জোশীমঠ উস্কে দিল ৮ বছর আগের স্মৃতি, PHOTOS-এ আজও দগদগে ২০১৩'র কেদারনাথের ধ্বংসলীলা

 ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডে যে ভয়াবহ তুষার ধসের কারণে হড়পা বান হয়, তা ছিল কেদারনাথ মন্দির সংলগ্ন এলাকায়। 

সেবার  চারধাম যাত্রা চলাকলীন ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়েছিল কেদারনাথ। কাদার ধসে মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের।
 

২০১৩ সালের ১৬ই এবং ১৭ই জুন কেদারখন্ডে ঘটে যাওয়া প্রলয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের স্মৃতি আজও দগদগে স্থানীয়দের মধ্যে।
 

বহু পর্যটক ও তীর্থযাত্রীকে নিয়ে গাড়ি ভেসে যেতে দেখেছিলেন  বলে স্থানীয় মানুষরা সেই সময় দেখেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন।
 

তুমুল বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার তোড়ে ও ভূমিধসে রাস্তাঘাট ও সেতু ভেসে যাওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আটকা পড়েছিলেন।

২০১৩ সালে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পাশাপাশি হিমবাহ লেক ‘চোরাবারি’ গলে লক্ষ লক্ষ লিটার জল আছড়ে পড়েছিল রুদ্রপ্রয়াগ জেলার কেদার ভ্যালিতে ৷ 
 

২০১৩ সালে ভয়াবহ বন্যায় কেদারনাথ অঞ্চলে মোট ৩,০৭৫ জনের মৃত্যু হলেও সব দেহাবশেষ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। 
 

কেদারনাথের দুর্যোগের পরে এ পর্যন্ত মোট ৭০৩ টি দেহ, কঙ্কাল ও দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ধ্যে ২০১৩ সালে উদ্ধার হয় ৫৪৫টি, ২০১৪ সালে ৬৩টি, ২০১৫ সালে ৩টি, ২০১৬ সালে ৬০টি, ২০১৭ সালে ৭টি এবং ২০১৮ সালে ২১টি দেহ, কঙ্কাল ও দেহাবশেষ। ২০২০ সালে আরও  চারটি কঙ্কাল যুক্ত হয়ে মোট সংখ্যা এখন  দাঁড়িয়েছে ৭০৩টি।
 

সেবার বন্যার কবলে পড়েছিল হিন্দুদের অপর দুই প্রধান তীর্থস্থান হৃষীকেশ ও হরিদ্বারও।  পরিস্থতি এতটাই ভয়াল ছিল যে কেদারনাথের আশেপাশে প্রায় ৬০টির মত গ্রামের অবস্থা সম্পর্কে প্রথমে কোনও খোঁজও পাওয়া যাচ্ছিল না।
 

কত পাহাড়ি গ্রাম যে ওই মেঘ ভাঙা বৃষ্টির তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, আজও তার হিসেব মেলেনি।

কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল  তাতে সব সারিয়ে এই দুটি তীর্থক্ষেত্রকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সময় লেগেছিল। তিন বছর বন্ধ রাখতে হয়েছিল  কেদার-বদ্রী যাত্রা। 

প্রবল বৃষ্টি, নদীতে জলস্ফীতি এবং হিমবাহ হ্রদ ভেঙে পড়ায় উত্তরাখণ্ডের হিমালয় এলাকায় নেমেছিল ধস৷ উত্তরাখণ্ড সরকারের সমালোচনা করে সেই সময়  বলা হয়েছিল, এই বিপর্যয় যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মানুষের তৈরি৷ 
 

পরিবেশবিদদের ধারণ ছিল,  উত্তরাখণ্ডে বহমান প্রধান তিনটি নদী মন্দাকিনি, অলকানন্দা এবং ভাগিরথী নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ, পর্বত ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়া, বেআইনিভাবে ব্যাপক অরণ্য নিধন করা, নদীতীরে এবং শুষ্ক নদীবক্ষে বাড়িঘর, হোটেল, গেস্টহাউস গড়ে ওঠা এবং তার ওপর প্রবল বর্ষণ – এসবের অভিঘাতেই নেমে এসেছিল এই ধ্বংসলীলা৷
 

২০১৩য় উত্তরাখন্ডের  এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল বলিউডে কেদারনাথ ছবিটি। যেখানে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত সুশান্ত সিং রাজপুত। তাঁর বিপরীতে ছিলেন নাবগত সারা আলি খান।
 

কেদার নাথের সেই ভয়ানক স্মৃতি ৮ বছর পর ফের ফিরে এল। শীতের সকালে আচমকাই গগনভেদী গর্জন। আর তার পরই হুড়মুড়িয়ে পাহাড়ের কোল চিরে নেমে এল উন্মত্ত জলরাশি। তাতেই মুহূর্তের মধ্যেই ঘরবাড়ি এবং প্রকৃতির মাঝে গজিয়ে ওঠে জনজীবনের যাবতীয় অস্তিত্ব ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল। উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ তুষারধসের জেরে উদ্ভুত হরপা বান আছড়ে পড়ার এমনই ভিডিয়ো সামনে এল, যা ২০১৩-র বন্যার ভয়াবহতা মনে করিয়ে দিচ্ছে সকলকে।  রবিবার হিমবাহ ভেঙে তুষারধস নামে উত্তরাখণ্ডের চমোলি জেলায়। সকালে জোশীমঠের কাছে ওই তুষারধসের জেরে ধউলিগঙ্গার জলস্তর প্রবল ভাবে বেড়ে গিয়েছে। তীব্র জলোচ্ছ্বাসে একের পর এক গ্রাম ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।