'হর কাম দেশ কে নাম'... এটি INAS 316 এর নীতিবাক্য। যা গোয়ায় বোয়িং P-8I বিমানের এয়ার স্কোয়াড্রন। আজ অর্থাৎ ২৯ মার্চ ২০২২ এই স্কোয়াড্রনের কমিশনিং। এই শক্তিশালী রিকনেসান্স এয়ারক্রাফ্টগুলি INS Hansa-তে মোতায়েন করা হচ্ছে। গোয়ায় ইতিমধ্যেই ৬টি পোসেইডন বিমান রয়েছে। নতুন এয়ারক্রাফট আসার ফলে ভারতীয় নৌবাহিনী ভারত এবং আরব সাগরে শত্রুর প্রতিটি গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারবে।
P-8I শুধুমাত্র সামুদ্রিক নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয় না। এটি স্থল এবং আকাশ নজরদারিতেও সাহায্য করে। এটি নজরদারি, গুপ্তচরবৃত্তির পাশাপাশি আক্রমণের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর থেকে নির্গত ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুর যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনকে নিমিষেই ধ্বংস করতে পারে। INAS 316 এর নাম দেওয়া হয়েছে The Condors।
এটি হবে ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্বিতীয় P-8I বিমান স্কোয়াড্রন। এর আগে নৌবাহিনী ২০১৩ সালে ৮টি পোসেইডন বিমানের প্রথম ব্যাচ পেয়েছিল। সেগুলি এই সমস্ত INS রাজালি তামিলনাড়ুতে INAS 312 আলবাট্রোস নামে মোতায়েন রয়েছে। গোয়ায় দ্বিতীয় স্কোয়াড্রন গঠনের পর পশ্চিমী সামুদ্রিক এলাকায় নজরদারি করা সহজ হবে। ভারতীয় জলসীমায় কোনও শত্রুর কার্যকলাপ রেকর্ড করা হলে তা অবিলম্বে বন্ধ বা নির্মূল করা সম্ভব হবে।
P-8I হল একটি অত্যন্ত জটিল মাল্টি-রোল লং রেঞ্জ মেরিটাইম রিকনেসান্স এবং অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার (LRMR ASW) বিমান। এয়ার-টু-শিপ মিসাইল এবং টর্পেডো এই বিমানে মোতায়েন করা যাবে। লাদাখে চিনের সঙ্গে সংঘর্ষের সময়, চিনা কার্যকলাপের স্পষ্ট ছবি তোলার জন্য পোসেইডন বিমান মোতায়েন করা হয়েছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর চারপাশের সামুদ্রিক ও স্থল সীমান্তের ওপর নজর রাখতে আরও অন্তত ৬টি বিমান প্রয়োজন।
আরও পড়ুন - 'নিজের ওপরেই প্রয়োগ করবো', বললেন আত্মহত্যার মেশিনের আবিষ্কর্তা
ভারত মহাসাগরে কৌশলগতভাবে নজরদারির জন্য এই বিমানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ঘন্টা উড়ান সম্পন্ন করেছে এই বিমান। বোয়িং পোসেইডনের চারটি ভেরিয়ান্ট বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। এই রূপগুলি হল P-8A Poseidon যা মার্কিন নৌবাহিনী দ্বারা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। P-8I নেপচুন- এটি ভারতীয় নৌবাহিনী ব্যবহার করছে। Poseidon MRA1 রয়্যাল এয়ার ফোর্স ব্যবহার করছে। আর P-8 AGS ব্যবহার করছে মার্কিন বিমান বাহিনী। এবার জেনে নেওয়া যাক বিমানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
এই বিমানে মোট ৯ জন বসতে পারবেন। দুজন ফ্লাইট ক্রু, আর বাকিরা মিশনের জন্য কাজ করেন। বিমানটি মোট ৯,০০০ কেজি ওজন তুলতে পারে। এর দৈর্ঘ্য ১২৯.৫ ফুট। উইংসস্প্যান ১২৩.৬ ফুট। উচ্চতা ৪২.১ ফুট। যদি প্লেনটি খালি থাকে তবে এর ওজন ৬২,৭৩০ কেজি। টেকঅফের সময় সর্বোচ্চ ওজন ৮৫,৮২০ কেজি।
#IndianNavy's new long range maritime reconnaissance (LRMR) air squadron INAS 316 to be commissioned at #INSHansa, Goa on #29Mar 22
— SpokespersonNavy (@indiannavy) March 27, 2022
Nicknamed 'The Condors', INAS 316 will operate the potent LRMR P-8I aircraft
A sneak peak into the historic moment that will unfold on#29Mar 22. pic.twitter.com/zshuKzSIyt
এটি 2 CFM56-7B27A টার্বোফ্যান ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। প্রতিটি ইঞ্জিন ১২১ কিলোনিউটন শক্তি প্রদান করে। এই বিমানের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৯০৭ কিলোমিটার। সাধারণত এটি ঘণ্টায় ৮১৫ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। এর যুদ্ধের পরিসীমা ২,২২২ কিমি। বিামনটিকে সাবমেরিন বিরোধী যুদ্ধে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি কমব্যাট জোনে চার ঘন্টা উড়তে পারে।
এই বিমানটি সর্বোচ্চ ৮,৩০০ কিলোমিটার উড়তে পারে। এর সর্বোচ্চ ফ্লাইট উচ্চতা সাড়ে বারো কিলোমিটার।, অর্থাৎ প্রায় ৪১ হাজার ফুট। এতে ১১টি হার্ডপয়েন্ট অস্ত্র লাগানো যায়। অভ্যন্তরীণ উপসাগরে ৫টি হার্ডপয়েন্ট এবং ৬টি বাহ্যিক হার্ডপয়েন্ট। তাছাড়াও এতে বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত অস্ত্রও ব্যবহার করা যাবে। যেমন- AGM-84H/K SLAM-ER, AGM-84 Harpoon, Mark 54 টর্পেডো, মাইনস, ডেপথ চার্জ। এছাড়া হাই অল্টিটিউড অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার ওয়েপন সিস্টেম এতে বসানো যাবে।
এতে ব্যবহৃত অস্ত্র হল AGM-84H/K SLAM-ER অ্যাডভান্সড স্ট্যান্ড অফ প্রিসিশন গাইডেড ক্রুজ মিসাইল। এটি স্থল এবং জল উভয় জায়গাতেই আক্রমণ চালিয়ে শত্রুকে ধ্বংস করতে পারে। মার্ক 54 টর্পেডোর মাধ্যমে সাবমেরিন এবং জাহাজে আক্রমণ করা যেতে পারে। এছাড়া এর মাধ্যমে সাগরে ল্যান্ডমাইন বিছানো যাবে। এর পাশাপাশি গভীরে বিস্ফোরণ ঘটাতে বোমাও ছোড়া যায় এটি থেকে।
এই বিমানে CAE কোম্পানির AN/ASQ-508A ম্যাগনেটিক অ্যানোমালি ডিটেক্টর (MAD) বসানো হয়েছে। এছাড়াও Griffon Corporation এর Telephonics APS-143C(V)3 মাল্টিমোড আফটার রাডারও যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, এতে সাধারণত Raytheon APY-10 মাল্টি মিশন সারফেস সার্চ রাডার থাকে। তাছাড়া AN/ALQ-240 ইলেকট্রনিক সাপোর্ট মেজার স্যুট এবং AN/APS-154 অ্যাডভান্সড এয়ারবর্ন সেন্সরও লাগানো আছে এতে।