আর এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে অশনি। এবার নাম দিয়েছে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা। অশনি কথার অর্থ হল বজ্র বা বাজ।
গতবার এপ্রিল পর্যন্ত কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা ছিল না। এবার যা পরিস্থিতি তাতে চলতি মার্চেই বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড় বাংলার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে তার বিশ্লেষণ করতেই এখন ব্যস্ত আবহবিদরা। এখনও পর্যন্ত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ । আন্দামানের কাছে এসে শক্তি বাড়াবে এই ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ আন্দামান সাগরে এসে সুষ্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে অশনি।
গতিবেগ কত হতে পারে
মৌসম ভবন জানিয়েছে রবিবার বাতাসের গতিবেগ ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় হতে পারে, যা পরের দিন ৯০ কিলোমিটার ঘণ্টায় পৌঁছতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা জানায়নি আবহাওয়া মন্ত্রক। অর্থাৎ যশ ও জাওয়াদের স্মৃতি অশনি ফিরিয়ে আনবে কিনা তা জানতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
একাধিক সিস্টেম
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ। এছাড়াও বিহার থেকে উড়িষ্যা পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা রয়েছে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকবে আগামী রবি ও সোমবার নাগাদ উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
অশনি নিয়ে হাওয়া অফিস যা বলছে
দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ। এই নিম্নচাপ দক্ষিণবঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের কাছাকাছি এসে আরো শক্তিশালী হবে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগরে এটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে শনিবার। এখান থেকে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে সুস্পষ্ট নিম্নচাপ। রবিবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে আর সোমবার অর্থাৎ ২১ মার্চ এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হবে এই ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে প্রাথমিকভাবে এগোবে। পরে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে বাঁক নেবে। বুধবার নাগাদ বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলে স্থলভাগে প্রবেশ করার সম্ভাবনা। এর সরাসরি প্রভাব নেই আমাদের রাজ্যে।
আমাদের রাজ্যে কতটা প্রভাব পড়বে?
এখনও পর্যন্ত হাওয়া অফিস যা বলছে, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব না পড়লেও বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকবে আমাদের রাজ্যে। এর ফলে শুষ্ক আবহাওয়ার মাঝেই জলীয়বাষ্প বাড়তে থাকায় অস্বস্তিও ধীরে ধীরে বাড়বে।
অন্যান্য রাজ্যে কেমন প্রভাব
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, কোথাও কোথাও প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা। সঙ্গে ৩০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রবি ও সোমবার নাগাদ। এছাড়া দক্ষিণ ভারতের দু-একটি রাজ্যে বিশেষ করে কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাডু, পন্ডিচেরি ও করাইকাল এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা। রবি ও সোমবার নাগাদ বৃষ্টি হতে পারে উত্তর-পশ্চিম ভারতের দু-একটি রাজ্যেও।
তাপপ্রবাহেরও সতর্কতা
দক্ষিণের রাজ্যগুলি ছাড়া সারা ভারতে বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা বাড়বে, তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা থাকবে। গুজরাও ও রাজস্থান অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সর্তকতা রয়েছে। তাপপ্রবাহ হতে পারে সৌরাষ্ট্র, কচ্ছো এবং কঙ্কন এলাকায়। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং মধ্য ভারতের কিছু রাজ্যে। ছত্রিশগড় ওড়িশাতেও তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তা রয়েছে
দোলে কেমন থাকছে বাংলার আবহাওয়া?
বাংলায় বসন্তের পরিবেশে বাড়ছে গরম। আগামীদিনে আরো তাপমাত্রা বাড়তে পারে। সকাল ও সন্ধ্যায় শীতের আমেজ উধাও হবে। আপাতত বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বেলা বাড়লে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
কলকাতার আবহাওয়া
বাতাসে জলীয় বাষ্প এবং তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে সকালে হালকা কুয়াশা থাকবে। তবে বেলা বাড়লে মূলত পরিষ্কার আকাশ। বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই । আজ সকালে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.৬ ডিগ্রি। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৪ ডিগ্রি। বাতাসে জলীয়বাষ্পের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৮৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় কোন বৃষ্টি হয়নি।